সীমানা পিলার এখনকার যুগে আর দেখাই যায় না বলা চলে। বৃটিশ আমলে ভারতবর্ষ বৃটিশদের শাসনের সময় দেশকে বজ্রপাত হতে রক্ষা করার জন্য কিছু দুর দুর ডিসটেন্সে এই ম্যাগনেটিক পিলার মাটির নীচে স্থাপন করা হয়েছিল।এজন্য সেই সময় বজ্রপাত হলেই এই ম্যাগনেটিক পিলার বজ্রপাতের বিদ্যুৎকে সরাসরি টেনে নিত। তাতে করে প্রানহাণীর হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতো। এই সীমানা পিলার প্লাটিনাম ও ইউরিনয়াম সমৃদ্ধ বলেই নাকি এটি মহা মুল্যবান।
এই ইউরনিয়াম থেকেই পরামাণু অস্ত্রের উপাদান সংগ্রহ করা যায় বলে গুজব আছে। বৃটিশরা এই উপমহাদেশ থেকে চলে যাবার পর কতিপয় লোভী লোকজন এই পিলারগুলি গোপনে লাভবান হওয়ার উদ্দ্যেশ্যে উত্তোলন করে বিক্রি করে দিত। এখন এই পিলারের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। তবুও হঠাৎ দু এক জায়গায় এর সন্ধান পাওয়া গেলেও তা রাতের আধারে চুরি হয়ে যায়। শোনা যায় এর মুল্য নাকি এতো বেশি যা কল্পনাও করা যায় না। আজকের প্রবন্ধটি সীমানা প্রাচীরকে কেন্দ্র করেই লিখা।
যাদের সাথে এক পুলিশ অফিসারে পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এই পিলার দেখার সৌভাগ্য সেই পুলিশ অফিসার এমনকি আমারও দেখা হয়নি। এখন কাহিনির মুলে প্রবেশ করছি। এখানে যাদের নাম ব্যাবহার করবো প্রত্যেকটা নামই কাল্পনিক কিন্তু ঘটনা সত্য।
ইন্সপেক্টর সুজন যখন পাবনার ওসি ডিবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল, তখন কিছু লোকের সাথে তার পরিচয় ঘটে। পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রুপ লাভ করে। সেই বন্ধুদের ভিতর অন্যতম হলো নজরুল ইসলাম।
তিনি একজন ঠিকাদার এবং তার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও ছিল। সুজন সময় পেলেই সেই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বসে আড্ডা দিত। সেখানে অন্যান্য ঠিকাদারদেরও আনাগোনা ছিল। বন্ধুত্ব যখন গভীরতায় পৌঁছে তখনই নজরুল সাহেব এই পিলারে ঘটনাটি সুজনের কাছে প্রকাশ করে। তিনি জানিয়েছিলেন তার কাছে একটি পিলারের সন্ধান আছে, তিনি সেটা পাবার জন্য প্রায় ১০ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পিলারের মালিকের পিছনে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় করে ফেলেছেন।
যার কাছে পিলার আছে তিনি নাকি নজরুল সাহেবকে বলেছেন পিলারটি হস্তান্তর করতে চান না। পারলে নজরুল সাহেবকে মিডিয়া হয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেই পিলারের সুত্র ধরেই নজরুল সাহেবের ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। এই ১০/১২ জন মিলেই সমস্ত খরচ বেয়ার করবে এবং লভ্যাংশ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিবেন। তাদের হিসাবে লভ্যাংশ ভাগ করলে একেকজনের ভাগে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা করে চলে আসবে এবং মালের পক্ষের লোকেরা পাবে লক্ষ কোটি টাকা।
এই ধরনের আরও কিছু আলোচিত আইটেম যেমন, পিলার, কটকা প্রাণী, বৃটিশ বটগাছের ছবি সম্মিলিত, রানীর ছবি সম্মিলিত কয়েন ইত্যাদি কেনার জন্য ঢাকায় আমেরিকার বেশ কয়েকজন বায়ার নকি আছে তারাই মুলত এসব কেনাবেচা করে থাকে। টিমের প্রধান হিসেবে নজরুল সাহেব ঢাকায় বায়ারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন এবং এর সমস্ত ব্যয় বহন করে সিন্ডিকেটের লোকজন। সিন্ডিকেটের ভিতর অনেকেই মধ্যম আয়ের মানুষও আছে।
এই সব কাজ করতে অর্থ জোগান দিতে অনেকেই তাদের জমি জিরাত বিক্রি করে দিয়েছে এবং জমি বিক্রির টাকা নজরুল সাহেবের হাতে তুলে দিয়েছে। এসব শুনে নজরুল সাহেবকে সুজন বলেছিল, ভাই এসব লাইনের কথা অনেক আগে আমি বহুবার শুনেছি এবং এসব চক্রের প্রতারণার কাজও শুনেছি। আপনি এসব বিশ্বাস করে এ পথে অর্থ ব্যয় করবেন না।পরে পস্তাতে হবে। নজরুল সাহেব কিছুতেই সুজনের সাথে একমত পোষণ করেননি বরং তিনি সুজনকে বলেছিলেন, আমারা একাজে সফলতা পেলে আপনাকেও আমি কিছু সাহায্য করবো।
যাতে করে আপনার চাকুরী না করা লাগে এবং একত্রে ব্যাবসা বানিজ্য করবো।
সুজন কি আর বলবে,তিনি যখন বিশ্বাস করছেন না, তাই মাথা ঝাকিয়ে সুজন নজরুল সাহেবের কথায় সায় দিয়ে বলে ঠিক আছে দিয়েন। দেখি সেদিন আসে কিনা। একদিন নজরুল সাহেব বললেন, ভাই বায়ারের লোকজন আসবে মালের টেষ্ট ও স্যাম্পল করতে এবং সেই টেষ্ট ও স্যাম্পল সিংগাপুরে ল্যাব টেষ্ট করার জন্য পাঠানো হবে। ল্যাব টেষ্টে মাল ওকে হলে বায়ারের সাথে দাম নিয়ে চুক্তি হবে। কত টাকা তারা দিবে, কিভাবে দিবে,কোন ব্যাংকের মাধ্যমে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে একটি মেমোরেন্ডিয়াম স্বাক্ষর হবে।
সুজন বললো ঠিক আছে এগিয়ে যান দেখি।আমি তো এসব বিশ্বাস করিনা!তবুও দেখি আপনারটা সফল হলে তবেই বিশ্বাস করবো। ল্যাব টেষ্টের জন্য যে কেমিস্ট আসবে সেই কেমিস্টকে আনতে গেলে বায়ারের কাছে পিজি হসাবে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তাই নজরুল সাহেব সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আদায় করে ঢাকায় বায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেন। শোনা গেল এই বিশেষ টেষ্ট ও স্যাম্পল গ্রহণের জন্য কেমিস্টকে একটি বিশেষ পোশাক পড়তে হয়। মুখে মাস্ক, সারা শরীরের রাবারে তৈরি বিশেষ পোশাক, হাতে হ্যান্ড গ্লোবস ইত্যাদি।
অর্থাৎ শরীরের কোন অংশ ফাকা থাকবেনা। যদি ফাকা থাকে তাহলে রিয়েকশন হবে, এমনকি প্রান হারানোর ভয় থাকে।কদাচিৎ প্রান না হারালেই প্যারালাইজড হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে এবং পুরুষত্বহীন হয়ে পড়তে হয়। ভয়ংকর কথা, এতো রিস্ক শুধু টেষ্ট নিতেই।এরপর তো আছে পরিবহন করে ঢাকায় নেয়ার ব্যাবস্থা করা। ঢাকায় নিতেও নাকি সেই স্যাম্পল গুলো বিশেষ ব্যাবস্থায় মোড়ানো লাগবে। তা নাহলে যে গাড়ীতে চড়ে ঢাকায় যাবে সেই গাড়ীর ইঞ্জিনই চালু হবেনা। সুজন জানতে চাইলো কি সেই বিশেষ যে ব্যাবস্থায় স্যাম্পল বাইন্ডিং করতে হবে। তখন নজরুল সাহেব ব্যাখা দিতে থাকলো।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।