শিরোনাম

রাজাকারের নয়, দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দিয়েছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সম্প্রতি প্রকাশিত রাজাকারদের আলোচিত তালিকা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের তালিকা দেয়া হয়নি; দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দেয়া হয়েছে।’বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

রাজাকারদের প্রকাশিত তালিকা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রিকোয়েস্ট আসে- আমরা যাতে রাজাকার, আল বদর, আল শামসের একটা তালিকা তৈরি করে তাদেরকে দেই। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন- রাজাকার, আল বদর, আল শামস যারা ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তাদের কোনো লিস্ট নেই।’

‘আমাদের কাছে কী ছিল? আমাদের কাছে ছিল- ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দালাল আইনে যারা অভিযুক্ত হয়েছিলেন, তাদের মামলার নম্বরসহ একটা ডিটেইল তথ্য ছিল। দালাল আইন যখন বলবৎ ছিল, তখন এমনও দেখা গিয়েছে কেউ শত্রুতা করে আরেকজনের নামে মামলা করে দিয়েছে। সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি। এজন্যই পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের জটিলতার জন্য এ আইনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আইনটি যখন স্থগিত হল তখন মামলাগুলো কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, সেজন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে যে লিস্টটা পাঠিয়েছি। এরা সবাই ছিলেন দালাল আইনের মামলায় অভিযুক্ত। পাশাপাশি মিথ্যাভাবে কিংবা ভুলবশত যাদের নাম এসেছিল, একটা নোট দিয়ে তাদের নাম লিখে দেয়া হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম ১০ হাজারের মধ্যে ৯৯৬ জন মামলায় অভিযুক্ত নয়, তাদের নাম ভুলবশত আসছে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকারের তালিকা এখনো ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের রেফারেন্সে যেটা বলেছে, আমরা অবশ্যই সেই লিস্টটা পাঠিয়েছি। কোনো রাজাকার, আল বদর, আল শামসের লিস্ট তাদেরকে পাঠাইনি। আমরা পাঠিয়েছি আমাদের কাছে যেটা সংরক্ষিত ছিল, অভিযুক্ত ১০ হাজার ৭০০ জনের মতো নাম, যারা এই মামলার বিবাদী ও আসামি। এর মধ্যে ৯৯৬ জনকে তাদের নাম লিখে দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এরা বিবাদী বা আসামি নন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি, অনেক জায়গায় ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বলেছেন, তারা এটা সংশোধন ও রি-চেক করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৯৬ জনের সংশোধনের যে নোট দিয়েছি, সেটা ওখানে (মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকায়) ঠিক সেভাবে প্রকাশিত হয়নি বলে আমার মনে হচ্ছে। যদি প্রকাশ হত তাহলে কনফিউশনের এ জায়গাটিতে আসত না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যদি কোনো করণিক ভুল হয়ে থাকে, সেটাও আমরা দেখব। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। কলামের কোনো ভুল হলে সেটাও দেখব।’

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই ভুলের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত মনে করেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ভুল যারা করছেন, এটা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকেন তবে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

তারা চেয়েছেন রাজাকারের তালিকা, আপনারা দিয়েছেন দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা। এ গ্যাপটা হলো কেন? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দিয়েছি। আমরা তো প্রকাশ করতে দেইনি। আমাদের কাছে যা ছিল আমরা তাদের দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কাছে রাজাকার, আল বদর, আল শামসের তালিকা নেই, সেটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি।’

স্ট্যান্ডবাজি করতে গিয়ে সরকার যে বিব্রত হলো, এটা আপনি কীভাবে দেখছেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ডবাজি, আমি বলব না। উনি আল বদর, রাজাকারের লিস্ট করতে চেয়েছেন, ওনার সেই প্রচেষ্টা চলবে, আমরা তাকে সহায়তা করব। উনি চাচ্ছেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ তার (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী)। আমরা এটা কতটা নির্ভুলভাবে উপহার দিতে পারি, এটা এখন দেখার বিষয়।’

এত বড় একটা সংবেদনশীল বিষয়, এতে যত্নের অভাব ছিল বলে মনে করেন কি? এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি তো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ছিলাম। রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা কোথা থেকে তারা বেতন পেতেন, কোথা থেকে অস্ত্র দিয়েছে এটা তো নিশ্চয়ই একটা তালিকা রয়েছে। যেহেতু এটা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাজ সেজন্য আমরা অনধিকার চর্চা করছি না। আমি আশা করি, সবার সঙ্গে সমন্বয় করে তিনি (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী) ভবিষ্যতে লিস্ট তৈরি করবেন।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় গোলাম আরিফ টিপুর নাম আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যে নামটি উচ্চারণ করলেন সেই নামটি বোধহয় ওখানে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায়) নেই।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টিপুর নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই গেছে, বিষয়টি আপনারা যাচাই করেছেন কি না? এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে গেল আমরা একটা চেক করে দেখি। তাকে মনে হয় অ্যাকিউজড হিসেবে দেখানো হয়নি।’

গোলাম আরিফ টিপু নাম প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমাদের কাছে কোনো আবেদন করেননি।’

আপনাদের দেয়া তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, না। আমাদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের কাছে চেয়েছে কী আছে, আমরা সেটাই দিয়েছি। আমরা এটা বলেছি, আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় রাজাকার, আল বদর, আল শামসের নাম প্রোভাইড করা। মুক্তিযোদ্ধা কে, রাজাকার কে সেটা ঠিক করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। আমাদের কাছে ইনফরমেশন চেয়েছেন, আমরা দিয়েছি।’

এটা পরিকল্পিতভাবে করা হল কি না? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, না। আমাদের কোনো ভুল থাকলে আমরা সেটা ঠিক করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’ আমি আবারো বলছি, এটা কোনো রাজাকার, আল বদর, আল শামসের তালিকা নয়। ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা।’

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনি কতটুকু আহত হয়েছেন? জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি তো অবশ্যই আহত হয়েছি।’

এর আগে, রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন- এ তালিকা তারা করেননি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকাই তারা প্রকাশ করেছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর (দশ হাজার সাতশত ঊনানব্বই) রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এদিকে, রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, রাজাকারের তালিকায় ভুলভাবে আসা নাম বাদ দেয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা সম্পর্কে বলেছিলেন, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন :