এস. এ আতিক, কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদর সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার (১,২,৩ নং ওয়ার্ড) খালেদা আক্তার ও তার স্বামী ফরিদুল আলম চরম ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদের দুর্নীতির কারণে পরিষদের অন্য ওয়ার্ডের সদস্যরাসহ পুরো ইউনিয়নবাসী চরম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিষয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে অনেকদিন ধরে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল।
তাই উক্ত অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোধিত কিনা এবিষয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে এ প্রতিবেদক। সরেজমিন অত্র এলাকার স্থানীয় ও প্রতারিত হওয়া মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলে উক্ত মহিলা মেম্বার দম্পতি দুর্নীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার খালেদা আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি সরকারের নানা উন্নয়নমুলক প্রকল্প যেমন টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিবি, এলজিএসপি, সরকারি ঘর, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, গর্ভবর্তীভাতা, ভিজিএফ কার্ড, ভিজিডি কার্ড, বিচার সালিশ, জেলে ভাতা, ১০ টাকার চালের কার্ড বিতরণসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের খাতওয়ারি ও প্রত্যেক সেবা গ্রহিতার নিকট থেকে “পেতে চাসতো দিতে থাকিস, যে অবস্থায় যেমনে পারিছ “এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঘুষ দুর্নীতি করে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ফলে এ মহিলার লাগামহীন ঘুষদুর্নীতির কারণে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে পরিষদের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। আর সরকারের দুর্নাম তো আছেই। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিবি, এলজিএসপি, পরিষদের ১% এর বরাদ্ধ পাওয়া প্রকল্প, কর্মসৃজন কর্মসুচীসহ বিভিন্ন খাতে একাধিক প্রকল্পে নাম মাত্র কাজ করে সরকারি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে একটি সূত্র জানান।
এ নিয়ে উক্ত মহিলা মেম্বারের সাথে চেয়ারম্যান ও অন্য ওয়ার্ড মেম্বারদের দ্বন্দ্ব চরমে। এমনকি একাধিকবার লাঞ্ছিত ঘটনাও বাদ পড়েনি। এছাড়াও এ মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে একাধিক অসহায় গরীব দুস্থ মানুষকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির লোভ দেখিয়ে যেমন ভিজিডি কার্ড, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, সরকারি ঘর দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২/৩ বছর ধরে তাদেরকে কোন প্রকল্পে অন্তরভুক্ত না করে দৌঁড়ের উপর রেখেছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। টাকা ওয়ালাদের সাথে সমঝোতা করে মোটা অংকে ভাতার কার্ড করে দিচ্ছে এবং এতে বাদ পড়ছে প্রতিবন্ধি বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রাকৃত হকদারেরা। অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
গোপন সুত্রে জানা যায় ছনখোলা গ্রামের নয়াপাড়া, মাদলিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়ার একাধিক মানুষ যারা কিনা সরকারি ভাতা প্রাপ্তির সার্কোলারে উল্লেখিত কোন ক্যাটাগরিতে পড়েনা। বিত্তশালী পরিবার। যাদের পরিবারে ২/৩ জন প্রবাসী সদস্য রয়েছে। এমন স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একাধিক মানুষকে কার্ড করে দেওয়ারও গুরুতর অভিযোগও উঠে উক্ত মহিলা মেম্বার ও তার স্বামী ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে। (বিশেষ কারণে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য পত্রিকা অফিসে সংরক্ষিত আছে)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক পরিষদের এক সদস্য জানান, মহিলা মেম্বার খালেদাকে এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মামলার হুমকি দেয়। তাদের ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত করলে সব কিছুর প্রমাণ মিলবে।
এ ব্যাপারে মেম্বার খালেদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দম্ভস্বরে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তাই কিছু লোকজন বিশেষ করে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আমার সাথে ষড়যন্ত্র করতেছে। আমি গত তিন বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সাথে মহিলা মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের মধ্য অনেকে মনে করেন প্রকৃত সেবা জনসাধারণ কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য সরকার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে। উদ্দেশ্য সরকারের গৃহিত সকল উন্নয়ন যথাযথ পালন করে চেয়ারম্যান মেম্বারগণ সাধারণ জনগনের মাঝে সকল উন্নয়ন পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করবেন। তাতে সরকারের বহুমূখী উন্নয়ন জনগণের দোরগোড়ায় খুব সহজে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এ পর্যন্ত তা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে খতিয়ে দেখা দরকার।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে অবসর প্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি অতিদুঃখের এবং হতাশার বটে। কেননা জনগণ স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদে সেবা পাওয়ার কথা। এর পরিবর্তে চেয়ারম্যান মেম্বারগণ যদি ঘুষ দুনীর্তিতে জড়িত হয় তাহলে জনগণ যাবে কোথায়? অথচ ইউনিয়ন পরিষদকে সরকারের পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল নাগরিকের আশ্রয়স্থল বিবেচিত করা হয়। বিধায় সেখানে পরিছন্নতার প্রয়োজন আছে।”
এ ব্যাপারে সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত একাধিক নেতা জানান, “তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অনিয়ম ও গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।”
মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত অনেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার বর্তমানে নিজ নিজ এলাকায় হয়ে উঠেছেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তৃণমূলের এসব জনপ্রতিনিধি খুন, অস্ত্র ও মাদক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক জনপ্রতিনিধি গ্রাম্য সালিসের নামে নিজ নিজ এলাকায় কায়েম করেছেন ঘুষের রাজত্ব। উল্লেখ্য নানান দুর্নীতি, বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম, অবৈধ পন্থায় বিত্তবৈভব অর্জন, মাদক বাণিজ্য, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থের নিরীহ মনুষকে মিথ্যা মামলা হয়রানী, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঘুষ-বাণিজ্যে, গ্রামীণ অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট নির্মাণের টাকা ভাগ বাটোয়ারা, কাবিখা, টাবিখা, টিআর, বিভিন্ন কর্মসূচির নামে লুটপাট স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের এখন প্রধান কাজ।
যে কোনো মূল্যে যে পদই হোক একবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারলেই অবৈধ বিত্তসম্পদের মালিক হচ্ছেন তারা। রীতিমতো এই মহৎ পেশা এখন লোভের দাসে পরিনত হয়েছে। এমন সংবাদ উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মাষ্টার আব্দুর রহিম জানান, “এ মেম্বার ঘুষ নিলে গোপনে নিচ্ছে। আমাকে এ নিয়ে কেউ নালিশ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”