শিরোনাম

রামগতির বয়ারচরে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র

 

আমানত উল্লাহ,রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর):  লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের বয়ারচর,টাংকি বাজার,তেগাছিয়া ডাকাইয়া সমাজ,মিরসমাজ,টুমচর,চর দরবেশ,জাকির সমাজ,নাছির বাতাইন্নার সমাজ ও সেন্টাল বাজার এলাকায় প্রায় ২০ হাজার বিদ্যুত গ্রাহক থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,চরগাজী ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকার প্রায় বিশ হাজার মানুষ দ্বীর্ঘদিন থেকে পল্লী বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ঘোষণা অনুযায়ী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। আর এই কর্মযজ্ঞকে পুঁজি করে  ঐ এলাকায় বিশাল একটি দালালচক্র সিন্ডিকেট তৈরী করে হাতিয়ে নেয় এ টাকা।দালাল চক্রের সদস্যরা হলেন শাহাদাত,বর্ডার কালাম ভুয়া ইলিক্টিশিয়ান সুমন,জমিন মাঝি,রাসেল, মহশিন,আলাউদ্দীন,সফিক মাঝি,শাহীন,বশির  হুমায়ুন,আব্দুল জলিল মিরাজ ও সুমন।

এসব দালালরা পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার ও হাতিয়ার সুমন নামের এক ভুয়া ইলিক্টিশিয়ানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং অফিসের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি, লাইন স্থাপন এবং মিটার সংযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে আগ্রহী গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, এই সব দালালদের ঘুষছাড়া বিদ্যুৎ লাইন কিংবা সংযোগ কিছুই মিলছে না।বিদ্যুত সংযোগের লাইন সম্প্রসারণের কাজ থেকে শুরু করে সংযোগ পাওয়া পর্যন্ত পদে পদে এই সব দালাল চক্রটিকে দিতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। দালাল ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

এই সব দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত এলাকাবাসী। অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েও এখন পর্যন্ত ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানান উক্ত এলাকটি রামগতির মধ্যে হলে ও বিদ্যুত লাইন নির্মাণ ও সংযোগের কাজটি মুলত নোয়াখালীর সোনাপুর জোনাল অফিসের আওতায় হচ্ছে।নিয়ম অনুযায়ী এটি রামগতি জোনাল অফিস করার কথা থাকলেও নিয়মমানা হয়নি।এক্ষেত্রে অনিবন্ধিত হাতিয়া এলাকার জৈনিক সুমন নামের এক ভুয়া ইলিক্টিশিয়ানের সহযোগিতায় দালাল চক্রটি বিশাল বাণিজ্যে নেমে পড়েন।দুর্গম চরের খেটে-খাওয়া মানুষদেরকে ভুল বুঝিয়ে এ বাণিজ্য করে তারা।তবে এই সব দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন দায়ভার নিচ্ছেনা রামগতি পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।

তাদের অভিযোগ এটি রামগতির হলেও দেখা শুনা সম্পুর্ন সোনাপুর অফিস করে।আবার সোনাপুর অফিস বলছে ভিন্ন কথা।তারা দেখাশুনার জন্য রামগতি জোনাল অফিস কে দায়ী করেন।সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ, খুঁটি, লাইন এবং মিটারের জন্য গ্রাহকপ্রতি ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে নিচ্ছে দালাল বর্ডার কালাম,শাহাদাত, জমিন মাঝি,সফিক মাঝি,শাহীন, বশির ও সুমন।এ সব দালালদের মাধ্যমেই এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দাবি কৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে কিংবা প্রতিবাদ করলে নানা অজুহাতে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রাখার হুমকি দিলে অনেকেই দারদেনা কিংবা সুদের উপর টাকা নিয়ে দালালদের চাহিদা পুরন করতে হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে এবং ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দালালচক্র এই অপকর্ম করছে।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নতুন লাইনের ক্ষেত্রে মিটার বাবদ জামানত ফি ৪শ’ টাকা, সদস্য ফি ৫০ টাকা, আবেদন জমা বাবদ ১শ’ টাকাসহ সর্বমোট ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পুরনো লাইনের ক্ষেত্রে অনলাইনের আবেদন ফি ১শ’ টাকা বাড়তিসহ মোট ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।অনুসন্ধানে যায়, নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের প্রক্রিয়ায়  খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। লাইন টানা মিটার বোর্ড ওয়ারিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই সুযোগে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে নতুন সংযোগ প্রত্যাশিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিয়েছে।

বিদ্যুৎ গ্রাহক নুরুদ্দীন, নুর হোসেন আবুল বাসার,বেলাল,দিলদার মেম্বার,নাছির উদ্দীন জগলু,নিজাম,সহেল,ও আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ আসছে এমন আওয়াজ তুলে শাহাদাত,বর্ডার কালাম,ইলিক্টিশিয়ান সুমন,রাসেল,শাহীন, আব্দুল জলিল নামের দালাল চক্রটি উপজেলা চেয়ারম্যান সরাফত উদ্দীন আযাদ সোহেলের নাম ভাংগিয়ে গত এক বছর পূ্র্বে গ্রামের বিশ হাজার পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে সাত হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন স্থাপন ও মিটার বরাদ্দের নামে একই কারবার চলছে।অভিযুক্ত দালাল চক্রের হোতা শাহাদাতচক্রটি এলাকায় সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে অনেকবার চেষ্টার পর মোবাইলে এ প্রতিবেদককে জানায়, টাকা ছাড়া এখন কোন কাজ হয়না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই।

এ টাকা দিয়ে আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের বকশিস দিতে হয়েছে।অফিসে  আসা যাওয়া ও ঠিকাদারের লোকজনকে ভাত খাওয়া,গাছ কাটার খরচ বহন করছি।ঠিকাদারদেরকে  নগদ কিছু দিয়েছি।রামগতি পল্লী বিদ্যুত জোনাল অফিসের ডিজিএম আবুবকর সিদ্দিক জানান বয়ারচর ও তেগাছিয়ার ঐ লাইনটি সোনাপুর অফিস দেখা শুনা করে বিষয়টি তারা দেখবে। এটি তো রামগতির মধ্যে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন রামগতির এরিয়ার মধ্যে হলেও কাজটা আমরা করিনি। সোনাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম অভয়মিত্র জানান ঐ এলাকাটি মুলত রামগতির মধ্যে তারা তো এগুলো দেখতে পারেন।

এতো দুরে গিয়ে আমাদের দেখা কষ্ট কর। তবুও অভিযুক্ত দালাল চক্রের ব্যাপারে খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয় রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফত উদ্দীন আজাদ সোহেল জানান আমার নাম বিক্রি করে কেউ টাকা পয়শা নিলে বিদ্যুতের খুটির সাথে বেঁধে আমাকে খবর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আর শাহাদাত নামের কোন দালাল কে আমি ছিনিনা।জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরি সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, আমরা এ বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। মাঝেমধ্যে মাইকিং করা হচ্ছে। বিদ্যুতের নাম করে কেউ টাকা চাইলে তাকে ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে বলেছি। তবুও বিষয়টি নিয়ে আমি এখনি ব্যবস্হা নিচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন :