শিরোনাম

রামগতির চরবাদাম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে জিডি, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

রিয়াজ মাহমুদ বিনু, রামগতি (লক্ষ্মীপুর)

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন জসিমের বিরুদ্ধে জমিদখল, দোকানঘর দখল, অপহরণ,গরু-মহিষ আত্মসাৎ করা, মানুষকে নানা ভাবে হুমকি-ধমকি প্রদান,সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দেওয়া সহ নানা অনিয়মের কারণে থানায় একাধিক জিডি করেন ভুক্তভোগীরা। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি ও আদালতে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অসহায় পরিবার।

তার কথা বা মতের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই নেমে আসে নির্যাতনের স্টিমরোলার। হতে হয় অপমান অপদস্ত। কথায় কথায় মারধর কিংবা মামলার আসামি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, চরবাদাম ইউনিয়নের একসময়ের আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির নেতা বর্তমানে চরবাদাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিমের বিরুদ্ধে।

চেয়ারম্যান জসিমের ছেলে মোঃ শাওন ও তার বাহিনীর কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে। নিরীহ লোকজন রয়েছেন চরম আতংকের মধ্যে। অনেক পরিবার চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে একধরনের মানষিক যন্ত্রণা অবস্থায় জীবন যাপন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ঐ এলাকার আলী হায়দার চৌধুরীর ছেলে জুলফিকার আলী চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রামগতি থানা ও লক্ষ্মীপুর আদালতে একাধিক অভিযোগ /মামলা দায়ের করেন।

এসব জিডি ও মামলার এজহারে জুলফিকার আলী চৌধুরী উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান জসিম তার ছেলে শাওন ও তার ভাতিজা স্থানীয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী তানিম ও তাদের পালিত একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। ঐ বাহিনী দিয়ে চেয়ারম্যান জসিম তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন জমি দখল, জমিদারহাট বাজারের দোকান ভিটি দখল করা সহ তাকে নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে।

এমননি তাকে প্রাণনাশের হুমকি, হত্যা করে লাশ গুম করা, মারপিট করা ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। কথায় কথায় তেড়ে আসেন জসিম চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী। দলের প্রভাব বিস্তার করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন তিনি। এছাড়া শাওন নামে তার এক ছেলে এলাকায় কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন বলে জানান ভুক্তভোগী জুলফিকার আলী।

এছাড়া উপজেলার বালুরচর এলাকার আব্দুল ওদুদের ১৭টি মহিষ ও ৫ টি গরু সংক্রান্ত একটি বিরোধ দেখা দিলে তিনি ঐ বিরোধের মিমাংসা করতে বৈঠক ডাকেন। এতে তার ১৭ টি মহিষ ও ৫ টি গরু চেয়ারম্যান জসিমের জিম্মায় রাখা হয়। পরে চেয়ারম্যান জসিম তার ঐ গরু মহিষ পেরত না দেওয়ায় ভুক্তভোগী আবদুল ওদুদ রামগতি থানায় জিডি ও আদালতে একটি মামলাও করেন। বর্তমানে মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।

চেয়াম্যান জসিমের সেল্টারে তানিম একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সম্পুর্ন বেআইনি ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল থেকে শুরু করে স্থানীয় তোরাবআলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল করেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি স্কুলে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জুলফিকার প্রতিকার চেয়ে একাধিক অভিযোগও করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান জসিম ও তার বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে জুলফিকার আলী লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) দুদকের চেয়ারম্যান, রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রামগতি থানার ওসি ও লক্ষ্মীপুর আদালত সহ বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত প্রেরণ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরবাদাম ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যক্তি জানান‌, জসিম চেয়ারম্যান বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থেকে এলাকার নিরীহ লোকজনের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাচ্ছে। ছাত্রলীগ‌ নেতার স্ত্রীকে অপহরণ করেন ও আদলতে একটি অপহরণ মামলাও হয় এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মামলার একজন আসামী হয়ে রাস্তায় ওপেন চলাচল করে যাচ্ছেন। জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম, সরকারি বরাদ্দ তসরুপ করা, এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে কয়েকবার জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হন চেয়ারম্যান জসিম।

এবিষয়ে অভিযুক্ত চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম বলেন এসব অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি জনগনের ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান। জনগনের জন্য কাজ করছি। জুলফিকার আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে আমাকে নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে। আমি এর বিচার চাই।

রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, চরবাদাম ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। আদালত থেকেও কিছু মামলা এসেছে। আমরা এগুলো তদন্ত করে সত্য প্রমানিত হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

নিউজটি শেয়ার করুন :