ওলামা কণ্ঠ ডেস্ক: গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ করোনা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনা সৃষ্টিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্ব কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।সারা দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু।
গ্রাম পর্যায়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকারিভাবে কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ছয়দিন পরে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের সময়টায় বিধিনিষেধ শিথিল, না কঠোর, না জরুরি অবস্থা জারি করা হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। পবিত্র ঈদুল আজহা হাট-বাজারগুলোতে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। এতে করে সংক্রমণ আরো ব্যাপক হারে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
এদিকে লকডাউন না থাকলে ঈদের সরকারি তিন দিনের ছুটি বাড়বে কি না, ছুটি থাকলে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে কি না- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীদের মাঝে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এ কমিটির জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনা সৃষ্টি, চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান, ভ্যাকসিন প্রদানে উদ্ধুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২০ বা ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের তারিখ নির্ধারণে আজ রোববার জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি সভায় বসবে। তবে ঈদ ২১ জুলাই ধরে সরকারি ছুটি ২০-২২ জুলাই মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দিন ধরা হয়েছে।
এই হিসেবে সরকারি ছুটি থাকবে পাঁচ দিন। আর সেই ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে। সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ১৪ দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে এনে ঈদের সময়টায় সবকিছু শিথিল করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যাতে ব্যবসায়ী, গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্যান্য পেশার মানুষ আনন্দে উৎসব করতে পারেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর। গত ঈদে মানুষ যেভাবে বাড়িতে গেছে তার প্রভাব আমরা দেখেছি। তাই এবারের ঈদটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা চিন্তার বিষয়।
গতকাল সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, কঠোর পদক্ষেপ দিয়ে ১৪ দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে এনে ঈদের সময়টায় সবকিছু শিথিল করার পরিকল্পনা সরকারের। যাতে ব্যবসায়ী, গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্যান্য পেশার মানুষ আনন্দে উৎসব করতে পারেন। আগামী ১৪ জুলাই শেষ হচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধ মেনে কিছু শর্ত শিথিল করে যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়ে অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন চালু, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এই অবস্থা এক সপ্তাহ বা ১০ দিন অব্যাহত রেখে হয়তো আবারও কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হতে পারে।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ঈদুল ফিতরের সময় ৩০ রোজা ধরে সরকারি ছুটি ছিল তিন দিন। যদি অন্যান্য বার ২৯ রোজা ধরেই ওই ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে চার দিন ছুটি পড়ে। আর ঈদুল ফিতরে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এ বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা বাড়ানো হলো। গত কয়েকদিন ধরেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। সবশেষ ৪ জুলাই ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি। করোনা সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গতকাল সকাল ৬টা থেকে আগামীকাল (৭ জুলাই) মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনে আগের শর্তগুলো অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানানো হয়।
বিধিনিষেধের শর্তগুলো হচ্ছে, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে পরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকান বন্ধ থাকবে।
সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। ব্যাংকিংসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ সার, বীজ, কটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সরকারি-বেসরকারি, গণমাধ্যম প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দর, বিমান, সমুদ্র, রেল ও স্থল এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি।
কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টিকা কার্ড দর্শন সাপেক্ষে টিকা দেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি অনলাইন, টেকওয়ে করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধারণ করবেন। সে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।