আ স ম আবু তালেব, ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
দীর্ঘ চারমাস পরে বসতে যাচ্ছিল পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার)। সকল ধরনের প্রস্তুতি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পরও বসানো সম্ভব হলো না পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যানটি। শনিবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত থেকে সুপার স্ট্রাকচারটি প্রস্তুতি নেয়। পরে দুপুরে মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নাম্বার পিলার (খুঁটি) দিকে রওনা হয়। কন্সট্রাশন ইয়ার্ড সাথে পিলারের দূরত্ব কম হওয়া সীমিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যায় স্প্যানটি। কিন্তু দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্তও চেষ্টা করে বসাতে পারেনি স্প্যানটি। তবে আজ (রোববার) স্প্যানটি বসবে বলে জানিয়েছেন সেতু প্রকৌশলীরা।
৩১ তম স্প্যান বসানোর ৪ মাস পর শনিবার বসানো কথা থাকলেও স্রোতের কারণে কারণে রোববার বসানো হবে ৩২তম স্প্যানটি। এতে পদ্মার মূল সেতুর ৪ হাজার ৮০০ মিটার দৃশ্যমান হবে। আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে ৫টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য থাকলেও মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচন্ড স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় ১০ অক্টোবর পর্যন্ত একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে স্রোতেরতীব্র স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গতি ফিরেছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানোর দিনক্ষন নির্ধারণ করা হয়েছিলো। শুক্রবার শেষ মুর্হুতের কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে প্রকল্পের প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। শনিবার অনেক চেষ্টা করেও বসানো সম্ভব হয়নি স্প্যনটি। আজ (রোববার) ৩২তম স্প্যান বসানোর পর মূল সেতুর অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য দাঁড়ালো ৪ হাজার ৮০০ মিটার বা প্রায় ৫ কিলোমিটার।
উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ২টি ডাঙায়। ডাঙায় থাকা দু’টি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ৬টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট বা ঝুলন্ত পথ ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার।
বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্টাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন। নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলবে।