শিরোনাম

বোবা কান্নায় কাঁদছে প্রবাসীরা: প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মালয়েশিয়া

 

মালয়েশিয়াতে ১০ লক্ষের অধিক বাংলাদেশী প্রবাসী বসবাস করে তাদের প্রত্যেকটি পরিবার তার উপর নির্ভরশীল এ হিসেবে ৫০ লক্ষ লোক ১০ লক্ষ প্রবাসীর উপর নির্ভরশীল কিন্তু গত ১৮ ই মার্চ থেকে তারা লক ডাউন পরিস্থিতির কারনে বাসায় অবস্থান করছে, কাজ নেই অর্থ উপার্জন করার রাস্তা বন্ধ যারা বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে কাজ করছেন বিশেষ করে ফেক্টরী গুলোতে তাদের মধ্যে ২৫% কোম্পানি সম্পূর্ন বেতন দিয়েছেন আর বাকী ৫০% অর্ধেক পরিমান দিয়েছেন আবার অনেকে নামমাত্র বেতন দিয়েছেন কিন্তু এপ্রিল মাসের বেতনের বিষয়ে সবাই এখনো অন্ধকারে কি হবে কেও জানেনা।

মালয়েশিয়াতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কনস্ট্রাকশন সেক্টরের এবং অবৈধ শ্রমিকেরা কারন ওনারা হাজিরা ভিত্তিক কাজ করে যেহেতু এখন লক ডাউন সবার কাজ নেই মানে হাজিরাও নেই বেতন ও নেই এ সেক্টরের শ্রমিক সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে দুঃখ জনক বিষয় হল এখন এই সেক্টরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মালিক বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা এজেন্টরা শ্রমিকদের ফোন ই রিসিভ করছেনা এদের দুঃখ দেখার কেও নেই কস্ট শুনার ও কেউ নেই একদিকে রুমের ভাড়া অন্য দিকে খাবার খরচ সবচেয়ে বড় বিষয় হল তার পরিবার তার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল এখন এমন একটি অবস্হা নিজেই খেতে পারছেনা রুম ভাড়া দিতে পারছেনা পরিবারকে কি দিবে!এ দিকে পরিবার কস্টে বুকে পাথর চাপা দিয়ে দিন যাপন করছে এমন একটি পরিস্হিতিতে বাংলাদেশী প্রবাসীরা যাবে কোথায়, সবচেয়ে লাজুক পরিস্থিতিতে আছে অবৈধ শ্রমিকরা সেই সংখ্যাও অনেক, তাদের না আছে কর্ম না আছে কোম্পানি না আছে মালিক এরপর সরকারী ভাষ্যমতে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সরকারী আবেদন আরো আতংকিত করছে তাদের, তারা না পারছে কাজ করতে না পারছে পরিবার চালাতে না পারছে নিজে খেয়ে বেচে থাকতে এ যেন কঠিন অগ্নি পরিক্ষার বাস্তব মুখোমুখি অবৈধ শ্রমিকরা,এ দিকে বাংলাদেশ হাইকমিশন একটি অনলাইন খাদ্য চাহিদা ফরম বিতরন করেছে প্রবাসীদের অনেকেই সেটি পূরন করে জমা দিয়েছে কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ এখন পর্যন্ত তারা কোন খাদ্য সামগ্রী পায়নি বিষয়টি হতাশা জনক, তবে বাংলাদেশী কমিউনিটির কিছু ব্যাবসায়ী এবং সংগঠন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কিছু খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেছে তবে সেই সংখ্যা সীমিত পর্যায়ে কিন্তু কত সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক অভুক্ত আছে সেই বাস্তব চিত্র বের করা খুব কঠিন, এখন পর্যন্ত সরকার কোন সহযোগিতা দেয়নি হাইকমিশনের কাছে একটি চাহিদা পত্র চেয়েছিল সরকার সেটা কতটুকু হয়েছে এ বিষয়েও বাংলাদেশীরা অন্ধকারে,আসলে প্রবাসীরা এমন দুঃখী মানুষ পরিবার পরিজন ছেড়ে দেশ ছেড়ে প্রবাসে রক্ত ঘাম ঝড়িয়ে উপার্জন করে এরপরে যখন জানতে পারে দেশের কোন এক মুদি দোকানে, মার্কেটের সামনে, চায়ের দোকানের সামনে লেখা প্রবাসী প্রবেশ নিষেধ তখন তাদের হৃদয়ের রক্ত ক্ষরন কেউ বুঝেনা তাদের হৃদয়ের আর্তনাদ কেউ উপলব্ধি করে না ক্ষত বিক্ষত সহজ সরল মনের অবস্থাটান নিরবে নিভৃতে কাঁদে , আসলে দেশ যদি তাদের কর্মসংস্থান করতে পারতো তারা হয়ত দেশ ছেড়ে প্রবাসে আসতো না প্রবাসে আসার কারনেই দেশে রেমিট্যান্স যাচ্ছে সেটা দিয়ে দেশ উন্নতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে অথচ আজ সাড়া বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ প্রবাসীদের জন্য ৭৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটে কোন ধরনের প্রণোদনা নেই তখন প্রবাসীদের হৃদয়ের রক্ত ক্ষরন দ্বিগুণ হয়ে যায় এটা বুঝার ক্ষমতা হয়ত কারো নেই এখন তারা দেশকেও রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেনা আবার নিজের পরিবারের পাশেও দাড়াতে পারছেনা অথচ এই প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সরকারকে তথা দেশকে এবং তার পরিবারকে বাচিয়ে রেখেছে অথচ সেই প্রবাসীরা এখন কর্মহীন অনিশ্চিত একটি গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে কিন্তু প্রবাসীদের এই দুঃসময়ে তারা না পাচ্ছে সরকারী সহযোগিতা না পাচ্ছে কোম্পানি বা এজেন্টদের সহযোগিতা তাদের এখন পেপে পাতা সিদ্ধ করে খাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই যখন আপনি জানতে পারবেন একজন প্রবাসী খাবার না থাকার কারনে মুড়ি খেয়ে, শুধু চাউল সিদ্ধ করে মরিচ দিয়ে পেটের ক্ষুদা নিবারন করে অথচ তাদের উপার্জনে দেশের অর্থনীতি আকাশ চুম্বি হয়ে যায় তখন এই হৃদয়ের রক্ত ক্ষরন কার কাছে প্রকাশ করা যাবে! সরকারের ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা বাজেটে প্রবাসীদের জন্য কোন বরাদ্ধ নেই! তাহলে প্রবাসীরা যে সাড়া জীবন সরকারকে এবং দেশকে দিয়েই গেল এটাই কি তাদের নিয়তি! সরকারের কোন দায়িত্ব নেই প্রবাসীদের জন্য সামনের দিন গুলো আরো কঠিন করোনা পরিস্হিতি কবে স্বাভাবিক হবে অনিশ্চিত আর প্রবাসীদের ও অবস্হা এখন পেটে আগুন জ্বলার মতো না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে নিজেরা সইতে, এখন সৃস্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে সাহায্য চাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প পথ প্রবাসীদের কাছে নেই, তাই সকলে সাবধান থাকুন নিরাপদ থাকুন ধৈর্য ধরুন মনে রাখবেন সময় এমন থাকবেনা আলো আসবেই, প্রবাসীরা হল মোমবাতি নিজে জ্বলে সকলকে আলোকিত করে তাই আত্মবিশ্বাস এই আলো আবার জ্বলবেই, মনে রাখতে হবে রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে, মেষ দেখে কেউ করিসনি ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে।
সকলকে ধন্যবাদ।

নিউজটি শেয়ার করুন :