শিরোনাম

সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে বেফাক

 

ওলামা ডেস্কঃ
সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক
দেওবন্দের নীতি বিসর্জন দিয়ে কোন কওমি মাদরাসা সরকারি অনুদান গ্রহণ করতে পারে না জানিয়ে দেশের কওমি মাদরাসাসমূহকে সরকারি যে কোন অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশের ৬,৯৫৯ টি কওমী মাদ্রাসাকে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আজ ২ মে বেফাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মজলিসে খাসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।

বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিক সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকারি অনুদান গ্রহণ, কওমি মাদরাসার দেড়শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি আদর্শকে বিসর্জন দেয়া।

তাই এ ধরনের অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সকল কওমী মাদরাসার দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান জানানো হয়।

বেফাক নেতৃবৃন্দ বলেন, উপমহাদেশব্যাপী বিস্তৃত কওমী মদরাসাসমূহ ভারতের বিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি-আদর্শ ও শিক্ষাক্রম অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়ে আসছে। দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠাকালে অলঙ্ঘনীয় যে ‘উসূলে হাশতেগানা’ তথা আট মূলনীতি নির্ধারণ করে, তার অন্যতম একটি হলো ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকারী অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং এই মূলনীতিকে বিসর্জন দিয়ে দেশের কোনো কওমি মাদরাসা সরকারী অনুদান গ্রহণ করতে পারে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়- অতীতেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কঠিন সংকটকালীন সময়ে আমাদের পূর্বসূরিরা অনুদানের জন্য সরকারের দ্বারস্থ হননি। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন অনুদান গ্রহণ উচিত হবে না।

বেফাত নেতৃবৃন্দ আরও বলেন- এই উপমহাদেশে ইসলাম, মুসলমান তথা দ্বীনের হেফাজতের জন্য আকাবির ও আসলাফগণ এক কঠিন পরিস্থিতিতে যে ৮ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার হুবহু ঐ মূলনীতিসমূহের ভিত্তিতেই কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং স্বীকৃতি সংক্রান্ত আইনের ২(১) ধারায় কওমি মাদরাসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে “মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহীর শিক্ষা কেন্দ্রই হলো কওমী মাদরাসা। তাই ঐতিহাসিক সেই মূলনীতি এবং কওমী মাদরাসার সংজ্ঞাকে উপেক্ষা করে আমরা কোনোভাবেই সরকারি অনুদান গ্রহণ করতে পারি না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কওমী মাদরাসার দায়িত্বশীলদের প্রতি বিশেষ আহবান, ক্ষণিকের সঙ্কট উত্তরণে সরকারি অনুদান গ্রহণ করে অনন্তকালের কুদরতি সাহায্যের রাস্তা বন্ধ করবেন না। আল্লাহ পাকের উপর দৃঢ় ভরসা রাখুন, করোনার মহামারি থেকে বিশ্ববাসী ও মুসলিম উম্মার মুক্তির জন্য দোয়া জারি রাখুন। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা আমাদের হেফাজত করবেন, ইনশাল্লাহ।

বৈঠক থেকে বেফাকের সম্মানিত সভাপতি আল্লামা আহমদ শফি দা:বা: এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা ছফিউল্লাহ, মাওলানা মাহফুযুল হক, মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, মাওলানা মুফতি নূরুল আমিন, মাওলানা মনিরুজ্জামান প্রমূখ।

নিউজটি শেয়ার করুন :