শিরোনাম

কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষের উপর প্যালট গুলি বর্ষণ

রাশেদুল ইসলাম: মাত্র চার বছর বয়সী, যে কিনা অন্যান্য শিশুদের মত খেলা করার কথা, আজ সে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। শ্রীনগরের হাসপাতালের আট-নম্বর ওয়ার্ডে। একই ওয়ার্ডে তাঁর ৮ বছর বয়সী ভাইও প্যালেট গুলির আঘাতে কষ্টে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। তারা জানে না, তাদের কি অপরাধ। শুক্রবার বিকেল বেলা তারা বাবার সাথে স্কুটারে করে বেড় হয়েছিল, যখন ভারতীয় বাহিনী নির্মমভাবে প্যালেট গুলি বর্ষণ করে। তাও তাদের সৌভাগ্য চোখটি হারাতে হয় নাই। (১) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরিয়া, ফিলিস্তিনে তাদের ভাই-বোনেরা আরও খারাপ অবস্থায় আছে। অবস্থাদৃষ্টেতে মনে হচ্ছে, সাধারণ মুসলিম জনগণের উপর শক্তিশালী জাতিগুস্টি এবং তাদের দালালরা সারা বিশ্ব জুরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, যেন মুসলিমদের তারা নির্বংশ করেই ছাড়বে।

ছবি যেখানে কথা বলেঃ কাশ্মীরের পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন যাবত উত্তপ্ত। সেখানে আন্দোলনরত মানুষের উপর ভারতীয় বাহিনী নির্মমভাবে প্যালেট গুলি বর্ষণ করেছে। এতে শিশু নারী সহ বহু সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছে। এই পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর হামলায় প্রায় ৭৩৪ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। তাছাড়া, ভারতীয় বাহিনীর হামলার লক্ষণ দেখলে মনে হয় যেন তারা কাশ্মীর বাসীকে অন্ধ করে ফকির বানিয়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।

প্যালট গুলি কি? উওরঃ প্যালট হচ্ছে এক ধরনের গুলি যা শিশা দিয়ে ভর্তি থাকে। এ ধরনের গুলি করা হলে, সাধারণত শিশা টুকরো বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে। সাধারণত সোজা হয়ে গুলি গুলি যাবে এমন নয়, বরং চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরে। এটি পেশী, চামড়া ইত্যাদিতে গেঁথে যায়, বিশেষ করে চোখের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশী। বিভিন্ন ধরনের প্যালট গুলি আছে, এর মধ্যে কিছু গোলাকার, এবং কিছু অন্যরকম। এই বছরের জুলাই পর্যন্ত পাওয়া খবরে প্রায় ১১৭ টি ঘটনার মধ্যে ১০৭ টি অপারেশন করা হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৫ জন সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছেন। [২] অন্ধত্ব অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু থেকেও ভয়ংকর।

কাশ্মীর সমস্যা শুরু: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় কাশ্মীরের রাজা ছিলেন হিন্দু কিন্তু অধিকাংশ জনগণ ছিল মুসলিম। তাই কাশ্মীর ভারত যাবে কি পাকিস্তানে যাবে এ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। অন্যদিকে হায়দ্রাবাদ এবং গুজরাটের জু-নাগাদের রাজা ছিলেন মুসলিম কিন্তু অধিকাংশ জনগণ ছিলেন হিন্দু। এই সময় কাশ্মীর এবং হায়দ্রাবাদ স্বাধীন থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ভারত প্রবর্তিতে জু-নাগাদ এবং হায়দ্রাবাদ উভয়ই দখল করে নেয় এবং সিকিমও দখল করে নেয়। অন্যদিকে কাশ্মীরের রাজা মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালান যেন জম্মু অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়[৩]। একদল ব্রিটিশ পর্যবেক্ষকদের মতে এই সময় প্রায় ৭০ হাজার মুসলিম নিহত হয়, কিন্তু আজাদ কাশ্মীর সরকারের মতে প্রায় ২০০ হাজার বা ২ লক্ষ মানুষ নিহত হয় (৪)।

তৎকালীন সময়ের কাশ্মীরের জন্য সংখ্যা হিসাবে নিলে এটা ভয়ংকর ভয়াবহ। আরও ৪০০ হাজার মানুষ পাকিস্তানের দিকে পালিয়ে যায়, এবং পাকিস্তানের পাশতুন গোষ্ঠীর (পাশতুনরা বহু যুগ ধরে গোত্র ভিত্তিক অনেকটা স্বাধীন জীবন চালিয়ে গেছে, তারা বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মূল জনগণ) সহায়তায় কাশ্মীরের একটা অঞ্চল মুক্ত করতে পারে, যা আজাদ কাশ্মীর নামে পরিচিত।

এরপরের ইতিহাস, কাশ্মীরের দুঃখের ইতিহাস। বিগত ৬৮-৬৯ বছরে কি পরিমাণ কাশ্মীরিদের রক্ত ঝরেছে এর ইয়থ নেই। জওহর লাল নেহরু নাকি কাশ্মীরে গণভোট দিবেন বলে আশা দিয়েছিলেন। সেই আশা আর বাস্তবায়ন হয় নাই। অন্যদিকে ভারত, সিকিম, জু-নাগাদ এবং হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি অঞ্চল দখল করে নিতে সক্ষম হয়। ফিলিস্তিনের মত হাজারো ফিলিস্তিন পৃথিবীতে ছড়িয়ে, কাশ্মীর হচ্ছে এর একটা।

নিউজটি শেয়ার করুন :