শিরোনাম

মোবাইল ফোন এখন মৃত্যুর ফাঁদ

আবু তালেব, বিশেষ প্রতিনিধি ঃ মানুষের দৈনন্দিন কাজে মোবাইল ফোন অপরিহার্য। মোবাইল ফোন ছাড়া মানুষের সকল কার্যক্রম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রটির বিকল্প যেমন নেই আবার এর অতিরিক্ত ব্যবহার ও ব্যবহারের অসাবধানতায় দিন দিন বাড়ছে দূর্ঘটনা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি। পথচারীরা অসাবধানতাবশত রাস্তা পার হওয়ার সময়, কখনো বা চালক চলন্ত গাড়িতে মোবাইলে কথা বলার সময় প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যবহারে মোবাইল ফোন বিস্ফোরিত হয়ে দ্বগ্ধ হচ্ছে মানুষ। আবার কানে মোবাইলের হেডফোন থাকায় অন্যমনস্ক ব্যবহারকারীরা প্রায়ই রেল লাইন ও সড়ক দূর্ঘটনার পড়ে মৃত্যু বরণ করছে। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে কম বেশি দূর্ঘটনা ঘটলেও ঢাকা থেকে শুরু করে টাঙ্গাইল পযর্ন্ত রেল লাইন এলাকায় মোবাইল ফোন সৃষ্ট দূর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে।

দূর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছে কম বয়সী কিশোর ও তরুণরা। দূর্ঘটনার ধরন ও রেলওয়ে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কানে মোবাইলের হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় অসাবধানে চলা-ফেরা, বিপদজনকভাবে মোবাইল দিয়ে সেলফি তোলা এবং মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া অবস্থায় কথা বলতে গিয়ে বিস্ফোরণ জনিত দূর্ঘটনা থেকে ব্যবহারকারীরা মারাত্মক আহত ও নিহত হচ্ছে। রাজবাড়ীর নিমতলা বিশ্বাস পাড়া এলাকায় গত ১৪ জুন মাদ্রাসা ছাত্র আবু বকর (২৩) রেল লাইনের ওপর দিয়ে কানে মোবাইল ফোনের হেডফোন লাগিয়ে যাওয়ার সময় রেলের ধাক্কায় মারা যায়। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী রাজবাড়ীর কালুখালীতে গঙ্গানন্দপুর এলাকায় কানে হেডফোন লাগিয়ে রেল লাইনে বসে গান শুনত শুনতে দুই কিশোর অন্তু ও সাকিবের করূণ মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্কেল (ঢাকা) এর সহকারী পুলিশ সুপার ওমর ফারুক জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহারে রেল লাইনে যে দূর্ঘটনা ঘটে তা প্রতিরোধে আমরা মাসে তিনটি থেকে চারটি সভায় আলোচনা করি। এ ব্যাপারে কমিউনিটি পুলিশও সচেতন রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গত ঈদে লিফলেট বিতরণ করেছি, আবারও করব। তিনি আরও জানান, সাধারণত শহর এলাকায় কম বয়সী কিশোর ও তরুণরাই এ ধরনের দূর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোবাইল ফোনে কথা বলা ও কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে গিয়ে যতগুলো দূর্ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই রেল লাইন কেন্দ্রিক। অসচেতন ভাবে রেল লাইন দিয়ে চলা – ফেরার জন্য এই দূর্ঘটনা ঘটছে। ঢাকা রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, তাদের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পযর্ন্ত মোট ১৪২ কিঃমিঃ রেল পথে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মে পযর্ন্ত সময়ে কানে মোবাইল ফোনের হেডফোন দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ৪৮৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। দূর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে নারী পুরুষ সব বয়সের মানুষই ছিল।

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডাক্তার সামান্ত লাল সেন জানান, বিগত কয়েক মাসে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে আহত হয়ে বেশ কয়েক জন রোগী তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েক জন মারাও গেছে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের বিস্ফোরণে প্রধাণত মুখমন্ডল কান ও শ্বাসনালি গুরুতর ভাবে পুড়ে যায়। বার্ন ইউনিটের প্রাপ্ত তথ্যে বিস্ফোরণে আহতরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে কথা বলার সময়ই বেশি বিস্ফোরণ ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করুন :