শিরোনাম

(১ম খন্ড অনুগল্প) একজন রিক্সাচালকের দুঃস্বপ্ন- ৩য় অংশ: মোস্তফা হারুন, সহ. পুলিশ সুপার

 

ওহ! হ্যাঁ যা বলছিলাম। যানজট ও জ্যাম কমানোর জন্য আমার একটি মহা পরিকল্পনা আছে তা হচ্ছে এমন, ধরুন ঢাকা শহরে সকল অফিসের প্রধান অফিস,সচিবালয়, মন্ত্রণালয় ইত্যাদি থাকার কারণে সকল জেলা থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঢাকায় আসতে হয় সরকারি কাজে,বেসরকারি কাজে,ব্যাক্তিগত কাজে।

যার কারণে ঢাকার উপর দিয়ে বাইরের জেলার লোকজনের ধকল চলে। এতে করে ঢাকার বাড়ীভাড়া বেড়ে যায়, যানবাহনের ব্যয় বেড়ে যায়,জীবন যাত্রার মান বেড়ে যায়,নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থাৎ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। সবাই ঢাকা মুখী হতে চায়। ঢাকায় বাড়ী গাড়ী করার চিন্তা চেতনা সবার ভিতর পেয়ে বসে। তাই আমি ঠিক করেছি,দেশের সকল বিভাগীয় শহরকে আধুনিক কাঠামোর আদলে সাজিয়ে ফেলবো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ঢাকায় রেখে বাকি সব মন্ত্রনালয় সকল বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরিত করে দিব।

সকল ব্যাংকের প্রধান অফিসও বিভিন্ন বিভাগে পাঠিয়ে দিব। ঢাকায় শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংক গুলির প্রধান অফিস থাকবে। এভাবে অন্য অফিস গুলিকেও বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরিত করে দিব। তাতে করে মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবনতা কমে যাবে। অটোমেটিক্যালি ঢাকার বাসা ভাড়া, আবাসিক হোটেল ভাড়া,বাজারের দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আগের সরকার গুলির ভিতর কেন যে এসব চিন্তাভাবনা কাজ করেনি বুঝতে পারিনা। এসব করলে বিভাগীয় শহর গুলিও রাজধানীর মত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

উপস্থাপকঃ স্যার,সত্যই আপনার পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। আমাদের পুলিশ বাহিনী নিয়ে জনমনে একটি বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।এ ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা আছে কি?

প্রধানমন্ত্রীঃ এটা একটা জটিল প্রশ্ন করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেও পুলিশ নিয়ে অনেক কথা শুনেছি এবং শুনতে হয়েছে। দেখুন ধানের ভিতর যেমন চিটা ধান আছে,ঠিক পুলিশ সহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টেও ভাল অফিসারের ভিতর খারাপ অফিসার ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে। এই খারাপদের কারণে পুরা পুলিশ বাহিনীকে অপবাদ সহ্য করতে হয়। পুলিশের খারপদের চিহ্নিত করে তাদের গুরুত্বহীন জায়গায় পদায়ন করা হবে।

আর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অপেক্ষাকৃত ভাল অফিসারদের পদায়ন করা হবে। কোন সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে চাকুরীচ্যুত করা হবে। অনেক সময় পুলিশের ভিতর দলাদলি দেখা যায়, এটা শক্ত হাতে দমন না করতে পারলে দলের ছত্র ছায়ায় খারাপ অফিসারগন মুল্যায়িত হয় বেশ অথচ তা হবার কথা নয়। পুলিশের আলাদাভাবে সম্পদের হিসাব প্রতিবছর নেওয়ার ব্যাবস্থা রাখা হবে।

সম্পদের বৃদ্ধি সম্পর্কে যথাযথ ব্যাখ্যা না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে মামলার ব্যাবস্থা করা হবে। পুলিশ হলো সমাজের আসল চিত্র। যেদেশের পুলিশ ভাল সেদেশের রাষ্ট্র ব্যাবস্থাও ভাল। পুলিশের পাশাপাশি জনগনের ভিতরও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যেদেশের জনগন শিক্ষিত, সচেতন এবং আইন মান্যকারী সেদেশের পুলিশ ভাল হতে বাধ্য। পুলিশ জনগনের সেবক, শাসক নয়। তাই তাদেরকে সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে যা করার তাই করবো ইনশাআল্লাহ। ইদানীং লক্ষ করেছি পুলিশের ভিতর ক্যাডার ও নন ক্যাডার নিয়ে চাপা দন্দ্ব কাজ করছে।

তাই ভিতরের কোন্দল ঠিক করতে পুলিশের তিনটা পদে নিয়োগের ব্যাবস্থা বাতিল করে দিব। দুটি পদে নিয়োগ দেয়া হবে প্রথমটি হলো কনস্টেবল পদে যারা পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক পদে যেতে পারবে,দ্বিতীয়টি হলো বিসিএস ক্যাডারে সরাসরি এ এস পির জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক পদে নিয়োগের ব্যাবস্থা করবো। পুলিশ পরিদর্শক পদটি ক্যাডার পদ হবে যেটা বি সি এসের মাধ্যমে নিয়োগ হবে। সরাসরি এস আই পদে নিয়োগ চিরতরে বন্ধ করে দিব।

কারণ তারা সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় এবং তাদেরকে নিয়েই যত সব গুঞ্জন।সরাসরি এস আইরা পদোন্নতির দিক থেকে তারা এগুতে পারেনা কোন রকমে এ এস পি হতেই চাকুরির বয়স শেষ হয়ে যায়।
কেউ কেউ তো ইন্সপেক্টর প্রযন্ত যেতেই রিটায়ার্ড এর বয়স হয়ে যায়। ক্যাডার এ এস পিদের সাথে তাদের বনাবনিও হয়না। তাই সরাসরি এস আই পদে নিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হলে আর এই কোন্দল থাকবেনা আশা করি। আমি বোঝাতে চেয়েছি সেনাবাহিনীর আদলে কমিশন্ড ও নন কমিশন্ড পদে নিয়োগ হবে।

প্রতিটি জেলায় পুলিশ হাসপাতালকে পরিপূর্ণ ৫০০ বেডের হাসপাতালে রুপ দেয়া হবে সেনাবাহিনীর মতো করে এবং পুলিশ মেডিকেল কোর নামে সরাসরি ডাক্তারদেরকে বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। যেখানে সাধারণ জনগনও চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে। পুলিশ, জেলা প্রশাসন, মন্ত্রীদের প্রটোকল ও আবাসন নিয়ে আমার কিছু অবজারভেশন আছে, সেসব নিয়ে আমি সব শেষে আমার অভিমত তুলে ধরবো।

উপস্থাপকঃ স্যার,শোনা যায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে সেবা পায়না এবং সরবরাহকৃত ঔষধ পায়না,এ ব্যাপারে আপনার পদক্ষেপ কি হবে?

প্রধানমন্ত্রীঃ দেখুন এটাও পুরাতন অভিযোগ। দেশে ডাক্তারের অভাব আছে হাসপাতাল গুলিতে। অচিরেই ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে। হাসপাতালে মনিটরিং বাড়ানোর জন্য শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। তারা মাঝেমধ্যেই হাসপাতাল গুলিতে ঝটিকা সফর করবে। হাসপাতালের ঔষধের স্টক মিলিয়ে দেখবে যাতে চোরাপথে ঔষধ পাচার হয়ে না যায়।প্রকৃত ভাবেই যাতে রোগীদের হাতেই ঔষধ পৌঁছে সেজন্য ঐ কমিটি নজরদারি করবে।

ডাক্তারকে অফিসে অনুপস্থিত পেলে ঐ কমিটি সরাসরি ডাক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত সহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সেই কমিটি অভিযুক্ত ডাক্তারকে চাকুরীচ্যুত করার অধিকার থাকবে। অফিস টাইমে এবং ডিউটির সময়(দিনে অথবা রাতে) তারা বাইরে কোন প্র‍্যাকটিস করতে পারবেনা। বাইরে প্র‍্যাকটিস বন্ধ করতে সরকারে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। যার অনুমোদন থাকবে না,সে বাইরে প্র‍্যাকটিস করতে পারবেনা। আমি প্রথমেই বলেছিলাম সরকারি চাকুরীজীবিদের আগে ভাল করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হবে।সেটা করতে পারলে এসব সমস্যা কেটে উঠা সম্ভব।

ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্ন্টেটিভদের হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে প্রবেশের অধিকার বন্ধ করে দিব। এরা ডাক্তারদের প্রলোভন দেখিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। এদের দৌরাত্ম কমাতে না পারলে ডাক্তারদের সময় এরাই নষ্ট করে বেশি,রোগীরা এদের কারনেই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। আসলে এই দেশকে একটি সিস্টেমে আনতে গেলে সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে। আমি চেষ্টা করবো সবাইকে সাথে রাখার জন্য।

উপস্থাপকঃ সবাইকে বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়,সবাইয়ের ভিতর কি অপজিশন দলের লোকেরাও থাকবে?
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :