মুফতী রেজাউল করীম চরমোনাই হাটহাজারীর আল্লামা আহমাদ শফির নেতৃত্বকে মেনে সকল আলেম একই প্লাটফর্মে আসতে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমরা আওয়ামীলীগ ও বিএনপির লেজুড়বৃত্তি করবো না, সবাই শপথ নিন। এমন আহ্বান শেষ হতে না হতেই তো জোটভুক্ত আলেম নেতারা কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন তা জাতি দেখতেছে।
ঐক্যবিলাসী যারা আছেন তাদের জন্য আমার এ লেখা
একজন ফেসবুকারের একটি স্ট্যাটাসটি পড়লাম। তিনি ট্রলের জন্য কুখ্যাত বা বিখ্যাত এ অঙ্গনে। ইসলামী আন্দোলন, আমীর, নায়েবে আমীর ও সমর্থকরা তার কাছে নস্যি। যা খুশি তা বলে সর্বদা গালাগাল করার অভ্যাস তার। তার গীবতচর্চা থেকে ‘চরমোনাই’ ও ‘হাতপাখা’ও বাদ যায় না!
গতকাল মুহতারাম নায়েবে আমীর হুজুর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশপূর্ব বক্তৃতায় একটি দামী কথা বলেছেন। যা এখন বাণী হিসেবে বিভিন্ন জনে পোস্ট দিচ্ছে।
“আজকে আমরা সকলেই যদি মরার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই, তাহলে আমরা কেউই মরবো না। আর যদি বাঁচার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, তাহলে আমরা কেউই বাঁচবো না”।নায়েবে আমীর হুজুরের এ উদ্বৃতি খানা উল্লেখ করার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন-“এ কথাটা যেমন সত্য তেমনি দিবালোকের ন্যায় এটাও চির সত্য ঐক্য এবং চর এদুটি বিপরীতমুখী শব্দ।”
বলুন তো! তার এমন মতামত কতটা বাস্তব! তথাকথিত ঐক্য প্রয়াসীরা বিলাসী কথাবার্তা বলেন মাঝে মধ্যে, অবশ্য তাদের সাথে ইসলামী আন্দোলন গা ভাসিয়ে দেয় না এটা বাস্তব সত্য।
আগের ইতিহাস ধরে টান দিতে চাইনা। তবুও দুটো ঘটনা উল্লেখ করছি। মরহুম পীর সাহেব হুজুর (রঃ) গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় বসে ইসলামী রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আলেমদের মাঝে ঐক্য আনয়নের স্বার্থে নিজ নিজ দলকে বিলুপ্ত করে একই প্লাটফর্মে আসতে হবে। আর সেজন্যই আমি এ মূহুর্তে আমি আমার দলকে বিলুপ্ত করার ঘোষনা করলাম। আপনারাও আপনাদের দল বিলুপ্ত করে একই প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ান।
বলুন তো, কোনো ইসলামী দল ও নেতৃত্ব আজ পর্যন্ত এমন ডাকের জবাবে সাড়া দিয়েছেন? দেননি। অর্থাৎ ঐক্য ঐক্য একটা খেলার নাম। অর্থাৎ আপনারাও আমাদের সাথে আসুন তাহলেই ঐক্য হয়া যাবে। আপনারা কেন আমাদের জোটে আসেন না? হ্যাঁ জোটটি যদি নিরেট ইসলামিস্টদের হতো, তাহলে তা বিবেচনা করা যেতো।
ঠিক একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছিলেন বর্তমান পীর সাহেব মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সাহেব। হাটহাজারীতে তিনি নিজে আল্লামা আহমাদ শফির নেতৃত্ব মেনে সকল আলেমকে একই প্লাটফর্মে আসতে ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লেজুড়বৃত্তি করবো না। সবাই শপথ নিন……. এমন আহ্বান শেষ হতে না হতেই তো জোটভুক্ত আলেম নেতারা কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন তা জাতি দেখতেছে। ঐ ঘটনার প্রামাণ্য ভিডিও ক্লিপে এখনো আছে।
এই সব ঐক্য ঐক্য খেলুড়েরা চান তাদের জোটে কেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয় না! ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আসলে তাদের মগজ নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিকে একই নিক্তিতে মাপে। কখনো এ দিকে, কখনো ওদিকে গিয়ে রাজনীতি করার ব্যাপারটিকে তারা ঘৃণা করেন। আলেম সমাজের দ্বারা এমন রাজনীতি করা মানায় না। এটা দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। আইএবি ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতি করে। ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যই যদি হতো, তাহলে তারা এতদিনে এমপি মন্ত্রী হয়ে যেতেন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী পরিস্কারভাবে একটি কথার উপর আমরা আমল করছি, “আলেমদের উচিত না এদিক সেদিক করা।” ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোন জোটভুক্ত না হয়ে আজ এককভাবে আলেম সমাজ ও সাধারণ্যে সমীহ জাগানিয়া দল। আর অন্যান্য ইসলামী দলের অগ্রগতি ও বিস্তৃতের ব্যাপারে কেউ আমাকে একটু তথ্য দিবেন কি? একটু তুলনামুলক বিশ্লেষণ করতাম।
বর্ণিত ফেসবুকার একটি দলের কেউকেটা ও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তথা চরমোনাই কে ‘চর’ বলে সম্বোধন করে ঐক্যটক্যের ফজীলত বয়ান করেন। মানসিকতা যাদের এই টাইপের, তারা আসলে কিসের ঐক্যের চান? ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বাদে দেশে ইসলামী দল আছে ডজনে ডজনে। আপনাদের ভাষ্যমতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঐক্যবিরোধী বহুত খারাপ একটি দল। আপনারা ভালা। আপনারা সকল ভালারা মিইল্লা একটা ঐক্য করেন না কেন? পারলে সেটা আগে করে দেখান। সে হেডম কি আছে আপনাদের? কেমনে থাকবে? নিজেদের দলই তো ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন এক হালি। মাদ্রাসার ছাত্রদের তোশকের উপরে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে জাতিরে উদ্ধার করতে কত কথাই না বলেন! চরমোনাইর পিন্ডি না চটকালে আপনাদের আর চলেই না। এদিকে আসলে নিজ ঘরের দিকে খেয়াল নাই। নিজে ঘরের জেনানার চেয়ে প্রতিবেশী সুন্দরী ভাবীর দিকে মনোযোগ থাকে অনেকের।
ইসলামী আন্দোলন তখনি তাদের সাথে ঐক্য করবে, যখন দেখবে এ দেশের ইসলামী রাজনীতি সঠিক ট্রাকের উপরে চলছে। সকল ইসলামিস্টরা যখন একই সমান্তরালে চলবে তখন অটোমেটিক আইএবিকে পাশে পাবেন।
ইসলামী মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে যারা সরকার থেকে খোরমা খেজুর খায় ও নানা সুবিধা পায়, অথবা বিরোধী জোটের রাজনীতি করে একমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে। উভয় গ্রুপকে এড়িয়ে চলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। উভয় গ্রুপই বদমাইশ। হ্যাঁ ঐসব মাওলানারা “সুবিধাভোগী” ও “হারামখোর”। আর হারামখোর মোলভীদের জন্য আজ দেশে ইসলাম কায়েম হয়না।
এমন উক্তিটা যিনি করেছিলেন তাঁর উত্তরসুরীরাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে পরিচালনা করছেন। নীতি ও আদর্শের ব্যাপারে আপোষহীন এ কাফেলাকে তারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন তারা কেমনে সহসা এক কাতারে বসবেন? বলেন দেকি!
হ্যাঁ নিজেদের নীতি ও আদর্শ ইনোভেশন করে আসুন, অতঃপর বসাবসি হোক। ঐক্য প্রতিষ্ঠা যত দ্রুত হবে, ততো ফায়দা হবে ইসলাম, দেশ ও নিজেদের।