ওসমান গণি, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অত্যন্ত দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন লক্ষ্মীপুরের বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারের কাছে এমপিও সুবিধা না পাওয়া এ শিক্ষকরা আগে প্রাইভেট-টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ বিক্রি করছেন রাস্তার কাছে ফলমূল। সংসার চালাতে আবার কেউ বাধ্য হয়ে দিনমজুরি করছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষার স্তরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনেক শিক্ষকও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় অত্যন্ত সংকটে জীবন পার করছেন। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলতে পারছেন না। এদিকে, সরকার নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রণোদনা বিতরণ করলেও তালিকার বাইরেই রয়ে গেছেন বৃহৎ একটি অংশ।
সূত্রমতে, সারা দেশে তিন শতাধিক এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে প্রায় ৫ হাজার নন এমপিও শিক্ষক রয়েছেন। দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবল কাঠামো না থাকায় এসব কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অত্যন্ত অ-মানবিক জীবন-যাপন করছেন।
রায়পুর শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজান দেওয়ান বলেন, জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও অসহায় জীবন-যাপন করছেন। সরকারের কাছ থেকে জাতীয়করণের কোনো আদেশ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন।শিক্ষকদের অনেককে অনাহার-অর্ধাহারে ঘরে থাকতে হচ্ছে। করোনার সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাঁচতে অনেকে দিনমজুরি করছেন।
তিনি আরো বলেন, ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেজি স্কুল) জাতীয়করণের বাইরে রয়েছে। করোনার এ সময়ে এসব স্কুলের প্রায় ৫০০ জন বেশি শিক্ষক কোনো প্রণোদনা পায়নি। তিনি সরকারের কাছে প্রণোদনা ও স্কুল দ্রুত জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী বর্তমানে করোনাকালে অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। সরকারের কাছে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
উপজেলার প্রায় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল করোনাভাইরাসের সময়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় করোনাকালে ভাড়া দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রায়পুর আদর্শ শিশু নিকেতন- আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ -হায়দরগন্জ মডেল স্কুল, বন্ধন একাডেমী, রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, শিশু কানন, আল আমিন একাডেমী ও পীর ফজলুল হক একাডেমী ও তাহযিবুল উম্মাহ ইনিষ্টিটিউট কিন্ডারগার্টেন অন্যতম।
এ ছাড়াও বন্ধের পথে রয়েছে-১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও সংকটে রয়েছেন এই করোনার সময়ে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষক কোনো বেতন পান না। অল্প কিছু শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা পান সরকারের কাছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রাইভেট টিউটররাও। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।