নজরুল ভাই, আপনাদের পিলার কি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করার কাজ শেষ হয়েছে? হ্যাঁ, শেষ হয়েছে। মোট ১৮টি আধা চক্রাকৃতির চাকতি বের হয়েছে এবং ৪টি বোতল বের হয়েছে। ওগুলো কিভাবে সংরক্ষণ করেছেন? প্রতিটি অংশ ১০টা কারবন পেপারে মুড়িয়ে গাড়ীর চাকার টিউব কেটে তার দ্বারা ভাল করে পেচিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে গুনগত মান নষ্ট না হয়ে যায়। রেখেছেন কোথায়? মালের মেইন মালিকের হেফাজতে। মালিক কোথায় হেফাজত করছে তা আমাদের বলেনা। কারণ ওর ভিতর তো আবার পুলিশের ভয়ও কাজ করে। টেষ্ট নেয়া হলে রেজাল্ট জানাবো ইনশাআল্লাহ।
— ষ্টেট ওকে হলে,টোকেন মানি দেয় না?
— দেয় সামান্য,ওটা মালিক নিজেই রেখে দেয়। সামান্য বলতে কত টাকা?
–এই ধরেন ২/১ কোটি টাকার মত হবে।
— সম্পুর্ন কাজ শেষ হলে আপনাদের সাথে বিদেশীরা লেনদেন কিভাবে করে বা কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে।
— সিংগাপুর থেকে ওকে রিপোর্ট পাওয়ার পর।বায়ার পক্ষ থেকে লোক আসবে মালিকের বাসায়।মালের যে অংশটি তারা কিনে নিবে সেই অংশটিতে একটি বিশেষ ধরনের জ্যাকেট পড়িয়ে সীলগালা করে দেয়।সেই সীল ওরা ছাড়া আর কেউ খুলতে পারেনা।সেই জ্যাকেটের সাথে ক্যামেরা সেট করা থাকে।
সেই ক্যামেরার সাথে নাসার গবেষকদের কম্পিউটারে সংযোগ করে রাখা হয়।মালটি যেখানেই স্থানান্তরিত করা হউক বা রাখা হউক নাসা সেটা লুক আফটার করতে পারবে অর্থাৎ মাল হারানোর ভয় থাকবেনা।মালিকের কাছ থেকে মাল চুরি গেলেও সেটা নাসার প্রতিনিধি দল দেশে এসে খুজে বের করতে সক্ষম হবে।সেই সাথে চুড়ান্ত চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়।মালের পক্ষের কয়জন থাকবে তাদের ভোটার আইডি,ছবি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে নিবে।মুল দামের কে কত অংশ টাকা পাবে তাও সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে।
— এরপরে?
— এরপর ব্যাংক একাউন্ট খোলার পালা।বাংলাদেশে সাধারণত যেসকল বিদেশী ব্যাংকের শাখা আছে সেই ব্যাংক গুলোর যেকোনো একটি ব্যাংকে ওরাই প্রত্যেকের নামে এফ সি( ফরেন কারেন্সি)একাউন্ট খুলে দিবে।তারপর থেকে ব্যাংকে টাকা দেয়া শুরু হবে।মালের দাম সম্পুর্ন পরিশোধ করার পর বায়ার পক্ষ তাদের বিমান নিয়ে বাংলাদেশে আসবে এবং মাল উঠানোর জন্য হেলিকপ্টার চলে যাবে জেলা শহরে বা গ্রামে।তার মাল বুঝে নিয়ে চলে যাবে।
— বিদেশী বিমান আসবে দেশে এবং হেলিকপ্টার জেলা শহরে বা গ্রামে যাবে এসব প্রক্রিয়া করলে তো সরকার টের পাবে বা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাও তো টের পাবে।তাদের নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করবে? ওহ, আরেকটি কথা বলাই হয়নি। এই সম্পুর্ন প্রক্রিয়ার সাথে এন বি আর,দুদক, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন, ডিজিএফআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন সহ সরকার নিজেই জড়িত থাকে।কারন তাদেরকেও কয়েক হাজার কোটি টাকা দেয়া হয় এবং রীতিমতো সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে টাকা বৈধভাবেই আসবে এবং একাউন্ট গুলিতে ঢুকে যাবে।সুতরাং সরকার পক্ষ থেকে কোন বাধাই আসবেনা। বরং তারা বিদেশী এজেন্টদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করবে,নিরাপত্তা বিধান করবে।এই ভাবেই এই ব্যাবসা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
— তাই নাকি।তাহলে তো আর কোনই সমস্যা থাকার কথা নয়।দেখুন তাহলে ভালোই ভালোই কাজ উঠাতে পারেন কিনা! ইতিমধ্যে সুজনের সিরাজগঞ্জ জেলায় বদলী হয়ে যায়।বদলীর প্রাক্কালে সিন্ডিকেটের সবাই সুজনকে বিদায় জানাতে আসে এবং বলে আপনি দেশের যেখানেই থাকেন না কেন আপনি আমাদের একজন অংশীদার।সুজন বললো,আমি কিভাবে অংশীদার থাকবো? আমি তো চলেই গেলাম।তখন নয়ন বললো,ভাই এই লাইনের একটা নিয়ম আছে,যে বা যারা এই ঘটনার সাথে কোন না কোন ভাবে একবার জড়িত হয়ে যায় সেও অংশীদার হয়ে যায়।আপনি আমাদের সব কিছুই জানেন সুতরাং আপনি আমাদের অংশীদার থাকবেনই।এতে কোন সন্দেহ নেই।
সুজন বললো,তাই নাকি এটা তো জানা ছিলো না!যাক দেখা যাক আপনাদের শেষ কিভাবে হয় সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। সুজন যথারীতি পাবনায় দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় একটি ইউনিটে যোগদান করে।ওরা মোবাইলে সুজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।
প্রায় দুই তিন মাস গত হয়ে গেলো।ওদের কোন প্রগ্রেস নেই।জিজ্ঞাসা করলে জানায় এই তো আগামী মাসেই পেমেন্ট পাওয়া শুরু হয়ে যাবে।সব কাজ শেষ হয়েছে।আগামী মাসে রিং করলে বলে আরও একমাস লাগবে।
এই ভাবে মাসের পর মাস,সপ্তাহের পর সপ্তাহ শেষ হয়ে প্রায় দুবছর পার হয়ে গেলো তাও যেন শেষ হচ্ছেনা।সুজনের হাসি পায় তারা কি মরচিকার পিছনে ছুটছে? এদিকে বারবার আনুষ্ঠানিকতা করতে তাদের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে সবাই দেনাগ্রস্থ।সাংসারিক অবস্থায়ও একেক জনের করুন অবস্থায় পৌছে গেছে।তবুও তারা স্বপ্ন দেখে যায় টাকা পেয়ে গেলেই তো তারা দেশের ভি আই পির অবস্থানে চলে যাবে।তাদের ভিতর যে পরিমান টাকা চাদা উঠতো তা নজরুল ভাইয়ের মাধ্যমেই বায়ারদের পিছনে খরচ হতো।
একসময় তারা সবাই হতাশ হয়ে নজরুল ভাইয়ের উপর টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।নজরুল ভাই নিজেও তার অনেক জায়গা জমি বিক্রি করে প্রায় এই পথে কোটি টাকার মত খরচ করে এখন সে দেউলিয়া।কিভাবে অংশীদারদের টাকা পরিশোধ করবে।একপর্যায়ে অংশীদারগন নজরুল ভাইকে হত্যার হুমকি দিলে তিনি ঢাকায় গিয়ে আত্বগোপনে চলে যান।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।