একটা সময় আমি বস্তুবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলাম। ছোটকাল থেকে বিএনপিকে ইসলামী মূল্যবোধের সরকার মনে করার কারণে তাদের প্রতি দুর্বল ছিলাম। ছিলাম জিয়া ও খালেদা জিয়া প্রেমি। তার কারণ আমি যাদের সাথে মিশতাম তারা সকলই বিএনপি পন্থী তথা ছাত্র মজলিস করত। সে সময় আমাদের এলাকায় ছাত্র মজলিস (মাওলানা ইসহাক গ্রুপ) এর উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল। সেই সংগঠনের মাদরাসা ছাত্র আর সেই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আলেম উলামাদের বিএনপির গুণকীর্তন আর প্রসংশা শুনতে শুনতে কানটা ঝালাপালা হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে বিএনপির প্রেমে পড়ে যাই।
আমার মাথায় জেঁকে বসেছিল বিএনপি ইসলামের বন্ধু আর আওয়ামী লীগ ইসলামের শত্রু। তবে আমি ছাত্র মজলিসের কোন দায়িত্বে ছিলাম না। অনার্স প্রথম বর্ষে সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের কলেজ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম এক বছর। এরই মধ্যে মুফতি ফয়জুল করিম সাহেব হুজুরের বয়ান শুনে তওবা করে দাড়ি রেখে দিলাম।সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম ইশা ছাত্র আন্দোলনের সাথে। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বে শেষে ইতি টানলাম ছাত্র রাজনীতির।
এদেশে এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো ইসলামী দলের নাম জামায়েতী ইসলামী। তাদের দাবি মতে বাংলাদেশে শিক্ষিত লোকের আধিক্য তাদের দলে বেশি। অশিক্ষিত কোন লোক তাদের দলে নেই তা নিয়েও তারা গর্ববোধ করত। তারা আদৌ জানেনা যে একটি রাজনৈতিক দলের সফলতার মুখ দেখতে প্রয়োজন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু সেই সত্যটা জামায়েতের নেতারা উপলব্ধি করতে পারেনি। মাওলানা সাঈদি সাহেবের বয়ান শুনে কিছু মানুষ আকৃষ্ট হলেও তাদের সাংগঠনিক কাজের কারণে কোন সাধারণ নাগরিক জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত হয়নি। মাওলানা সাঈদির কারণে কিছু মানুষ বেড়েছে তা অস্বীকার করার জোঁ নেই।জামায়েতী ইসলামীর ব্যর্থতা হলো তাদের দলে রিক্সাওয়ালা,ঠেলাওয়ালা,সিএনজির ড্রাইবার নেই। সেই ক্ষেত্রে চরমোনাইর পীর সাহেবের সংগঠন সফল। তাদের দলে আছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। শ্রমিকদের জন্য রয়েছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন এর অধীনে বহু সহযোগী সংগঠন রয়েছে।
সিএনজি ও অটোরিকশা শ্রমিক আন্দোলন, চিকিৎসা শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক মজুর আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, হকার্স শ্রমিক আন্দোলন সহ বহু সংগঠন। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত হল লবণচাষী শ্রমিক আন্দোলন। ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে সিএনজির ড্রাইবারদেরকেও দেখবেন যাদের পরনে সুন্নতি জামা, যেন প্রত্যেকটি ড্রাবাইর হাটহাজারি মাদরাসা থেকে পাস করে সিএনজি চালাচ্ছ। এটাই চরমোনাইর পীর সাহেব এর সাংগঠনিক সফলতা।
আইনজীবীদের জন্য গঠিত হলো আইনজীবী পরিষদ, যুবকদের জন্য ইসলামী যুব আন্দোলন, ছাত্রদের জন্য ইসলামী শাসতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।সকলের আত্মশুদ্ধির জন্য গঠিত হলো বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি। হযরত হাফিজ্জি হুজুর রহ এর স্বপ্ন ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার মাদরাসা প্রতিষ্টার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ড। যার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাজারো মাদরাসা। নীতি আদর্শের প্রশ্নে অটল ও অাপোষহীন নীতির কারণে স্বপ্ল সময়ে বিস্তৃত হয়েছে তাদের সংগঠন। অনুগত কর্মী,সুদক্ষ নেতৃত্ব ও যুগোপযোগী কর্মসূচির কারণে সর্বমহলে প্রসংশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোন সংগঠন কেউ দেখাতে পারবেনা যে ইসলামী সংগঠনে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। জামায়াতে কওমীপন্থীদের অংশ গ্রহণ ছিলনা। ছিলা আলিয়াপন্থী ও সাধারণ শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ। কওমী ঘরোয়ানার সংগঠন সমূহের কর্মক্ষেত্র ছিল শুধু কওমী অঙ্গন। বাংলাদেশেে ইতিহাসেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই প্রথম কোন সংগঠন যেখানে কওমীপন্থী, আলিয়াপন্থী, সাধারণ শিক্ষিত, মূর্খ, কুলি মজুর, জেলে তাঁতি সকলের অংশগ্রহণ হয়েছে। ইস্ত্রী দিয়ে জুব্বা পড়ে গণবিপ্লব সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন মাটির মানুষ।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে সবাই কওমী মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক। আসলে খুঁজ নিয়ে দেখবেন কেউ সিএনজির ড্রাইবার, কেউ আইনজীবী, কেউ ডাক্তার, কেউ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্র কেউবা আবার বড় মাদরাসার পরিচালক, মুফতি মুহাদ্দিস। যদিও দেখতে সবাই মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের মত। অনেক সিএনজির ড্রাইবার কে বড় মুহাদ্দিস ভেবে মসজিদের ইমাম সাহেব সম্মান করে নামাজের ইমামতি করতে অনুরোধ করে। আমি প্রায় সময় শার্ট প্যান্ট পরি।তবে কোন প্রোগামে পাঞ্জাবি পায়জামা ছাড়া যাইনা। মাঝে মাঝে বলে কোন মাদরাসা থেকে পড়েছেন? হাজারবার সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। জুব্বা পাঞ্জাবি পরিনা বলে ভাবার কারণ নেই যে আমি এসব এড়িয়ে চলি। আমি পাঞ্জাবি পড়ে মাঝে মাঝে কলেজেও যাই। সব অভ্যাস আছে। সব কথার এক কথা হলো চরমোনাই পীর সাহেব এর সংগঠন অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে সফল বলে মনে করি। এই দলের জন্য কর্মীরা রাজপথে কাজ করে আর যারা এই সংগঠন করেনা সেইসব আলেম উলামাগণ রাতের আধারে মহান আল্লাহর কাছে কায়মন বাক্যে দোয়া করে।
চরমোনাই ওয়ালাদের ভাবার কারণ নেই যে শুধু তাদের কাজের কারণে তাদের সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠন এগিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে শত শত আলেম বুজুর্গদের চোখের পানি। তাই সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে বলে অহংকার করা যাবেনা। যে আলেম চরমোনাই কে দু’চোখে দেখতে পারেনা সে আলেমও যে রাতের আধারে চরমোনাইর জন্য দোয়া করে তা হয়তো চরমোনাই ওয়ালাদের অজানা। তাই প্রয়োজন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও নীতির প্রশ্নে অটল থেকে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া।