শিরোনাম

মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী (রহ) জাতি ও হাদীস শাস্ত্রের রাহাবার ছিলেন: মুহাম্মাদ ইসহাক ফরিদী

আকাবিরে আসলাফ ও ওলামায়ে দেওবন্দের প্রতিচ্ছবি শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃ মুসলিম উম্মাহর চেতনার এক বাতিঘর। মানুষের আলম ও ইলমের বড় খেদমতে তিনি আজীবন লিপ্ত ছিলেন।

তিনি একজন খ্যাতিমান লেখক ও ইসলামি গবেষক। ইলম, হিকমাহ, তাকওয়া, লেখনী ও হেকীম শাস্ত্র জ্ঞানে অনন্য ছিলেন তিনি। সমকালের নন্দিত পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি দেশে ও দেশের বাইরে তার অসংখ হাদীসের ছাত্রের কাছে “শায়েখ” উপাধিতে পরিচিত।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃ ১৯৫৩ সনের ১লা আগষ্ট যশোর জেলার কেশবপুর থানার খুলনার কোল ঘেষা আগরহাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ফকির আহমাদ মোল্যা,মাতার নাম মধুমতী বিবি।

শৈশবে তিনি গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। ভদ্র ও সৌজন্যতাবোধ ছিল তাঁর ভূষণ। সুশ্রী চেহারা আর উত্তম ব্যবহারে অতি সহজে যে কারও মন জয় করতে পারতেন। শৈশবে গ্রামের ছেলেদের সাথে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ প্রতিযোগিতা করতেও পছন্দ করতেন তিনি।
শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃ পড়াশুনা হাতেখড়ি নিজ জেলাতে। এরপর নওয়াপাড়া মাদ্রাসা, বরিশালের মাহমুদিয়া মাদ্রাসা ও মেখল মাদ্রাসা,ও পটিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। তারপর হাটহাজারী থেকে দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন,তারপরে
দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে হাদিসের উপর তাখাচ্ছুছ করেন।
তিনি ছাত্র জীবনে মুনাজারায় খুব তুখোড় ছিলেন।

এছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর চারটি ডিগ্রী যথা- তাখাসসুস ফিল ফিকহ, হাদীস, তাফসীর, ও আদব অর্জন করেছেন।

অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনের যশোর রেলষ্টেশন মাদ্রাসা ও নওয়াপাড়া পীরর বাড়ি মাদ্রাসায় কয়েক যুগ হাদীসের দরস প্রদান সহ বিভিন্ন কিতাব পড়ান।এরপরে এ,বি,জি,কে,ফাজিল ড্রিগ্রী মাদ্রাসার সহকারী অধক্ষ্যের দ্বায়িত্বে ছিলেন বহুদিন ।ঐ আলিয়া মাদ্রাসা আগে তিনি দারুল উলুম মাজহারুল ইসলাম মাদ্রাসা নামে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন,যা পরবর্তিতে নিজ ছোট ভাই আলিয়া মাদ্রাসাতে রুপ দেন। যার বর্তমান নাম এ,বি,জি,কে, ফাজিল ড্রিগ্রী মাদ্রাসা।এছাড়াও তিনি চুয়াডাঙ্গা মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব,আগরহাটি নুরুল উলুম কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ছিলেন।

তার জীবনের শেষ অংশে প্রায় এক যুগের বেশি সময়ে তিনি জামি’আ রশীদিয়া গোয়ালখালী খুলনায় শাইখুল হাদীসের মহান দ্বায়িত্বে ছিলেন।

তিনি খুলনার দৌলতপুর বেবি ষ্টান্ড মসজিদ ও যশোর সিটি কলেজ মসজিদের খতিবের দ্বায়িত্বে ছিলেন বহুদিন।

চরমোনাই হযরত মরহুম পীর সাহেব হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির খুলনা বিভাগ ও জেলার দ্বায়িত্বে ছিলেন।

তিনি অত্যান্ত তুখোড় ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তিবাদী দালিলিক আলোচক ও ওয়ায়েজ ছিলেন।বার্ধক্যে এসেও তার কন্ঠে মুখরিত হত সবাই।

যশোর-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন।

তিনি আল্লামা আব্দুল কাইউম, আব্দুল ওয়াদুদ সন্দীপি রহঃ প্রমুখ মনীষীদের থেকে হাদীসের সনদ লাভ করেছেন।আল্লামা মুফতী ফয়জুল্লাহ রহঃ এর অন্যতম ছাত্র তিনি।

আত্মার পরিশুদ্ধতা পরকালীন কল্যাণের জন্য মুখ্য। যার আত্মা পরিশুদ্ধ নয় তার সব আমল বৃথা। জাহেরি জ্ঞানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতিও ছিল প্রবল ঝোঁক। তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়ে হাটহাজারির আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ রহঃ,আল্লামা মাহমুদ মাদানি রহঃ ও আল্লামা আমজাদ হোসাইন মাগুরা পীর সাহেব থেকে খেলাফত লাভ করেছেন। তিনি জীবদ্দশায় দেশ ও দেশের বাহিরের বহু শাইখে তরিকতের হাতে বাইআত গ্রহন করেছেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃ বহুরৈখিক প্রতিভার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি প্রায় অর্ধশত বই লিখেছেন। তাঁর রচিত ‘আহকামে কুরবানি ও মাসায়েলে জবাহ’, জিকির সমস্যার সমাধান,অসতী নারীর দুর্গতি,সহ প্রকাশিত অপ্রকাশিত ৫০ এর অধিক সাড়া জাগানো কিতাব রয়েছে।

কুরআন, হাদিস ও তাফসিরের জ্ঞানে গভীর পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি আরবি ও উর্দু ভাষার কাব্যচর্চায় শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃএর দক্ষতা ছিল অন্যতম।একবার তিনি হাজ্বী সাহেবদের সন্মানে আরবী কাব্য রচনা করে প্রচুর প্রসংশা অর্জন করেছিলেন।

বাংলাদেশের বাইরেও তাঁর রয়েছে প্রশংসনীয় অবস্থান। তিনি দক্ষিনবঙ্গে সবচেয়ে প্রবীন,প্রসিদ্ধ ও শীর্ষ আলেম ছিলেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহঃ দীনের বিভিন্ন অঙ্গনে দীর্ঘ দিনের সাধনা অবদানে দেশবাসীর নিকট বরেণ্য ও সমাদৃত। জাতীয় পর্যায়ের ওলামা-মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দীনের নিকট তিনি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।আল্লামা সৈয়দ ফজলুল করিম রহঃ, আল্লামা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম ও আল্লামা মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করিম দাঃবাঃ তাকে অত্যান্ত ভালবাসার নজরে দেখতেন।

বাংলাদেশে গণমুখী দ্বীনি দাওয়াতের বহুবিধ কর্মতৎপরতার পাশাপশি তাঁর সুন্নতি অনুশীলন, দরস-তাদরিস, ও মসজিদ-মাদরাসা, ওয়াজ-মাহফিলে তাঁর জ্ঞানগর্ভ ও অধ্যাত্মপূর্ণ বয়ান সমাজকে করছে নির্মল আলোকিত।

তিনি ব্যক্তিজীবনে দুই মেয়ে ও নয় ছেলের জনক।তার অসংখ্য মোজেজা রয়েছে।(যা তার নিজের রচিত আত্বজীবনী প্রকাশের সময়ে সংযোজন করা হবে, কেউ চাইলে এগ্রন্হের যেকোন সহযোগীতা করতে পারেন)। তার দুই স্ত্রীর ছিল, যার একজন তার পূর্বেই ইন্তেকাল করেন ।
তিনি ২৫ শে অক্টোবর ২০১৯ রোজ শুক্রবার সকাল ১০.২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্হায় কালেমা পড়তে পড়তে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন।
আমরা সমকালীন বিশ্বের নন্দিত পুর ও মুসলিম উম্মাহর অনন্য রাহাবর শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদীকে হারিয়ে নির্বাক।ইলম ও হাদীসের অনন্য এ রাহবারের মৃত্যূতে হযরত চরমোনাই পীর সাহেব দাঃবাঃ সহ দেশ বরেন্য আলেমগন শোক প্রকাশ করেন।

আল্লাহ তায়ালা প্রিয়ে শায়েখের মাকবারাকে জান্নাতে উচ্চু মাকামে রুপান্তরিত করুন। আমীন।।
সংগ্রহেঃ শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা জেলা প্রতিনিধি।

নিউজটি শেয়ার করুন :