শিরোনাম

কালের কন্ঠে মুফতি ফয়জুল করীম’র সাক্ষাৎকারটি হুবহুব তুলে ধরা হল

বিশেষ সাক্ষাৎকারে শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম। ধর্ম মানুষকে সভ্য হতে শেখায়

ওলামা কন্ঠ ডেস্ক: বিশ্বপরিস্থিতিতে বিশ্বে ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। ইসলাম এবং মুসলমান বিশ্বের কোথাও এখন নিরাপদ নয়।

অমুসলিমদের কাছে তো নয়ই, এমনকি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলমানরা মুসলমানদের কাছেও নিরাপদ নয়।
কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির  শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বরিশাল ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম

কালের কণ্ঠ : আপনার রাজনৈতিক জীবন কিভাবে শুরু হলো?

ফয়জুল করীম : ছাত্র অবস্থা থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯১ সাল থেকে আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। আমি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করি। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়তে যাওয়ার আগে আমি সর্বশেষ ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম।

কালের কণ্ঠ : ইসলামী আন্দোলনের মতো একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল পদে কিভাবে এলেন?

ফয়জুল করীম : আমি হঠাৎ করেই কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের সূত্র ধরে ইসলামী আন্দোলনের মতো একটি সংগঠনের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পাইনি। হাফেজ্জী হুজুর রহমতুল্লাহি আলাইহির নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি দীর্ঘদিন তৃণমূলে কাজ করেছি।

বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে যোগদানের পর প্রথম আমি আমার এলাকায় কাজ করেছি। এক পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পেয়েছি। পাশাপাশি আমি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার দল কোন অবস্থায় রয়েছে?

ফয়জুল করীম : বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিগত দিনে যারা দেশ শাসন করেছিল, তাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা বারবার জনগণের সঙ্গে ওয়াদা খেলাফ করেছে এবং প্রতারণা করেছে। তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে শোষণ করেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। সর্বত্র দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছে। সীমাহীন দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি করেছে। দেশে প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার রাজনীতি চালু করেছে। মানুষ এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষ পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিদিন দলে দলে ইসলামী আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জনগণের জন্য একটি আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা তৈরি করেতে পেরেছে।

কালের কণ্ঠ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার দল ২৯৯টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল। আপনি নিজেও দুটি আসনে নির্বাচন করেছেন। এই পরাজয়ের কারণ কী?

ফয়জুল করীম : শুধু দেশের মানুষ নয়, বরং গোটা বিশ্ববাসী জানে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশে কী ঘটেছিল। ক্ষমতাসীনরা পুলিশ প্রশাসন এবং দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট সম্পন্ন করে ফেলেছিল। নির্বাচনের দিন দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা সেদিন নির্বাচনের নামে দেশের মানুষের সঙ্গে মসকরা করেছিল। এমন প্রহসন ও প্রতারণার নির্বাচন আমরা সেদিনই প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। শুধু আমরা নই, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী ছাড়া সব রাজনৈতিক দলই সেই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব এমন একটি পাতানো নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ইসলামী আন্দোলনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।

কালের কণ্ঠ : সৌদি আরবে আটক, পরবর্তী সময়ে মুক্তির ব্যাপারে কিছু বলবেন?

ফয়জুল করীম : ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে সাংগঠনিক প্রগ্রামের অংশ হিসেবে সৌদি গিয়েছিলাম। সেই সফরে আমি ওমান ও আরব আমিরাত প্রগ্রাম করে স্থলপথে সৌদি প্রবেশ করেছিলাম। সৌদি প্রবেশ করে আমি প্রথম সৌদির গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক শহর দাম্মামে একটি প্রগ্রাম করেছিলাম। দাম্মামে অবস্থানকালে দাম্মামের আমির আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। দাম্মামের পর দ্বিতীয় প্রগ্রাম ছিল সৌদির রাজধানী রিয়াদে। রিয়াদের প্রগ্রামও যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমার বয়ানের আগে সৌদি আরবের একজন বড় শায়েখও বয়ান করেছিলেন। আমি বয়ান করা অবস্থায় সৌদি আরবের গোয়েন্দা পুলিশ পুরো প্রগ্রামস্থল ঘিরে ফেলে। তারা আমাকে এবং প্রগ্রামের আয়োজক আমাদের কয়েকজন সহকর্মীকে তাদের গাড়িতে করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমি বুঝতে পারি, আমার ব্যাপারে সৌদি প্রশাসনের কাছে তথ্য দেওয়া হয়েছে যে আমি ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে জড়িত। পরবর্তী সময়ে তারা আমার সঙ্গে বারবার কথা বলে। আমার ব্যাপারে ব্যাপক তথ্য তালাশ করে তাদের ভুল বুঝতে পারে। আপনারা জানেন, সেই সূত্র ধরেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চরমোনাই মাহফিলে সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এসেছিল। সে বছরই সৌদি সরকার আমাকে সৌদির রাজকীয় মেহমান হিসেবে দাওয়াত করেছিল।

কালের কণ্ঠ : এই সময়ে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ কী?

ফয়জুল করীম : আমার দৃষ্টিতে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে বিশ্বে ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। ইসলাম এবং মুসলমান বিশ্বের কোথাও এখন নিরাপদ নয়। অমুসলিমদের কাছে তো নয়ই, এমনকি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলমানরা মুসলমানদের কাছেও নিরাপদ নয়। মুসলমানরাও ইসলামচর্চায় অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগিতায় এক মুসলিম দেশ আরেক মুসলিম দেশের ওপর আক্রমণ করে। ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে হত্যা করে।

আমার মনে হয়, মুসলমানরা যদি মুসলমানদের জন্য নিরাপদ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্বে আবারও আমরা একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : বর্তমানে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে কিভাবে দেখছেন?

ফয়জুল করীম : বর্তমান সরকার তো ক্ষমতায়ই বসেছে দুর্নীতির মাধ্যমে। অতএব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্তরিকতার প্রশ্ন হাস্যকর।

কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার দলের মূল্যায়ন কী?

ফয়জুল করীম : দেশ শাসনের অর্থ যদি হয় বিরোধী দল ও মতকে দাবিয়ে রাখা, তাহলে আওয়ামী লীগ শতভাগ সফল। আর দেশ শাসনের অর্থ যদি হয় জনগণের কল্যাণ করা, তাহলে এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চরমভাবে ব্যর্থ। আমরা যদি কখনো বিজয়ী হই, তাহলে আমরা শুধু দলীয়ভাবে সরকার পরিচালনা করব না, বরং দেশ পরিচালনায় দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করব। একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে জনগণের কল্যাণে সবাই মিলেমিশে কাজ করব। আমাদের সরকারকাঠামোতে দেশের শতভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

কালের কণ্ঠ : দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যায়ন কী?

ফয়জুল করীম : বাস্তব অবস্থা হলো, দেশের মানুষ চরমভাবে হতাশ। তারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। সরকার যতই উন্নয়নের কথা বলুক না কেন, রাষ্ট্রের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষই শুধু সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। রাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষই কোনো না কোনোভাবে বঞ্চিত এবং পাশাপাশি নির্যাতিত। মানুষ মনে করছে, তারা তাদের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে। পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখছে না বলে মানুষ ভাবছে, সামনের দিনগুলো আরো খারাপ হবে। এর বড় কারণ হলো, নীতি-নৈতিকতাহীন ও চরিত্রহীনরা সমাজ ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষ এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন চায়।

কালের কণ্ঠ : আপনাদের সম্ভাবনাময়ী একটি রাজনৈতিক দল হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাচ্ছেন না কেন?

ফয়জুল করীম : যেনতেনভাবে ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের কমিটমেন্ট রক্ষা এবং মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা যাবে না। এ জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো দুর্নীতিবাজের সহযোগী হয়ে শুধু নির্বাচনে নয়, ক্ষমতার অংশীদার হতে চায় না। বাস্তবতা হলো, যেসব রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সহযোগী হয়েছে, দিন দিন তাদের কর্মী-সমর্থক এবং জনপ্রিয়তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানিতে প্রতিদিনই আমাদের কর্মী-সমর্থক এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : কেউ কেউ বলে থাকে, আপনারা আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন, আসলে কী?

ফয়জুল করীম : একটি মহল ইসলামী আন্দোলনের অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না। কারণ আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর জন্যই আমরা সরকারের সমালোচনা করি।

কালের কণ্ঠ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে কি এককভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব?

ফয়জুল করীম : আমরা এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করি। আর এর জন্য আমাদের শক্তি-সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রয়োজন আল্লাহ পাকের সাহায্য। আল্লাহ পাকের সাহায্য পেলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

কালের কণ্ঠ : দেশে এক ডজনেরও বেশি ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে। তারাও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, আপনারাও ক্ষমতায় দেখতে চান। তাহলে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য গড়তে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?

ফয়জুল করীম : সত্যিকার অর্থেই যারা ইসলাম চায়, সময়ের ব্যবধানে আজ হোক কাল হোক, তাদের মধ্যে ঐক্য হয়ে যাবে। আর আপনারা লক্ষ করছেন, ইসলামী সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলেও ইসলামী জনতা কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন, কার মত কী, তা মানুষ বুঝতে পারে। ঐক্যের ব্যাপারে আমাদেরও পরিকল্পনা আছে। তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আমরা সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছি।

কালের কণ্ঠ : আপনাদের দলকে মানুষের সমস্যার ইস্যুতে তেমন সরব না দেখার কারণ কী?

ফয়জুল করীম : মানুষের সমস্যার ইস্যুতে আমরা সরব নই—এমন অভিযোগ সঠিক নয়। বরং মানুষের সমস্যা নিয়ে দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলের চেয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অধিক সরব এবং সক্রিয়। মানুষের সমস্যা নিয়ে সবার আগে আমরা কথা বলি। বুয়েটের ছাত্র আবরার, ভোলার ইস্যু নিয়ে আমরাই মাঠে নেমেছি। সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় সবার আগে ইসলামী আন্দোলন ঝাঁপিয়ে পড়ে।

কালের কণ্ঠ : ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দল বলে আপনাদের বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা জনমনে রয়েছে।

ফয়জুল করীম : সম্প্রতি এমন একটি প্রচারণা আমরা লক্ষ করছি। এটি সঠিক নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধে জড়ানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা মোটেও ভারতবিরোধী নই। আমরা শুধু ভারত সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত ও অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করি। আমরা সব সময়ই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই এবং তাদের কাছে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করি।

কালের কণ্ঠ : উইঘুর মুসলমানদের বিষয়ে আপনার দলের অবস্থান কী?

ফয়জুল করীম : আমরা বিশ্বের সব নির্যাতিত মজলুম মানুষের পক্ষে। শুধু ধর্মীয় কারণে উইঘুর মুসলমানদের ওপর চরমভাবে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের অধিকারের কথা বলছি।

কালের কণ্ঠ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় সংগঠনকে নিষিদ্ধের কথা বলা হচ্ছে—আপনি কি তাদের সঙ্গে একমত?

ফয়জুল করীম : ধর্ম মানুষকে সভ্য হতে শেখায়। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভ্যতার বিস্তার ঘটাতে চায় না তারাই ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা ভাবতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো উগ্রপন্থী এবং সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধর্মীয় সংগঠন কোনোকালেই কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি। কারো রাজনীতি নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার ডাকসুর নেই। মূলত দেশে ইসলামী শক্তিকে দাবিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমনা শিক্ষার্থীরা এই স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত মানবে না।

কালের কণ্ঠ : রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আপনার দলের অবস্থা কী?

ফয়জুল করীম : আমরাও চাই রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যাক। কিন্তু সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে, সেই চুক্তি তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়ক নয়। সেই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব লাভের, তাদের জমিজমা-সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার এবং তাদের নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি নেই। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

কালের কণ্ঠ : স্বাধীনতার ৪৮ বছরে বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চেয়েছিলেন? কেমন দেখছেন?

ফয়জুল করীম : যে মৌলিক ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতাসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল; মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সাম্য—স্বাধীনতাকামী মানুষ এসবের প্রতিফলন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও এর কোনোটারই বাস্তবায়ন ঘটেনি। অমানবিকতা আরো প্রকট হয়েছে, কোথাও ন্যায়বিচার নেই। আর অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমরা এখন বিশ্বসেরা। অতএব স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে জনগণকে আবারও সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ফয়জুল করীম : আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

নিউজটি শেয়ার করুন :