শিরোনাম

ইসলামপন্থীদের মাঝে ফজলে হাসান আবেদের মতো সংগঠক গড়ে না উঠলে এদেশে ইসলামপন্থার কোন ভবিষ্যৎ নাই : শেখ ফজলুল করীম মারুফ

ব্র্যাকের বিপুল কার্যক্রমের কিয়দাংশ নিচে দেয়া হলো। এই কাজগুলোর মধ্যে কোন কোনটা ইসলাম বিরোধী সেটা ফেসবুক মুফতিদের বের করা উচিৎ।

হ্যা! এই কাজগুলো ফজলে হাসান আবেদ যে পন্থায় করেছেন সেটা ইসলাম-সম্মত না। ফলে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ইসলাম বিরুদ্ধ হয়ে গেছে।

এখান থেকেই আমার আফসোসের জায়গাটা তৈরী হয়েছে।

আমাদের ইসলামপন্থীদের মাঝে কি এমন কেউই ছিলোনা যে বা যারা এমন একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারতো?

সত্যি হলো, এমন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় নাই বা ইসলামপন্থীরা গড়ে তুলতে পারে নাই।

যার ফলে ফতোয়া নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সমাবেশের চেয়েও বেশী মানুষকে ফতোয়া নিষিদ্ধ করার পক্ষে এডাব ও ব্রাক জড়ো করতে পেরেছিলো।

ইসলামপন্থীরা সুদ হারাম বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্রাকের মোকাবিলায় পাল্টা প্রতিষ্ঠান দাড় করাতে পারেনি।

ব্রাক যখন গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের পাশে টাকা ও সাহায্য নিয়ে গিয়েছে তখন ইসলামপন্থীরা রফাদাইনের মাসয়ালা হাতরিয়েছে।

আর আজকে যখন ফজলে হাসান আবেদ মারা গিয়েছে তখন এই ইসলামপন্থীরা খুশি যে, একজন সুদখোর জাহান্নামে গেছে।

এই রকম অকর্মণ্য মনকলা খাওয়া কথিত ইসলামপন্থীরাই বাংলাদেশে ইসলামপন্থার সবচেয়ে বড় শত্রু।

আবারো বলি, ইসলামপন্থীদের মাঝে ফজলে হাসান আবেদের মতো সংগঠক গড়ে না উঠলে এদেশে ইসলামপন্থার কোন ভবিষ্যৎ নাই।

ব্র্যাক ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য, সমবায়, গ্রামীণ কারুশিল্প, বয়স্কদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, নারীর জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে গ্রামের উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সামাজিক উন্যয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছিল।

এছাড়া ১৯৭৭ সালে ভূমিহীন, গরিব কৃষক, কারিগরি ও দুর্বল নারীদের সহায়তা করার জন্য গ্রাম সংগঠন (ভিও) তৈরি করা হয়েছিল। একই বছর আবার ব্র্যাক তার কার্যক্রমের অর্থায়নের জন্য একটি বাণিজ্যিক অর্থভাণ্ডার স্থাপন করেছিল। যা পরবর্তী বছর আড়ং নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু একটি প্রধান কারণ ছিল ডায়রিয়া। ১৯৭৯ইং সালের ফেব্রুয়ারিতে শাল্লা উপজেলার ০২ (দুই) গ্রামে ব্র্যাক ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রচারণার শুরু করে। প্রচারণাতে গ্রামীণ মায়েদেরকে তাদের ঘরে থাকা উপাদান থেকে কিভাবে ডায়রিয়া নিরাময়ের ঔষদ (ওআরএস) তৈরি করা যায় এবং ডায়রিয়া হলে কিভাবে ঔষধ সেবন করতে হয় তা শেখানো হয়েছিল।

এই প্রচার করা হয়েছিল পোস্টার, রেডিও ও টিভির মাধ্যমে। প্রায় দশ বছরের এই কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল (বেসামরিক অস্থিরতার কারণে কাজ করতে অনিরাপদ ছিল) ব্যতীত বাংলাদেশের প্রতিটি অংশে ৭৫,০০০ গ্রামে এই কর্মসূচি পরিচালিত হয়। ফলে বর্তমানে মায়েদের বেশিরভাগই এখন নিরাপদ ও কার্যকর ওআরএস তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে ওটিইপি শুরু হওয়ার সময় এই চিকিৎসাটি খুব কমই পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৫ বছর পরে গ্রামাঞ্চলে এটি ৮০% চেয়ে বেশি ক্ষেত্রে গুরুতর ডায়রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ হারের মধ্যকার একটি।

ব্র্যাক ১৯৮৫ইং সালে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষাদান শুরু করে, যা এখনও বিদ্যমান।

১৯৮৬ইং সালে ব্র্যাক তার গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচী শুরু করে যা চারটি প্রধান কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে। সেগুলো হলো প্রাতিষ্ঠানিক ভবনে গঠনমূলক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ঋণ কার্যক্রম আয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

১৯৯১ইং সালে তারা নারী স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করে। পরের বছর ব্র্যাক রাজেন্দ্রপুরে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেন্টার (সিডিএম) প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৯৬ইং সালে ব্র্যাকে সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার ও আইনী সেবা কার্যক্রম চালু করে।

১৯৯৮ইং সালে ব্র্যাকের দুগ্ধ এবং খাদ্য প্রকল্প শুরু করে। এরপর ব্র্যাক একটি তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট চালু করে।

২০০১ইং সালে ব্র্যাক একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যার নাম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ

ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করে ১৯৭৪ সালে। এটি ব্র্যাকের পুরানো একটি কার্যক্রম যা বাংলাদেশের সকল জেলায় রয়েছে। এটি বেশিরভাগ দরিদ্র, ভূমিহীন, গ্রামীণ নারীদেরকে মুক্ত ঋণ সরবরাহ করে তাদের আয় করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহযোগিতা করে। ব্র্যাকের মাইক্রোক্রেডিট প্রকল্প প্রথম ৪০ বছরে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে নারী হলো ৯৫% এবং পরিশোধের হার ৯৮%।

১৯৮৮ সালে ব্র্যাক সারা দেশে কমিউনিটি কমিউনিকেশন প্রকল্প শুরু করে। ১৯৭৮ সালে খুচরা বিপনণ আড়ং প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রান্তিক পর্যায়ের জিনিস পত্র বাজারজাত করে। আড়ং প্রায় ৬৫,০০০ (পঁয়ষট্টি হাজার) কারিগরকে সেবাপ্রদান করে ও সোনার ও রূপার গয়না, চামড়া, কারুশিল্প ইত্যাদি বিক্রি করে।

শিক্ষাঃ

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত বৃহত্তম এনজিওগুলির মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক। ২০১২ সালের শেষের দিকের তালিকা অনুযায়ী ব্র্যাকের প্রায় ২২,৭০০টি আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৬৭,০০,০০০ শিশু পড়ালেখা করে।

এই বিদ্যালয়গুলি দেশের সব এনজিও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির তিন চতুর্থাংশ। ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি বিশেষ করে দরিদ্র, গ্রামীণ, ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের, এবং শিক্ষা হতে বাইরে থাকা ব্যক্তিদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়। সাধারণত এক কক্ষে একজন শিক্ষক এবং ৩৩জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি শ্রেণী গঠিত হয়।

পাঠদানে মূল বিষয়গুলির মধ্যে গণিত, সামাজিক গবেষণা এবং বাংলা। সহশিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে তারা খাদ্য প্রদান করে থাকে। পড়ালেখার কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে তারা শিক্ষার্থীদেরকে আংশিক বৃৃত্তি প্রদান করে থাকে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে মহিলা উপস্থিতি কম হওয়ায় তারা তাদের স্কুলগুলোতে নারী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে থাকে। যার ফলে ৬০% নারী তাদের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে।

জনস্বাস্থ্যঃ

এক ব্র্যাক কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী, বাংলাদেশের করাইল বস্তিতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন।

ব্র্যাক ১৯৭৭ সালে প্যারামেডিকেলের মাধ্যমে চিকিৎসাগত প্রাথমিক সেবা এবং একটি স্ব-অর্থায়ন স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সেবা প্রদান শুরু করে। ব্র্যাকের উত্তর-পশ্চিম মাইক্রোফিনান্স এক্সপোশন প্রজেক্টের ২০০৭ এর প্রভাবের মূল্যায়নে দেয়া যায় ব্র্যাক প্রকল্পগুলিতে নারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিবাহ ও তালাকসহ আইনি বিষয়গুলি নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে।

এছাড়াও নারী অংশগ্রহণকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো হয়েছিল এবং ফলে তখন গৃহের ঘটনাগুলি ক্রমেক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। ২০০২ সালের আগে নারীদের প্রতি একটি সহিংসতার দিক ছিল অ্যাসিড নিক্ষেপ। যা প্রতিরোধের জন্য ব্র্যাক ২০০২ সালে অ্যাসিড নিক্ষেপ প্রতিরোধের আইন প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যারফলে বছরে অ্যাসিড নিক্ষেপ ১৫-২০% হ্রাস পায়।

ত্রাণঃ

ব্র্যাক ২০০৭ সালের নভেম্বর এর মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের এলাকাগুলিতে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত হানার সময় ত্রান বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ব্র্যাক ৯,০০,০০০ লোকের জন্য খাদ্য ও পোশাকসহ জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে এবং ৬০,০০০ এরও বেশি লোককে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। ব্র্যাক এখন দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের উপর মনোযোগ দিয়েছে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কৃষি সহায়তা, অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং জীবিকা উপার্জন।

নিউজটি শেয়ার করুন :