ওলামা কণ্ঠ ডেস্ক: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে করোনা রোগী। প্রতিদিনেই দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর তালিকা ইতি মধ্যে মৃত্যুরও খবর পাওয়া গেছে। সূত্র মতে গত ১ মাসে চিলমারী হাসপাতালে ২শ’ ২৯ জনের করোনা টেস্ট হয় এর মধ্যে ৬৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ১ জনের মৃত্যু হয় এছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে রোগী। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আতঙ্ক আর ঝুঁকি বাড়তেও শুরু করেছে।
সরকারের ঘোষণা কঠোর লকডাউন চললেও তা যেন ঘোষনায় সীমাবন্ধ রয়েছে, চলছে লুকোচুরি খেলা। সাইরেন বাজিয়ে আসে প্রশাসন আর সাথে সাথে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট এবং রাস্তা কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডায় থাকা মানুষজন আড়াল হলেও প্রশাসনের গাড়ি যাওয়া মাত্র আবার খোলা হচ্ছে সকল দোকানপাট এবং মেতে উঠছে আড্ডায়। থানাহাট বাজার, জোড়গাছহাট, বালবাড়িহাট, টোলোর মোড়সহ বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে একই চিত্র লক্ষ করা গেছে মুখে নেই মাস্ক চলছে আড্ডা। শুধু তাই হয় কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রবিবার জোড়গাছ হাটে বৃহৎ পশুর হাট লাগলেও অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন ছিল নীরব। এদিকে লকডাউনে বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর খেটে খাওয়া মানুষ।
https://forms.gle/1vh5DkAtTG6TAeD6A
পাবনার চাটমোহরে কঠোর লকডাউনের মঙ্গলবার কঠোর অবস্থানে ছিল চাটমোহরের প্রশাসন। লোকজন বাড়ির বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে হাট বাজারে মানুষের ভিড় ছিল। সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন ইসলাম সেনাবাহিনী নিয়ে টহল দেন পৌর সদরসহ বিভিন্ন এলাকায়।
চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান, মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টে তল্লাশির মধ্যেও চট্টগ্রামে লোকজনকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে রাস্তায় নামছে মানুষ। উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। গতকাল নগরীর প্রায় সব সড়কে ছিল যানবাহন আর মানুষের জটলা। কোনো কোনো এলাকায় যানজট দেখা যায়। অলিগলি, হাটবাজারে উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে রাস্তায় নামার নানা কারণ বলছেন লোকজন। তবে লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুঃসময় পার করছে। কাজের খোঁজে রাস্তায় নেমেও তারা কোনো কাজ পাচ্ছেন না। সরকারি কোনো সাহায্যও জুটছে না অনেকের ভাগ্যে।
এদিকে কোনো কোনো এলাকায় দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন মামলা এবং জরিমানা আদায় করছেন। তবুও থামছে না বিধিনিষেধ ভাঙার প্রবণতা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন সফলে আরো বেশি কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অহেতুক রাস্তায় আসলে আটক এবং দোকানপাট খোলা রাখলে তা সিলগালা করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান। সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে চলছে তল্লাশি।
গাইবান্ধায় কঠোর লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে গাইবান্ধা শহরে সব ধরনের যানবাহন এবং হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় আরো বেড়েই চলছে। শহরের বাইরে এলাকা গাইবান্ধা-বাদিয়াখালি-বোনারপাড়া সড়ক, গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোবাইক ও মটরসাইকেল যথারীতি চলাচল করছে। বিশেষ করে দ্রুত গতির মটরসাইকেলের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের এই সময়ে হেঁটে চলাচল করা লোকজন নানা সমস্যায় পড়ছে। এদিকে শহরতলি ও গ্রামাঞ্চলে মানুষ লকডাউন মানছে না। ফলে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকছে।
বিশেষ করে গাইবান্ধা কলেজ রোডের প্রফেসর কলোনী, সুন্দরজান মোড়, তিনগাছের তল, গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের ইন্দ্রারপাড়, বাংলা বাজার, বোর্ড বাজারসহ সদর উপজেলার চকমামরোজপুর, ভেড়ামারা ব্রিজ সংলগ্ন মোল্লা বাজার, পাঁচজুম্মা, স্কুলের বাজার এলাকাসহ হাট-লক্ষ্মীপুর, দারিয়াপুর বাজারগুলোতে দোকানপাট খোলা ছিল। এদিকে লকডাউন কার্যকরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যদের টহল এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।
ঝালকাঠি জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়দেরকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সেনাবাহিনী। লকডাউনে কর্মহীন অসহায় পরিবারের সদস্যদের হাতে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটা তুলে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭ পদাতিক ডিভিশন বরিশাল এরিয়ার ২২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন সানজিদা। সেনাবাহিনীর খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি অসহায় মানুষ।
নোয়াখালী কবিরহাট ও চাটখিল উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৪৭ জন। জানা গেছে, লকডাউনে নোয়াখালীতে সব ধরনের দুরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় সড়কে ছোট যানবাহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়কে কয়েকটি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।
জেলা শহর মাইজদী, সোনাপুর, বাণিজ্যিক চৌমুহনীসহ বড় বাজারগুলোর সকল শপিংমল, মার্কেট বন্ধ থাকলেও কিছুসংখ্যক দোকানের সাটার অর্ধেক খোলা রেখে ব্যবসা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে দোকান বন্ধ করলেও পরে পুনঃরায় আবার দোকান খুলছেন তারা। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী ও স্কাউট সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম খান জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে জেলার বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। অভিযানকালে আইন অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি মামলায় ৮৬ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলায় মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪টি চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। কঠোর নজরদারির পরেও রাস্তায় মটরসাইকেল, বাটারিচালিত রিকশা ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া র্যাব ও আনসার সদস্যরাও মাঠে টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে।
পুরো জেলায় শহর এলাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। চেকপোস্টে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। অপরদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজার ছাড়া জেলার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেটসহ দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।
টাঙ্গাইল জেলায় লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে টাঙ্গাইলে অভিযান পরিচালনা করে ৭ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের নেতৃতে অভিযান পরিচালন করে এ জরিমানা করা হয়।
এসময় র্যাব-১২ সিপিসি-৩ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দোকানে অভিযান পরিচালনা করে ৯টি মামলায় ৭ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।