শিরোনাম

(১ম খন্ড অনুগল্প) একজন রিক্সাচালকের দুঃস্বপ্ন- ১ম অংশ: মোস্তফা হারুন, সহ. পুলিশ সুপার

 

গফুর আজ প্রায় ১০ বছর যাবৎ ঢাকা শহরে রিক্সা চালায়।সারাদিনে যা আয় করে মালিকের ভাড়া দিইয়া বাইচা যাওয়া অর্থ দিইয়াই বাজার সদাই কইরা দিনাতিপাত করে। ঢাকা শহরের জ্যামের কারনে সে বেশি ট্রিপ মারতে পারেনা।গফুর ভাবে,আহা ঢাকা শহরে যদি জ্যাম না থাকতো তাহলে অনেক ট্রিপ মারতে পারতো এবং সংসার খরচ কইরাও কিছু কিছু টাকা সন্তানের ভবিষ্যতে জন্য জমাইতে পারতো।

যখন ঢাকা শহরে রাস্তা ঘাটে বৃষ্টির পানি জইমা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।সেইদিন গফুরের আয় আরও কইমা যায়।একবার জলাবদ্ধতার ভিতর যাত্রী নিইয়া শান্তিনগর বাজার রাস্তা অতিক্রম করার সময় রিক্সাটি রাস্তা ম্যানহোলের খাদে পইড়া চাকা টাল হইয়া মুচড়ে পড়ে। যাত্রীরা কোন রকমে নাইমা চইলা গেলেও সেদিন চাকা ঠিক করতে ও মালিকের জমার টাকা পরিশোধ করতে গিইয়া স্ত্রী সন্তান সহ মুড়ি ভাজা খাইয়া দিন পার করতে হয়েছিল।

আরেকদিন কাকরাইল যাবার পথে পিছন থাইকা দ্রুতগামী বাস আইসা ধাক্কা দিলে রিক্সার অনেক ক্ষতি হয়।মালিক সেদিন তাকে লাথি মাইরা গালি দিয়েছিল, হারামজাদা দেখেশুনে রিক্সা চালাইতে পারিস না?তোর বাপে কি রিক্সা ঠিক কইরা দিব?গফুরকে গ্যারেজে মালিক দড়ি দিয়া বাইন্ধা রাখে। রিক্সা ঠিক না কইরা দিতে পারলে বাড়িত যাইতে পারবি না। গফুরের কষ্ট দেইখা তার দশ বারজন রিক্সাওয়ালা বন্ধু আইসা ১০০ টাকা কইরা ধার দিইয়া গফুরকে উদ্ধার করে।

গায়ে গতরে খাইটা বন্ধুদের টাকা পরিশোধ করতে গফুরের অনেক সময় লেগেছিলো। তাও সে বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ, বড়লোক রিক্সা মালিক তারে সেদিন এতটুকু দয়াও দেখাইনি, মালিক বড়ই কসাই। আজব ঢাকা শহরে মাঝেমধ্যে সি এন জি চালাইবার ইচ্ছা জাগে গফুরের। তারে কে দিবো সি এন জি। সি এন জি চালকেরা মিটারে না যাইয়া বেশি ভাড়ায় ট্রিপ মারে ওতে ওদের পোশাইয়া যায়। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশরে মাসিক হারে চাদা দিতে হয়।

পুলিশের চাদা ঠিক মতো দিলে সারামাস পুলিশ ঝামেলা করে না। পুলিশের মধ্যে তাও ঈমান আছে, টাকা খাইয়া বেঈমানী করে না।কিন্তু মালিকের ঈমান নাই,গায়ে গতরে খাইটা এতো কামায় কইরা দেয়,তাও কিছু নষ্ট হইলে ক্ষতিপুরন দিতে হয়। রাস্তা ক্রস করার সময় আনসার ব্যাডা বাধা দিলেও ২/৫ টেহা হাতে গুজাইয়া দিইলেই মাফ,বরং রিক্সা ঠেইলা পার করাইয়া দেয়।

গফুর যা আয় করে তাতে সংসার চলেনা। বস্তির একটা ঘড় ভাড়া দিতেই মাসে চইলা যায় ৪ হাজার টাকা।এছাড়াও বাচ্চার পড়াশোনার খবচ চালাইতে হিমশিম খাইয়া যায়। তাই বউ পরের বাড়িতে গিইয়া রান্দোনবান্ধনের কাজ কইরা পোষাইয়া নেয়। খরচ কইরা ভবিষ্যতের জন্য জমাইতেও পারেনা। গফুর একটু আধটু পড়াশোনা জানে,তাই সুযোগ পাইলেই পেপার পড়ে।

কয়েকদিন ধইরা নেত্রী পাপিয়ার খবর পইড়া অবাক হইয়া যায়।তাগো এত্তো টেহা আনন্দ-ফুর্তি করতেও মাসে লক্ষ লক্ষ টেহা দুই হাতে খরচ করে। আহা আমাগো যদি এতো টেহা থাকতো কতইনা বউ বাচ্চা সহ ভালমন্দ খাইতে পারতাম।
আবার বস্তির টিভির খবরে দেহে,নেতা দুই ভাইয়ের বাড়ী হইতে কোটি কোটি টেহা বাইর হইতাছে। ওগো এত্তো টেহা হয় কেমতে। রাজনীতি করলে মনে হয় টাহা গড়াইয়া গড়াইয়া চইলা আহে।

কিয়ের রিক্সা চালাই,যদি নেতা হইতে পারতাম তাইলে তো এত্তো অভাব থাকতোনা। রাজনীতি করলে চাপা বেইচাই টেহা কামাই করা যায়। দেশের উন্নতির কথা কইয়া টেহা মাইরা পুকুর ভইড়া ফ্যালায়। দেশের উন্নতির চাইতে নিজেগো উন্নয়ন লইয়া হেরায় ব্যাস্ত আছে। আমাগো দিকে তাকানোর কোন সুযোগ নাইকো। গফুর ইদানীং উল্টাপাল্টা ভাইবা ভাইবা দিন পার করতাছে।

সারাদিন গায়ে গতরে খাইটা খালি বড়লোক হওয়ার দিবা স্বপ্ন দেইখা পার করতাছে। একদিন রাইতে ঘুমের পর গফুর স্বপ্নে দেখবার পারে হেই নিজেই দ্যাশের প্রধানমন্ত্রী হইয়া গ্যাছে। গফুরের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য টিভিতে ডাক আসে। গফুর টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য টিভি ভবনের ষ্টুটিওতে যায়।

যাওয়ার সময় কত্তো পুলিশের গাড়ী তারে প্রটেকশন দিয়া লইয়া যে গেছে। রাস্তা ক্লিয়ার কোন জ্যাম নাই। পুলিশ রাস্তার গাড়ী আটকাইয়া তারে আগে বাড়াইয়া দিছে। ট্রাফিক পুলিশ স্যালুট দিছে। বড় বড় অফিসার ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করতাছে। এইবার টিভিতে সাক্ষাৎকার শুরু হইলো। গফুর নইড়া চইড়া ক্যামেরার সামনে পোজ দিইয়া বসে।

গায়ে দামী স্যুট-কোট, পারফিউমের গন্ধ ছড়াইয়া গেছে। চামচারা চামচামি করতেই ব্যাস্ত হইয়া পড়ছে। কেউ পানি আগাইয়া দিতাছে,কেউ নাস্তা চা আইনা দিতাছে। আহারে কি সন্মান।গফুরের মনডা আজ বড়ই ফুরফুরে। হাজার হইলেও সে এখন দ্যাশের প্রধানমন্ত্রী। সন্মানই আলাদা। এখন সে দ্যাশের প্রধানমন্ত্রী হইছে দ্যাশকে কিভাবে আগাইয়া লইয়া যাইবো সেই ব্যাপারে টিভিতে তার আংশিক পরিকল্পনার কথা তুইলা ধরবো ইনশাআল্লাহ। শুরু হইলো টিভি ক্যামেরা সামনে তার সাক্ষাৎকার।
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :