শিরোনাম

লৌহজংয়ে কিশোর গ্যাং সক্রিয় হচ্ছে


আ স ম আবু তালব,মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
গোটা লৌহজংয়ে কিশোর গ্যাং বর্তমান এক আতংকের নাম। চলমান সমাজে গ্যাং কালচার ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং,মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বা অন্য গ্যাং এর সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। “কিশোর গ্যাং”অলিগলি রাস্তায় স্কুল-কলেজের মোড়ে দলবেঁধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, গোলমাল করা,মদ বা বিয়ার বা সিগারেট সেবন ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করা,তারা সবাই সেইম হেয়ার কাটিং,পড়াশোনা ছেরে দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মগুলা একসাথে তালমিলিয়ে করে থাকে।

এই কালচারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্কুল-পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যকার সিনিয়র-জুনিয়রদের দ্ব›দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা, মাদক, নারী নির্যাতন এমনকি খুন-খারাবির প্রবণতা। মুন্সীগঞ্জে অনেক গ্রামে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং যারা মাদক সেবনে,বেয়াদবিতে,মারামারি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে প্রতিটা গ্রামে আতঙ্ক হয়ে গড়ে উঠছে যার ফলে প্রতিটা শিশু বা কিশোর ধ্বংস হচ্ছে অচিরেই এবং পরিবারগুলাও অনেক ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। এর পেছনের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’দের স্বার্থের প্রশ্রয়। আজকের কিশোর গ্যাং আগামীদিনের বড় সন্ত্রাসী! সুতরাং এখনই এই কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে হবে।

আর এই কিশোর গ্যাং বন্ধ করা একা সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সম্ভব নয়।এর জন্য প্রয়োজন পরিবারিক,সমাজিক,রাষ্ট্রীয় সচেতনতা তাই এ হীন কালচারের শেকড় উপড়ে ফেলার বিকল্প নেই। কারণ বেপরোয়া গ্যাং সদস্যরা যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। সামাজিক অবক্ষয়, সমাজ পরিবর্তন এবং সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি এবং অস্বাভাবিকতায় খেই হারিয়ে ফেলছে সমাজের কিশোর এবং তরুণেরা।এরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাÐের সাথে। এই কিশোরেরা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তুলছে।

ওই সমাজের সংস্কৃতি, ভাষা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সবকিছু আলাদা। এরা বিভিন্ন নামে গড়ে তুলছে অদ্ভূত এবং মারাত্মক ‘কিশোর গ্যাং’। যার ফলে সংঘটিত হচ্ছে নানাবিধ অপরাধ। আধিপত্য বিস্তারের নেপথ্যে মারামারি, ছিনতাই, চুরি, পাড়া বা মহল্লার রাস্তায় মোটরসাইকেলের ভয়ঙ্কর মহড়া, মাদক এবং ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, চাদাঁবাজি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এমনকি খুনখারাবিসহ বিভিন্ন হত্যাকাকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ভবিষ্যত সমাজের অপার সম্ভাবনাময়ী এসকল গ্যাং-এর তরুণ এবং কিশোর সদস্যরা।

তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্কতা, অর্থলোভ, শিক্ষাব্যবস্থার ঝুঁকি এবং পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ায় তাদের সামাজিকীকরণ ও মানসিক বিকাশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে সমাজের বিভিন্ন গ্যাং কালচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে কিশোরেরা। যেখানে শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণের প্রথম ধাপ ছিল পরিবার কিন্তু আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সেখানে তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্যোশাল মিডিয়া। বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বা তথ্যপ্রযুক্তি কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ।

তথ্য-প্রযুক্তির কারণে শিশু-কিশোরদের নৈতিক স্খলন হচ্ছে। আমাদের দেশে গ্রামের তুলনায় শহরের শিশু-কিশোররা পরিবার থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। এর ফলে তারা মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিকভাবে কিশোরদের ব্যবহার করার কারণেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টিকটক এবং লাইকিতে বিভিন্ন ধরনের কিশোর গ্যাং-এর পদচারণা এবং তাদের কর্মকাণ্ড সহজেই দৃশ্যমান হচ্ছে সমাজের মানুষের নিকট। তথ‍্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাবা মা তাদের সন্তান শাসন না করায় ওরা নির্ভয়ে কিশোর গ‍্যাং গড়ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন :