শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন আম্পান উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘুর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ঘনীভূত হয়েছে। একইসাথে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকেই আম্পানের প্রভাবে খুলনার আকাশে হালকা মেঘ ছিলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আকাশে ঘনকালো মেঘ ঘনীভূত হয়। দুপুরে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁবৃষ্টি। থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। খুলনা জুড়ে হালকা বাতাস হয়ে যাচ্ছে। ঝড়ো হাওয়া না থাকলেও খুলনার অধিকাংশ অঞ্চলে ঘন মেঘ ঘনীভূত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। খুলনায় চলছে একই বিপদ সংকেত।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে খুলনার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। হালকা বাতাসও আছে। গত ২ দিন তাপদাহ থাকলেও আজ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। বিকাল পর্যন্ত খুলনায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশের ঘন মেঘ থেকে ধারণা করা হচ্ছে খুলনায় সন্ধ্যার পরেও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া রাতে বা বুধবার সকালে ঝড়ো হাওয়া ও দমকা বাতাস শুরু হতে পারে।
তিনি আরো জানান, দুপুর পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন আম্পান মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ২২৫ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া বেগে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে খুলনা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগিয়ে আসছে। ঘুর্ণিঝড়টি সিডরের থেকেও শক্তিশালী হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তবে স্থলভাগে অতিক্রমের সময় ঝড়টির গতি কমতেও পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী হবার সম্ভাবনা আছে। একইসাথে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছাসের আশঙ্কা আছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান এর কারণে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। করোনা ঝুঁকির এ সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জন মানুষের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ৩৪৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খুলনার উপকূলীয় এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সতর্কতার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে মাইকিং করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ঝড় শুরু হলে জেলা-উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের সিপিপির ২ হাজার ৪৬০ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার এক হাজার ১০০ স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত আছে। করোনা ও রমজানের কথা মাথায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব রেখে সেহরি ও ইফতার এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া খুলনার ৯ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।