শিরোনাম

যার অনুপ্রেরণায় রাজনীতির ময়দানে সরব : মাওলানা মুহাম্মদ আলী

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সর্বোচ্চ পরিষদ তথা কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, সাবেক জেলা সভাপতি, কক্সবাজার জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক, কক্সবাজারের ইসলামী রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ছিলেন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, মাওলানা শেখ মোঃ সোলায়মান (রহঃ)।

আমার রাজনৈতিক জীবনের সর্বপ্রথম রাহবার, যাহার হাত ধরে, পদাংক অনুসরণ ও প্রেরণা নিয়ে আমি রাজনীতির ময়দানে সরব রয়েছি তিনি হলেন মাওলানা শেখ মোঃ সোলায়মান সাহেব (রহঃ)। আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে তিনি যখন ইসলামী আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ছিলেন তখন সর্বপ্রথম আমাকে জেলা জয়েন্ট সেক্রেটারী হিসেবে মনোনীত করে এ দ্বীনি আন্দোলনে তার একান্ত সহকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তখন থেকে তাহার হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে অনেক কিছু শিখেছি।

হাটি হাটি পা পা করে জেলা সেক্রেটারী থেকে জেলা সহ-সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বর্তমান পাঁচ বছর জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন কালীন তিনি আমার সব চেয়ে কাছের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তার সুন্দর ও দূরদর্শি পরামর্শ, আমার চলার পথে সর্বদা সাহস যোগাত।

রাজনীতিতে আমি তার সহযোদ্ধা হলেও তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের মত।আন্দোলনের কাজ সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান কখনো ভুলার মত নয়। সুদীর্ঘ ছয় বছর তিনি জেলা সভাপতি থাকা কালীন আমি জেলা সেক্রেটারী ছিলাম। তাই একথা নির্দিধায় বলা যেতে পারে রাজনীতির ময়দানে আমিই ছিলাম তার একান্ত সহচর।

জেলা ব্যাপী সাংগঠনিক সফর ও কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামে যোগদানের ক্ষেত্রে তার মধ্যে বিন্দু মাত্রও কার্পন্যতা দেখিনি। তার বার্ধক্যতা সাংগঠনিক প্রোগ্রামে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। একজন বয়োবৃদ্ধ নয় বরং যুবক সোলায়মান সাহেবকেই আমি নেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। পরিশেষে তার দূর্বলতা ও বার্ধক্য অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় মরহুম মাওঃ হাসান সাহেব কে জেলা সভাপতি নিযুক্ত করা হলে তাকে জেলা উপদেষ্টা এবং মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই রহ এর আমলেই তাকে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মনোনীত করা হয়। উপদেষ্টা থাকাকালীন আন্দোলনের সকল কার্যক্রমে তার সরব উপস্থিতি ছিল।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি এবং মতবিনিময় ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তেও বজায় ছিল। আমি জোয়ারিয়ানালা মাদ্রাসায় শিক্ষক থাকা কালীন প্রতিবছর তার একজন ছেলে বা নাতিকে আমার তত্বাবধানে দিয়ে দিতেন। পরে লাইট হাউজ মাদ্রাসায় আসার পর তার নাতিদেরকে লেখা পড়ার জন্য সেখানে পাঠানো আরম্ভ করলেন। এটা ছিল আমার প্রতি তাঁর আস্থা ও বিশ্বাস।

এই মহান পুরুষ ব্যক্তিগত জীবনে নির্লোভ, নিভৃতচারী বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন ছিলেন অন্যের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী, সত্যের পথে অটল অবিচল। দ্বীন শিক্ষার প্রচার প্রসার ও ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী এই আলেমেদ্বীনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষের মৃত্যুতে জেলা ইসলামী আন্দোলন একজন বড় অভিভাবক হারাল আর আমি হারালাম একজন সঠিক পথ-প্রদর্শক। তিনি তার সকল ছেলেদের কে হক্কানি আলেম হিসেবে গড়ে তুলে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বড় ছেলে মাওঃ নেজামুর রহমান সদর দক্ষিন শাখার সভাপতি এবং নাঈমুর রহমান জেলা দায়িত্বশীল হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। আশা করি তার সুযোগ্য সন্তানেরা তাদের পিতার আদর্শ লালন করে, তার পদাংক অনুসরন করে ইসলামী আন্দোলনের জন্য সর্বোচ্চ কুরবানীর দৃষ্টান্ত রাখবেন।

পরিশেষে আমি তার শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন :