ওলামা ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেছেন, “ভোলায় রাসূল প্রেমিক তাওহিদী জনতার সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ঘটনা তদন্ত না করে প্রধানমন্ত্রী একপেশে বক্তব্য দিয়ে একটি মহল ও ভারতকে খুশি করেছে। ১৭ কোটি জনতা হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। এবং তার বক্তব্যে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার ইঙ্গিত বহন করে।”
তিনি বলেন, “বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার ক্ষত না শুকাতেই ভোলায় নবীপ্রেমিক জনতাকে হত্যা করে সরকার ভারত বিরোধী মুভমেন্টকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। প্রশাসন কটুক্তিকারীদের বিচারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে উল্টো আন্দোলনকারীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ জনগণের টাকায় কেনা বুলেট জনগণের বুকে বিদ্ধ করেছে। এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে এবং জবাব দিতে হবে। তিনি ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সারাদেশের মসজিদগুলোতে শহীদদের স্মরণে দোয়া এবং জেলা জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।”
আজ সোমবার বিকেলে ভোলার বোরহান উদ্দীনে তৌহিদী জনতার মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে বহুলোক হতাহতের প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, যুবনেতা কে এম আতিকুর রহমান, ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল করীম মারূফ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা এইচএম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান প্রণয়ন করে ধর্মানুভুতিতে আঘাতকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তিনি রাসূল সা. কে কটূক্তিকারীদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার, শহীদ পরিবারসমূহকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরা এবং গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
তিনি বলেন, “পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ কে দিয়েছে, পুলিশ গুলি করতে পারে না। জনতার টাকা দিয়ে কেনা প্রতিটি গুলির হিসাব দিতে হবে। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং তিস্তার সমাধান না করা পর্যন্ত ফেনী নদীর পানি ভারতে যাবে না।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে সুনাম আছে। কিন্তু সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ইসকনসহ কিছু উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এ দেশে দাঙ্গা হাঙ্গামা লাগাতে চায়। ইসকনের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে আলেম-ওলামাদেরকে হয়রানী করা হয়। কিন্তু হিজবুত তাওহিদ নামক জঙ্গি সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ করছে না।”
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা মর্মাহত হয়েছে। তিনি ভারতের স্বার্থে কথা বলেছেন, দেশের স্বার্থে নয়।”
তিনি বলেন, “ভারতের আসামের মুসলমানদের পুশইন করার চক্রান্ত করলে তা প্রতিহত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য একটি বিশেষ মহলকে দায়মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করবে। মন্দিরে আক্রমন করে যারা দায়ভার মুসলমানদের ওপর চাপাতে চায় তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। তার বক্তব্যে দেশবাসি চরম হতাশ। তিনি মুসলমানদের পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। ভোলার ঘটনা কেন ঘটলো? ছাত্র ও যুবলীগ মানুষ হত্যা করে, পুলিশও মানুষ হত্যা করে, মানুষের নিরাপত্তা কে দেবে? ভোলার হত্যাকান্ডের দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকারের জনগণের প্রতি কোন মায়া নেই বলেই মানুষ হত্যা করছে।”
তিনি বলেন, “বার বার কারা উস্কানী দিচ্ছে, এদেরকে কেন ধরা হচ্ছে না বরং উল্টো আল্লাহপ্রেমিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।”
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, “ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় সংঘটিত ঘটনা সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করবে। নবীপ্রেমিক জনতার রক্ত ঝরিয়ে সরকার ইসলামকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাসউদ বলেন, “নবীপ্রেমিক জনতাকে শহীদ করে সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের পক্ষাবলম্বন করেছে। আল্লাহ ও রাসূল সা.কে নিয়ে কটুক্তিকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান পাশ করতে হবে।”
পরে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের গতি রোধ করে, এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নেৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয় এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর মুনাজাতের মাধ্যমে মিছিল সমাপ্তি হয়।