শিরোনাম

অনুপ্রবন্ধ-৬ সীমানা পিলার: মোস্তফা হারুন (সহ. পুলিশ সুপার)

 

জীবন তার দুই বন্ধু সহ খাগড়াছড়িরতে এক হোটেলে উঠেছিল। দুপুরের দিকে জীবন সুজনকে রিং দিয়ে জানায় ভাই আমাদেরকে থানায় নিয়ে গেছে ওসি সাহেব। আমাদের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করছে। তা নাহলে আমাদেরকে মামলায় চালান করে দিবে। সুজন জীবনের কাছে জানতে চায় আপনারা কি কোন অপরাধ করেছেন? জীবন জানায় আমরা কোন অপরাধ করিনি।

আমরা এখানে একটি লোকের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম,কথা ছিল যে,তারা আমাদের কটকা নামের এক প্রাণী দেখাবে এবং সেটা বিক্রি করে দিতে পারলে আমাদের কমিশন দিবে।আমাদের কাছে একজন ক্রেতা আছে যিনি এমন প্রাণী কিনতে চান। তাই আমরা এখানে এসেছি প্রাণীটি দেখতে আসলে তাদের কাছে এই প্রাণী আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ক্রেতার সাথে তাদের যোগাযোগ করে দিব। সেই লোকটির সাথে দেখাই হয়নি,অথচ থানা থেকে এসে আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে টাকা দাবি করছে।

সব শুনে সুজন খাগড়াছড়ির ওসির সাথে মোবাইলে কথা বলে জানতে চায় তাদের গ্রেফতার করার কারন কি?
ওসি সাহেব জানায় স্যার,ওরা কটকা প্রাণী কেনাবেচার সময় হাতে নাতে ধরা পড়েছে।এই জন্যই গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে আমার এস আই। সুজন জিজ্ঞাসা করলো,সেই প্রাণীকে হেফাজতে নিয়েছেন ও বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছেন কি?
ওসি সাহেব উত্তর দিল,না স্যার তাদেরকে গ্রেফতার করিনি এবং প্রাণীটি পাইনি। সুজন এবার বললো,তাহলে অহেতুক তাদের গ্রেফতার করে টাকা দাবি করছেন কেনো?

এ ছাড়াও আপনার লোক তাদেরকে হোটেল থেকে বিনা স্বাক্ষ্য প্রমানে গ্রেফতার করেছে। আমার জানা মতে তারা কোন কেনাবেচায় অংশ গ্রহন করেনি। আমি তাদের কাছে সব শুনেছি। আপনার এস আই অসৎ উদ্দেশ্যে টাকা কামানোর জন্য এই ফাদ পেতেছে। আপনার এস আই গন কি এই ভাবে লোক সেট করে মানুষকে জিম্মি করে হয়রানি করে টাকা কামাই করে?
এসব দিকে খেয়াল করেন না কেন? বিষয়টি আপনি দেখবেন নাকি আমাকে আপনার পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে কথা বলতে হবে?

তখন ওসি সাহেব বললেন স্যার,আমি দেখছি,ওদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করছি। সুজনের জানা মতে খাগড়াছড়ি এলাকায় কিছু অসৎ পুলিশ অফিসার কটকা প্রাণী কেনাবেচার সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখে ক্রেতাদের প্রতারণার ফাদে ফেলে খাগড়াছড়িরতে নিয়ে আসে এবং গ্রেফতারের নাটক সাজিয়ে জিম্মি করে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। পুলিশ ও প্রতারক চক্রের সদস্যরা এখানে মিলে মিশে এই কাজ করে অর্থ উপার্জন করে এবং পরবর্তীতে টাকা উভয় পক্ষ ভাগাভাগি করে নেয়।

সুতরাং যারা এই লাইনে আছেন তারা সাবধান হয়ে যান,এমন ফাদে যেন না পরতে হয়। পরবর্তীতে ওসি সাহেব জীবনদের ছেড়ে দেয়। আর সুজন জীবনকে এসব পথ থেকে ফিরে আসতে বলে। আরও বলে এসব হচ্ছে একধরনের গুজব, সব প্রতারকদের প্রতারণার খেলা। এমন প্রাণী হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হয় এটাও তাদেরই প্রচারনার একটি ফসল।

যাহোক, আরমানের মাধ্যমে এই জগতের বেশ কয়েকজনের সাথে সুজনের পরিচয় ঘটে। তাদের ভিতর রাজশাহী জেলার ফারুক নামের এক লোক এবং এক অবসরপ্রাপ্ত বি ডি আর সদস্য। বি ডি আর সদস্যের বাড়ী দীঘলীয়া উপজেলায়। ইতিমধ্যে সে ম্যাগনেটিক পিলারের কথা বলে বহুলোকের সাথে প্রতারণা করেছে বলে সুজনের কাছে সংবাদ পৌঁছে।
বিডিআর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য বাগেরহাট জেলায় একটি জায়গায় ম্যাগনেটিক পিলার বিক্রির কথা বলে বেশ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।

সুজন একসময় বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার ওসি ছিল। তাই ওখানকার লোকরা কোন বিপদাপদে পরলে সুজনের কাছে মোবাইল করে পরামর্শ নিত। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিটি সুজনের স্বরনাপন্ন হলে সুজন তাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দেয় এবং মামলার তদন্তকারী অফিসারকে সুজন বিডিআর এর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যকে গ্রেফতার করতে সহযোগিতা করেছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতারকের কাছ থেকে ভুয়া ম্যাগনেটিক পিলারের অংশ বিশেষ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রতারকের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করতেও সক্ষম হয়েছিল।

কিছু কিছু মানুষ বিনা পরিশ্রমে রাতারাতি বড়লোক বিত্তশালী অর্থশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং এমন লোকদেরকেই প্রতারক চক্র টার্গেট করে এগিয়ে যায় ও প্রতারণা করে সটকে পড়ে। ম্যাগনেটিক পিলার, ব্রিটিশ বটগাছ প্রতীকের কয়েন, কটকা প্রাণী, চৌম্বকীয় গাছ ইত্যাদি একটি নিছক কাল্পনিক বিষয়। এসব নিয়ে অতি গোপনে প্রতারণা হয় তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীগনই জানেন। যখন তারা নিঃস্ব হয়ে পথে বসে তখনই কেবল তারা উপলব্ধি করতে পারে যে,সে এতদিন ভুল আলেয়ার পিছনে ছুটে বেড়িয়েছে। এখনও বহুলোক এই পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই এমন লোকদের উদ্দেশ্যেই সুজনের দেখা বাস্তব চিত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে কেবলমাত্র সবাইকেই সাবধান করে দেওয়ার জন্য।
(সমাপ্ত)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :