গত ৭ অক্টোবর বুয়েটের মেধাবি ছাত্র আবরার ফাহাদ কে ছাত্রলীগের নেতারা যে কারণে খুন করেছে সেই মূল কারণটি মিডিয়া আড়াল করতে চাইছে। মিডিয়া প্রচার করছে শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে খুন করেছে যা মূল ঘটনাকে অাড়ালে রেখে দিচ্ছে। আবরার ফাহাদের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ব্যাপকখাবে ভাইরাল হয়েছে। সেই ফেসবুক পোস্টের কারণে অকালে প্রাণ গেল বাংলাদেশে শীর্ষ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের।
সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বলেনি, বলেনি প্রধানমন্ত্রী ও অাওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সে লিখেছে অতি সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ভারতের সাথে করা চুক্তি নিয়ে। তিস্তা চুক্তি অমিমাংশিত থাকলেও ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া, ভারতকে তরল গ্যাস দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভারতের রাডার বসানো নিয়ে যৌক্তিক ফেসবুকে পোস্ট করেছে।
এতে ছাত্রলীগ ক্ষেপে যাওয়ার মানেটা কি? তার সাথে বুয়েটের ক্ষমতার অাধিপত্যের লড়াই ছিল নাকি হল দখলের দন্ধ ছিল? এই দুটির কোনটিই ছিলনা। তাহলে তাকে মেরে ফেলার মূল উদ্দেশ্য কি? সে তো দেশপ্রেম থেকে দেশের স্বার্থেই কথা বলেছে।
বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের হৃদয়ের কথাই সে ফেসবুকে লিখেছিল তাহলে কেন মেরে ফেলা হয়েছে। আমি মনে করছি এখানে’ অদৃশ্য ইন্ধন বা হাত থাকতে পারে। যারা তাকে মেরেছে তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মেরেছে অনিক আর অমিত সাহা। কিন্তু মামলার এজাহারের তাদের নাম নেই। মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে আবরার ফাহাদকে তারা মাতাল অবস্থায় হত্যা করেছে। এটাও খুনিদের বাঁচানোর একটি কূটকৌশল ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
ভারতের বিরুদ্ধে লিখলে এভাবে খুন করতে হয়? তা নিয়ে বিশ্ব ব্যাপি নিন্দার ঝড় উঠেছে।জাতিসংঘ সুষ্টু বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে।এছাড়াও নিন্দা জানিয়েছে জামার্নি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন ছাত্রের জন্য দেশের ৯০% লোক কেঁদেছে তা হলো আবরার ফাহাদ। ছোট থেকে বড় নেতা থেকে অভিনেতা সবাই এর প্রতিবাদ করেছে।ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মানুষে ক্ষেপে গেছে। নিন্দায় ও প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। যারা দলান্ধ আওয়ামী লীগ তারা ছাড়া সচেতন ও বিবেবকবান আওয়ামী লীগরাও প্রতিবাদ করছে। শোকে মুহ্যমান পুরো দেশ।
শুধু আবরারের মা বাবা নয় পুরো দেশ তার জন্য কাঁদছে। গড়ে উঠছে ভারত বিরুধী জনমত।আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত তোষণের বিরুদ্ধে সরব বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক দল। দেশের স্বার্থে বিকিয়ে দিয়ে করা চুক্তির বিরুধিতার কারণে যদি প্রাণ দিতে হয় তাহলে ভবিষ্যত দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব ককটা নড়বড়ে তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই বুঝে গেছে। দেশের মানুষ শুধু আবরার হত্যার বিচার চেয়ে দায়িত্ব শেষ ভাবলে ভুল হবে। বুঝতে হবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব সুরক্ষার দায়িত্বও আমাদের। তাই সময় থাকতে সতর্ক না হলে হয়তো কোন একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র নাও থাকতে পারে।
অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে খুন আর যারা খুনি তাদের নাম এজাহার থেকে বাদ পড়ছে ঐ অদৃশ্য শক্তির ইশারায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষায় ৬০ লক্ষ লোক শহিদ হতে পারে। কারণ স্বাধীনতা অজর্নের চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় দল মত নির্বিশেষে সংগ্রাম করতে হবে। তাই জাতীয় পর্যায়ে সর্বদলীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। বিশ্বজিৎ কে যারা দিন দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছিল তারা বেকসুর খালাস পেয়ে দাপুটের জোরে চলছে। বিশ্বজিৎ হত্যা আর আবরার ফাহাদ হত্যার প্রেক্ষাপট একই নয়। বিশ্বজিৎ হত্যা ছিল ক্ষমতার অাধিপত্য আর আবরার হত্যা হলো ভারতের সাথে করা প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির বিরুধিতা। দুটি হত্যা বিবেক নাড়া দিলেও হত্যার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আবরার হত্যার সাথে দেশপ্রেম আর দেশের স্বার্থ জড়িত আর বিশ্বজিৎ হত্যায় ক্ষমতা ও অাধিপত্য জড়িত। আবরার হত্যা অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে এবং খুনিদের বাঁচাতেও অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় খুন করেছে বলে মিডিয়া প্রচার করছে। খুনিদের বাঁচাতে মামলা ভিন্ন দিকে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে।
খুনিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে দেশবাসীর ক্ষোভের আগুন থেকে বাঁচুন। অন্যথায় জনতার দ্রোহের আগুনে ক্ষমতার মসনদ পুঁড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী যথাযথ পদেক্ষেপ নিবেন।