শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধিঃ
খুলনা নগরীর আটরা-গিলাতলা ইস্টার্ণ গেট এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ৭ জন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। অন্যদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হত্যাকারী সন্দেহে মশিয়ালী গ্রামে মরহুম হাচান আলী শেখের পুত্র জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিল। অপরদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ১২টা ৩৫ মিনিট) পুরো মশিয়ালী গ্রাম জুড়ে থমথম পরিবেশ বিরাজ করছিল। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাকারিয়াকে থানা আ’লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত দু’জন হলেন আটরা-গিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মৃত মোঃ বারিক শেখের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই এলাকার মোঃ ইউনুচ আলীর ছেলে গোলাম রসুল (৩০)। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ মো: সাইদুল শেখের ছেলে মো: সাইফুল ইসলাম (২৭) কে রাতে খুমেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তাছাড়া গুলিবিদ্ধরা হলেন খানজাহান আলী থানা গ্রামের মৃত শফিউল্লাহ শেখের ছেলে আফসার শেখ (৬৫), রজব আলী শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ (২৬), নজরুল শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (৩৫), মৃত আলকাস শেখের ছেলে রানা শেখ (২২), আফসার শেখের ছেলে রবি শেখ (৪০), আকরাম শেখের ছেলে শামীম শেখ (২৫) ও মোঃ সাইদুল শেখের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৭)। নিহত ও আহতরা সকলেই একই বংশের সদস্য। এদিকে গুলিবিদ্ধদেরকে প্রথমে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে গুলিসহ মলিয়ালী গ্রামের এক ব্যক্তিকে আটক করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ। এ গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পর সরকারি দলের এক নেতার সাথে এলাকার কয়েকজনের বাকবিতন্ডা হয়। পরবর্তীতে আটককে কেন্দ্র এবং পূর্বের ক্ষোভে গ্রামবাসী গতকাল রাত সোয়া ৮টার দিকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা জাফরিন, তার ভাই আ’লীগ নেতা জাকারিয়া এবং মিল্টনের মশিয়ালীর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় জাফরিন গ্রুপের সাথে গ্রামবাসীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বেধে যায় এবং এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিপক্ষের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে ঘটনাস্থলে নজরুল ইসলাম ও গোলাম রসুল নামের দু’জন গ্রামবাসি নিহত হন। এ সময়ে গুলিবিদ্ধ হন মোঃ সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন। ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে গুলি রেখে মজিবার শেখ নামের একজনকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হাতে ধরে দেয় প্রতিপক্ষরা। ওই ঘটনার জের ধরে সোয়া ৮টার দিকে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিপক্ষ ওই এলাকার মৃত হাসান প্রফেসরের ছেলে জাফর শেখ, জাকারিয়া শেখ ও মিল্টন শেখের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৮ জন, পরে এদের মধ্যে একজন হাসপাতালে মারা যান।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যেয়ে একাধিক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম। দু’জন নিহতের ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে পাঠানো ও গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে একাধিক টীম।
এদিকে ঘটনাস্থলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন মশিয়ালী আলিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে খানজাহান আলী থানা আ’লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া সভাপতি পদে পরাজিত হন। এ ঘটনার জেরধরে স্থানীয়দের সাথে তার বিরোধের সূত্রপাত হয়। ঘটনাস্থলে তিনি ও তার ছোট ভাই জাফরীন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নিহত নজরুল ইসলামের আত্মীয় মোঃ তাসাদ্বর আলী বলেন, সভাপতি নির্বাচনে হেরে গিয়ে আমার খালু (নজরুল) ও এলাকার কয়েকজনকে জীবনে শেষ করে দেবার হুমকি দিয়েছিলেন। সেটাই পূরণ করলো ঘাতকরা।
ঘটনাস্থল পরির্দশনকারী কেএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেন বলেন, দু’জন নিহতসহ অন্তত ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে অভিযান চলছে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও মশিয়ালী গ্রামের ফকিরপাড়া মিটুল নামে এক যুবকের সাথে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে জাফরিন ও তার ভাই জাকারিয়ার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জাফরিন ও জাকারিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। জাফরিন ও জাকারিয়া বাহিনীর ভয়ে অনেকেই এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানান গ্রামবাসী।
হামলার ঘটনায় নাম উঠে আসা জাকারিয়া খান জাহান আলী থানা আ’লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক এবং জাফরিন মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।