আলাউদ্দীন জিহাদ (ফেনী) সোনাগাজী প্রতিনিধি : সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সাড়ে ১৭ একর সুবিশাল জায়গার মধ্যে অবস্থিত বৃহত্তর নোয়াখালীর ৭৪বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠালাভ করা শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম আল হোসাইনীয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসা।
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা কওমী মাদ্রাসাাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা কমিটির অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম মাওলানা হাকীম আব্দুল হক। যিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনও করছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা কমিটিতে মরহুম মাওলানা ফজলুল হক, ওলামা বাজারের পাশেই মরহুম আবুল খায়ের সওদাগর, সোনাগাজী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পাটোয়ারী বাড়ীর মরহুম হাফেজ ইলিয়াস, মরহুম মতিউর রহমান।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মোহতামীমের দায়িত্ব পালন করছেন শায়েখ মাওলানা ফজলুল হক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মোহতামীম ছিলেন, আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, আলহাজ্ব মাওলানা ছাইয়েদ আহম্মেদ।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এপর্যন্ত ৬৩ ব্যাচ দাওরাহ্ হাদীস শেষ করেছে। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মোহতামীমের দায়িত্বপালন করছেন সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল ইসলাম আদীব। তিনি গত ১৯৫৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করে ২০১৬ সালেের ৪ঠা ডিসেম্বর মোহতামীমের দায়িত্ব পাওয়ার পর অধ্যবদি সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানের দেখবাল করছেন। এছাড়াও হাফেজ আবু নাছের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিষ্ঠানে বতর্মানে আরবী, আরবী ভাষা, উর্দূ ও ফার্সি ভাষা , নাজেরা, ক্বিরাত ও তাজবীদ, হিফ্জ ও হস্তলিপি বিভাগের নুরানীর প্লে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, কিতাব বিভাগের ইয়াজ দাহুম, দাহুম, নাহুম, হস্তুম, হাপ্তুম, সশুম, পাঞ্জুম, সাহরাম, সুয়াম, মেশকাত, দাওরাহ ও ইফতাহ ক্লাসে প্রায় ১হাজার পাঁচশত শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। যাদের শিক্ষার মানদন্ড তৈরীতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয় প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা (জিপিএ ফাইভ) মোমতাজ পাবে তাদের জন্য সকালের নাস্তা একদম ফ্রি, এবং অন্যদের চেয়ে স্পেশাল খানার ব্যবস্থা, পাক্ষিখ সেমিনার, মাসিক পরামর্শমূলক বৈঠক, বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা, প্রতি সপ্তাহে মসজিদেও হাজিরার ব্যবস্থা ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠান সার্বিক পরিচালনার জন্য ২১সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে সূরা (পরামর্শ পরিষদ) রয়েছে। যাদের মধ্যে অন্যতম সদস্যরা হলেন, দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মোহতামীম আল্লামা আহমদ শফী, ঢাকা যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মোহতামীম মাহমুদুল হাসান, প্রতিষ্ঠানের মোহতামীম নুরুল ইসলাম আদীব, শায়েখ জাকারিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান, ফেনীর রশীদিয়া মাদ্রাসার মোহতামীম মূফতি শহিদুল্লাহ প্রমুখ উনারা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে থাকেন। ১৬ সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে আমেলার (কার্যনির্বাহী পরিষদ) উল্লেখযোগ্য সদস্য হলেন, প্রতিষ্ঠানের মোহতামীম নুরুল ইসলাম আদীব, নায়েবে মোহতামীম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শিক্ষা সচিব হাফেজ মাওলানা আবুল হাসান আব্দুল্লাহ সহকারী মোহতামীম মাওলানা মোজাম্মেল হক, মানিক মিয়া প্লাজার সত্ত্বাধিকারী হাফেজ মহি উদ্দিন, সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, হাজী আশ্রাফ উদ্দিন লন্ডনী, শাহাদাত হোসেন কায়েস চৌধুরী প্রমুখ। এই কমিটির দায়িত্বশীলরা মজলিশে সূরার অনুমোদন করা কাজ গুলো বাস্তবায়ন করেন। এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে ইলমী (শিক্ষা পরিষদ) প্রতিষ্ঠানের মোহতামীম নুরুল ইসলাম আদীব সহ শিক্ষক মন্ডলী রয়েছেন।
প্রাচীনতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে ১টি টিন সেট, ৬টি দো-তলা, ২টি তিন তলা, ১টি চার তলা, মেহমান খানা ১টি তিন তলা, মসজিদ ২টি, পুকুর দুইটি, টয়লেট ও প্রশ্রাাবখানা প্রায় ২০০টি ও টিউবওয়েল ১০টি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক ব্যয় বিশাল অংকের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের বেতন টাকা, বিদ্যুৎ বিল ও বৃহত্তর একটি অংশ খানায় ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠানটি এরপরও থেমে নেই দেশবিদেশ থেকে আসা অর্থ দিয়ে চলছে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি। বাৎসরিক কিছু ঘাটতি থাকলেও তা পরবর্তীতে পূরণ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য রয়েছে ৩৫০জন, যাকাত-ফিতরাহ, লন্ডন, সৌদি, আবুধাবি, মাদ্রাসার জমি ও দোকান ঘর ভাড়া, সোনাগাজী পৌরসভাস্থলে ৪তলা বিশিষ্ট এতিমখানা ভবন এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরে ৫তলা বিশিষ্ট বিছ্মিল্লাহ টাওয়ারের ভাড়া হলো প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়ের উৎস।
প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠান করে সুনাম কুড়িয়েছেন। এবং অনেকেই নামকরা প্রতিষ্ঠানের মোহতামীমের দায়িত্ব পালন ও জনপ্রতিনিধি থেকে বিভিন্ন স্তরে আসিন হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। ঢাকা মধুপুরের পীর সাহেব ও মধুপুর হালিমিয়া (ইফতা) মাদ্রাসার মোহতামীম মূফতি আব্দুল হামিদ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের শায়খুল হাদিস আল্লামা হারুন বুখারী, মালিবাগ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা আবু সাবের মুহাঃআব্দুল্লাহ, ঢাকা আল হাইয়াতুল উলিয়ার সভাপতি ও ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মোহতামীম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, ঢাকা ইসলামবাগ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও মোহতামীম মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, বসুরহাট আব্দুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামীম আলহাজ্ব মাওলানা মোস্তফা (সুফি সাহেব), চরচান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন, ইনটেক প্রোপার্টি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফখরুল ইসলাম লন্ডনী, হীরা কনফেকশনারির সত্ত্বাধিকারী হাফেজ আকরাম সহ অসংখ্য গুনীজনের বিদ্যাপীঠ হিসেবে দারুল উলুম আল হোসাইনীয়া উলামা বাজার মাদ্রাসাটি সুনাম এখনো অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি শুধু দুনিয়াবী নয় আখেরাত ও দুনিয়ায় যেভাবে চললে মহান আল্লাহ খুশি হোন সেভাবে চলবার কুরআন-সুন্নাহ মতে পথ দেখায়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝেও গভীর সম্পর্ক জ্ঞাত লক্ষ করা যায়। সম্মান প্রদর্শন, আমলেও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। সবার অবস্থান থেকে প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি যুগযুগ মাথা উঁচু করে দাড়াতে সক্ষম হবে।
প্রতিষ্ঠানের মোহতামীম শায়খুল হাদীস আল্লামা নুরুল ইসলাম আদীব সাহেব বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আল হোসাইনীয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসা। আমাদের প্রতিষ্ঠান সবসময়ই শৃঙ্খলীত। ছাত্রদের আদব-কায়দা থেকে শুরু করে কুরআন-হাদীসের নির্দেশিত আদর্শ পথে চলার মত শিশু থেকে যোগ্য আলেম হিসেবে তৈরী করে দেশ মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করার সঠিক পথে প্রদর্শিত করা সহ এতিম-অসহায় পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশের আর্থিক সহযোগিতায় আল্লাহর রহমতে অতদুর এগিয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের ভালোবাসা রয়েছে অতুলনীয়। সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় দারুল উলুম আল হোসাইনীয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসাটি যুগযুগ ধরে সুউচ্চ স্থানে আসীন হবে, ইনশাআল্লাহ।
সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন মিলন জানান, সোনাগাজী উপজেলার সব দিক থেকে বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো দারুল উলুম আল হোসাইনীয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসা। সূচনালগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সহিত অগ্রসর হওয়ায় স্থানীয়রাও মাদ্রাসাটির প্রতি খুবই আন্তরিক। আমি নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলাম। এত বড় প্রতিষ্ঠানটি আমার ইউনিয়নে হওয়াতে নিজেও খুব আনন্দিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখি শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের শ্রদ্ধাবোধ। আমি সবসময়ই প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি কামনা করি।