মোঃ আব্দুল্লাহ হক চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা,পরিশ্রম অনুযায়ী পাটের দাম কমের কারনে বিঘাপতি ৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষিদের।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার চুয়াডাঙ্গায় পাটের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। উঁচু জায়গায় পাট ভালো হলেও অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় ফলন ভালো হয়নি। আবার যেখানে পাটের ফলন ভালো হয়েছে, সেখানে পানির অভাবে জাগ দিতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। এসব কারণে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গায় অন্তত লক্ষাধিক কৃষক পাট চাষের সাথে জড়িত। চলতি বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২৫ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমি। যার ভেতরে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৪ হাজার ৪৯৮ হেক্টর, দামুরহুদা ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর, জিবননগরে ৭ হাজার ১৩০ হেক্টর এবং আলমডাংগা উপজেলায় ৮ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উঁচু জমিতে পাটের ফলন ভালো হলেও নিচু জমিতে ভালো হয়নি। মৌসুম শেষ হতে চললেও ছোটই রয়ে গেছে অনেক জমির পাট। ইতিমধ্যে পাট কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিণত পাটগুলো কেটে ইতিমধ্যে জাগ দিতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অনেক জায়গায় ছোট ছোট পাটগাছ ক্ষেতেই রয়ে গেছে। যেসব জমির পাট কাটার উপযোগীই হয়নি সেসব জমির কৃষক লোকসানের আশঙ্কা করছেন। আগামী ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন পাট রাখা যাবে ক্ষেতে। তারপরই শুরু হবে আমন মৌসুম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার মোমিনপুর, পদ্মবিল, সরোজগঙ্জ, ডিঙ্গেদাহ, আলোকদিয়া, বেগমপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পাটচাষিরা ক্ষেত থেকে পাট কেটে তা পাশের ডোবা, পুকুর বা মরানদীতে জাগ দিচ্ছেন। কয়েকটি গ্রামে আবার দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলে একত্রে পাটের আঁশ ছাটাই করছেন। ছাটাই করা আঁশ চাষিরা তুলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।
আলমডাংগা উপজেলার জাহাপুর গ্রামের কৃষক সিরাজ মুন্সী বলেন, এ বছর ফলন ভালো হয়নি। অসময়ে অতি বৃষ্টির কারণে পাটের চারা গাছ বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। পাটের ফলনের আগে সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকার কিস্তি তুলেছি। এখন যে ফলন হয়েছে, তা দেখে লাভ নিয়ে হতাশায় মধ্যে পড়েছি।
নাগদাহ ইউনিয়নের পূর্বপাড়ার গ্রামের চাষি সত্তার আকন বলেন, আমার ৬ শতাংশ জমিতে আগাম পাটের আবাদ করেছিলাম। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে অর্ধেক বীজই গজায়নি। এরপর চারা কিছুটা বড় হওয়ার পর অতি বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গোড়া পচে গেছে। এবার পাট চাষ করতে গিয়ে লাভের বদলে ক্ষতি হয়ে গেছে।
দামুরহুদা উপজেলার কুরুলগাছি ইউনিয়নের পাটচাষি মামুন বেপারী বলেন, আমাদের অঞ্চল পাট ও আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এবার পাটচাষিদের মাথায় হাত। রোদ ও বৃষ্টির ভারসাম্য ছিল না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলী আহসান বলেন, নিচু জমিতে পাটের ভালো ফলন না হলেও উঁচু জমিতে তুলনামূলক ভালো ফলন হয়েছে। তবে হতাশার কোন কারণ আপতত নেই। এ বছর পাটচাষে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম, তা পূরণ না হলেও প্রায় কাছাকাছি থাকবে। আমরা আশা করছি, প্রান্তিক চাষিরা এবারো পাটের দাম ভালো পাবে।