বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গর্ব সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ স্যার দক্ষ- চৌকস ও বিনয়ী ছিলেন। স্যারকে পুলিশ সুপার হিসেবে এখনও মনে রেখেছেন কুড়িগ্রামবাসী। স্যারের নাম শুনি পুলিশে আসার পর পরই। একাডেমীতে মাঝেমাঝেই বিভিন্ন আলোচনায় আসতো স্যার কবে আইজিপি হবেন। স্যার আইজিপি হলেন আমরা তরুন অফিসারেরা আশান্বিত হই। পুলিশ আরো বদলে যাবে। একদিন পুলিশ হেকো এ আমাদের ২৪ এর পুরো ব্যাচকে ডেকে নিয়ে অনেক কথা বললেন, পেশাদার, নির্লোভ পুলিশ হতে কি করতে হবে; কিছু উদাহরন দিলেন তরুনরা কিভাবে ভুল করে, ভুল পথে পা বাড়ায়।
ডিউটিরত অবস্থায় পুলিশ সুপার
স্যারের সাথে সরাসরি কথা হয়নি কখনও কারন তিনি যখন আইজিপি, আমি তখন এএসপি মাত্র; মাঝেমধ্যে ডিএমপি তে বড় কোন মিটিং অথবা পুলিশ হেড কোয়ার্টাসে গেলে স্যারের দীর্ঘ, একহারা দেহ, মাথাভর্তি কাচাপাকা চুল আর প্রখর ব্যক্তিত্ব , বলিষ্ঠ সাবলীল কন্ঠস্বর শুনি, দেখি, আর অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি; মনে মনে নিজেকে বলি আমরা কবে এমন হতে পারবা!! স্যারকে আরো কাছ দেখেছি বিডিআর বিপর্যয়ের সময় লিজের বযক্তিগত শোককে পাশ কাটিয়ে কিভাবে পুলিশ প্রধান হিসেবে সেই জাতীয় বিপর্যয়ের মোকাবেলা করেছিলেন। বিডিআর ট্রাজেডী শুধু বাংলাদেশের নয়, স্যারের ব্যক্তিগত জীবনেরও অন্যতম ট্রাজেডী।
ফ্যামেলীর সাথে পুলিশ সুপার
ব্যক্তিগতভাবে স্যারের সাথে কখনও কথা না হলেও কাকতালীয়ভাবে স্যারের কিছু স্মৃতির সাথে জড়িয়ে গেছে আমার কিছু সময়। নারায়নগন্জে আমি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলাম, স্যারও সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন; এডিশনাল এসপির সরকারী বাংলো টা অনেক পুরনো, সেই পাকিস্তান আমলের , যেটা এক সময় পুলিশ সুপারের বাংলো ছিল; উপর তলার একটা অংশ স্যার সংস্কার করে সাজিয়েছিলেন, সেই একই ঘরে এক বছর থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আরো বড় সৌভাগ্য কুড়িগ্রাম জেলার একই অনার বোর্ডে পুলিশ সুপার হিসেবে স্যারের নামের সাথে নিজের নাম ঠাই পাওয়া।
এখানে যারা বয়োজেষ্ঠ্য নাগরিক, সাংবাদিক আছেন তাদের সাথে দেখা হলে আমি বলি নূর মোহাম্মদ স্যারের গল্প বলেন, তাদের কাছেই জেনেছি প্রায়ই সন্ধ্যায় স্যার লাল রঙের টি শার্ট গায়ে একটা সাইকেল নিয়ে একা একা বের হতেন এলাকার অবস্থা দেখতে, খবূ বেশীদিন ছিলেন না কুড়িগ্রামে; এক বছর মাত্র; এখনও কুড়িগৃামের সকলেই এসপি নূর মোহামেমদ স্যার কে মনে করে, একজন মানুষ হিসেবে, পুলিশ সদস্য হিসেবে; এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি থাকতে পারে?
আমি এখানে আসার পর আমার পুরাতন অফিস স্টাফদের জিজ্ঞেস করি কেউ স্যারের সাথে কাজ করেছে কিনা, স্যার কিভাবে কাজ করতেন, কি কি দেখতেন; দুর্ভাগযক্রমে সে রকম কেউ নেই;তাই অনেক গল্প জানা হয় না; কুড়িগ্রামের কারও স্যারের সাথে কোন স্মৃতি থাকলে শেয়ার করবেন প্লিজ; আরেকটা কাকতালীয় মিল স্যার আমার শ্বশুরবাড়ীর আসন পাকুল্দিয়া, কিশোরগন্জের মাননীয় সাংসদ। এখানে আসার পর মাঝে মাঝে স্যারের পোস্টে কমেন্ট করলে স্যার যখন উত্তর দেন, খুশীতে আমি ঝলমল করি , Shahrina Jahan কে দেখাই , মূলত কনার ফ্রেন্ড লিস্টেই প্রথমে স্যারকে পাই; স্যার দুই একবার মেসেনজারেও আমার মেসেজের উত্তর দিয়েছেন এত ব্যস্ততা নিয়েও।
পুলিশে আমার যদি প্রথম কোন আইডল থাকে তাহলে তিনি শ্রদ্ধেয় নূর মোহাম্মদ স্যার। আজকে স্যারের জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা; অপেক্ষায় থাকলাম এরপর কোন অনুষ্ঠানে দেখা হলে স্যারের সাথে একটা ছবি তোলার।
শুভ জন্মদিন স্যার।
লেখকঃ মহিবুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম।