শিরোনাম

হাফিজুর রহমান-শরিয়তপুরী নিজেকে নিজে কন্ট্রোল করুন: কে. এম. নূহু হোসাইন

স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে যুগশ্রেষ্ঠ ওলামায়ে কেরামদের সাথে রাজনৈতিক দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষে-বিপক্ষে বিরামহীন আলোচনা- সমালোচনা চলছেই। বিএনপি দলীয় থেকে ভাস্কর্য ইস্যুতে কথা না বললেও ওলামাদেরকে মৌলবাদী খেতাব দেওয়া ও তাদেরকে কটুক্তি করতে ভুলে যাননী! একই ইস্যু নিয়ে নিমিডিয়াপাড়ায় টকশোর আলোচনা নামে আলেম সমাজের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার সারাক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বামপন্থী নাস্তিক্যবাদীরাও বসে নেই। ইসলামধর্ম ও আলেমদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বক্তৃতায় বলেছেন, মৌলবাদীদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। অথচ জামাতে ইসলামসহ কয়েকটি দল নিয়ে চার দলীয় ঐক্যজোট জোট গঠন করে ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এখনও জোটে আছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলেমদের নিয়ে টকশোতে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে নিজেকে নাস্তিক প্রমাণ করেছেন। আসলে তাদের মাথা এখন ঠিক নেই, কোন সময় কি বলেন তা নিজেরাই জানেন না।

দেশের হক্কানী আলেম সমাজ বঙ্গবন্ধুর বিরোধী নয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়, স্বাধীনতার মহানায়ক ও ইসলাম প্রিয় তৎকালীন যুগের বাংলার বাঘ। এই কথা দেশের সমস্ত ওলামায়কেরামগণ হাজারবার স্বীকার করেন এবং শ্রদ্ধাও করেন। যারাই বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করবেন, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।
ওলামায়ে কেরামগণ পূর্বে থেকেই বলে আসছেন ভাস্কর্য- মূর্তি একই জিনিস, যা শরীয়ত সম্মত নয়।

সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বুঝাতে চেয়েছেন ভাস্কর্য মূর্তি এক নয়, সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে সরকার ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আলেম সমাজের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করতেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে প্রথম ধাপে আলোচনা বৈঠকও হয়েছে। সরকারের প্রতি দোয়া থাকলো যাতে আলেম সমাজের ব্যান্ডেড বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং চলমান সঙ্কট নিরসন হয়। সকলেই বঙ্গবন্ধুর সম্মান চায়। তাঁর মাথায় কাকে পায়খানা করবে বা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্য সরকার এসে ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলাকে আলেমসমাজ বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হবে, বুঝিয়েছেন।

এদিকে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে ভক্তাগনের মধ্যে তর্ক- বিতর্ক ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কোরআন-হাদিসের পক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বা কোন নামিদামি আলেমের ইজ্জত রক্ষা করতে অন্য অন্য বক্ত বা আলেমেদ্বীনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হচ্ছে। যেটা আলেম সমাজ মেনে নেওয়ার মতন নয়। বক্তাদের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে ফেসবুকে তাদের ভক্তরা রীতিমতো গালাগালীতে কেহ পিছিয়ে নেই। মাও. হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ভাস্কর্য নিয়ে মাহফিলে যে বক্তব্য করেছিলেন, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঠিক হয়নী। বক্তব্যগুলী সরাসরি ভাস্কর্যের পক্ষে চলে গেছে। তার উচিত ছিল পরের মাহফিলে ত্রুটি গুলো শুধরে নেওয়ার। অপরদিকে আল্লামা মামুনুল হক এবং ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাও ঠিক হয়নী।

সিদ্দিকীর বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ও এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর পক্ষ নিয়ে মাও. আব্দুল খালেক শরিয়তপুরী মাহফিলে পরপর দুটি বক্তব্য করেছেন, তা নিন্দনীয় যা ধৃষ্টতার শামীল। একজন দ্বীনের দায়ী অন্য একজন দ্বীনের দায়ীর সম্মান রেখে ভুল সুধরে দিবে। এটাই রাসুলের মূল আদর্শ বা কোরআন- হাদিসের ভাষ্য।ব্যক্তিকে আক্রোশ মূলক হেনস্থা করে অসম্মান করা ও মনে কষ্ট দেওয়া শরীয়তে জায়েজ নেই। হারাম- (হাদীস শরীফে এসেছে এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না স্বরুপ)। হাফিজুর রহমান ও শরিয়তপুরী আপনারা নিজেকে নিজে কন্ট্রোল করুন, অন্যথায় নিজেদের কৃতকর্মের কারণে নিজেরাই ধ্বংস হবেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাস্তিক্যবাদীরা সব একজোট হয়েছে। দ্বীনের এমনই ক্লান্তিলগ্নে দেশের সমস্ত ওলামায়ে কেরামগণদের দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এক প্লাটফর্মে আসা ফরজে আইন হয়েছে। কিন্তু তা না করে দলে দলে কাদা ছোড়াছুড়ি আর ঘূষাঘূষি করতেছে। এটা ইসলামের জন্য কত বড় ক্ষতি, সেটা লিখে বুঝানো যাবেনা। সুন্নি ওহাবী জামাতী তাবলীগী ভাগাভাগী করার এখন সময় নেই। ইসলামের জন্য সকলকে এক প্লাটফর্মে এসে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অন্যথায় দলে দলে মার খেতে হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব একজন বড় মাপের আলেম তা কারও অজানা নেই। তবে- তিনি ভুলের জগতে ছিলেন একথাও সত্য। তাঁর ভুল তিনি নিজেই সুধরে নিয়েছেন। বলেছেন আমরা সকলে আকিদাগত ভাবে এক হয়ে যাব। আমাদের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব থাকবে না। তাকে অভিনন্দন জানাই। এক সময় আমিও আব্বাসী সাহেবের বিপক্ষে কথা বলেছি। শুধু আমি কেন এদেশের আলেমরাও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তার ব্যক্তিগত কিছু কার্যকলাপের জন্য। তার ফতুয়ার দ্বারা কিছু আলেম কাফের হয়ে গিয়েছিল। জানি না তারা এখনও কাফের আছেন কিনা তা আব্বাসী সাহেব ভালো জানেন। এটাই ছিল তাঁর একতরফা ফতুয়া।

তাঁর কাফের ফতোয়ায় কেউই রেহাই পাইনী যেমন- আল্লামা আহমদ শফী (রহ.), চরমোনাইর পীর সাহেব দ্বয়, ছারছীনার পীর সাহেব, আল্লামা মামুনুল হক, মাও. হাফিজুর রহমান, মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ, ড. মিজানুর রহমান আজহারী, মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী সহ আরো অনেকে। যার কারণে সমস্ত আলেমরা তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। পূর্বের কার্যকলাপ থেকে সরে আসার কারণে ঐ সমস্ত আলেমগণই এখন আব্বাসী সাহেবকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন।

তবে লাইভ প্রোগ্রাম করে আব্বাসী সাহেবকে পূর্বের সমস্ত বিষয়ের উপর দুঃখ প্রকাশ করে হক্কানী আলেমদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করবে এই আশা নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ইসলামের শক্তি আরো দ্বিগুন বেড়ে যাবে। যার প্রমাণ- অঘোষিত নাস্তিক শাহরিয়ার কবিরকে ধোলাই করেছেন, যেটা কোন আলেম করতে পারেননী। তিনি ভাস্কর্য বিষয়ও জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। সকল আলেমদের একতা দেখে নাস্তিকদের কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। অতএব আসুন এক বক্তা অন্য বক্তাকে আক্রোশমূলক অসম্মানজনক অসৌজন্যমূলক আচরণ করবেন না। তাতে সে যে কোন দলেরই বক্তা হোক না কেন।

লেখক– সাংবাদিক, কলামিস্ট, মানবাধিকারকর্মী ও সম্পাদক দৈনিক ওলামা কণ্ঠ

নিউজটি শেয়ার করুন :