শিরোনাম

(২য় খন্ড অনুগল্প) একজন রিক্সাচালকের দুঃস্বপ্ন- ১ম অংশ: মোস্তফা হারুন, সহ. পুলিশ সুপার

 

প্রতিদিনকার মতো গফুর রিক্সা নিয়ে বের হয়েছে।সারাদিন রিক্সা চালানোর সময় রাতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন তাকে বিভোর করে রেখেছে। আর ভাবছে আহা,আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হইতে পারতাম। দেশ ও দশের উপকারের জন্য নিজেকে বিলাইয়া দিতাম। গফুরের মনে প্রশ্ন জাগে ক্ষমতায় গেলে কেন রাজনীতিবিদগন জনগনের কথা মনে রাখেনা?

অথচ ভোটের সময় এলে, জনগণের দরজায় দরজায় নেতাদের ভিক্ষুকের মতো ভোট ভিক্ষা করতে লজ্জাও করেনা।
মিথ্যা স্বপ্ন দেখায় তারা জনগনকে। আর জনগণ তাদের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হইয়া থাকে,নেতাদের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসও করে। যেইনা হেরা ক্ষমতায় যায়,আর হেগো টিকিও খুইজাই পাওয়া যায়না।
নেতার সাথে দেখা করতে গেলেও নেতার চামচাদের পিছন পিছন ধরনা দিইতেই ৫/৬ দিন লাইগা যায়। কখনো কখনো টেহাপয়সাও দেয়া লাগে চামচাদের। তবুও যদি নেতার দেখা মেলে।

সারাদিন রিক্সা চালিয়ে গফুরের মাত্র ৫০০ টাকা রোজগার হয়েছে আজ। মালিকের জমার টাকা দিয়ে হাতে থাকবে মাত্র ৩০০ টাকা। এরমধ্যেই বাজার করে নিয়ে যেতে হবে। বাচ্চার খাতা কলম কিনতে হবে। গফুরকে খুব ক্লান্ত লাগছে। তাই পড়ন্ত বিকেলে রাস্তার ধারে একটি পিঠার দোকানে বসেছে বিকালের নাস্তা সাড়ার জন্য। রাত ১০ টা প্রযন্ত রিক্সা চালাবে যাতে জমা বাদে ৫০০ টাকা ঘড়ে নিয়ে যেতে পারে।

ইব্রাহিমপুর জামিউল উলুম মাদ্রাসার সামনে পিঠার দোকানে বসে ২ টা চিতই পিঠার ডিমান্ড দেয় গফুর। এই সময় আরেক রিক্সাচালক সবুর এসে হাজির। সবুর গফুরের পরম বন্ধু। তারা সময় পেলেই নাস্তার জন্য মাদ্রাসার সামনে চলে আসে। নাস্তা করতে করতে অনেক সুখ দুঃখের গল্প করে। সবুরকে দেখে গফুর আরও দুইটা চিতই পিঠা দেয়ার জন্য দোকানীকে বলে। সাথে শুটকি ভর্তা, ধনে পাতা বাটাও দিতে বলে। পিঠা খেতে খেতে দুই বন্ধু গল্পে মজে উঠে কিছু সময়ের জন্য। সবুর- দোস্ত দেখছোস, জিনিসপত্রের দাম কেমনে কইরা হু হু করে বাইড়াই চলছে। সংসার চালানো খুব কঠিন হইয়া গেছেরে দোস্ত। খামু কি, আর রাখমু কি!

গফুর- সরকার সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়াইলো। আমাদের তাতে কি লাভ হইলো? বেতন বাড়ার সাথে সাথে জিনিসপত্রের দামও কয়েকগুন বাইড়া গেল। ব্যাবসায়ীরা আমাদের মত গরীব লোকের কথা চিন্তাও করলো না। এই দ্যাশে কি শুধু সরকারি চাকুরীজীবিই আছে? নাকি আমাদের মত গরীব লোকও আছে। ব্যাবসায়ীরা মাত্র কয়েক লাখ সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়ার খবরে জিনিসপত্রের দাম বাইড়া দিল,একবার আমাগোর কথা ভাবলোও না,এই দেশে সরকারি চাকুরীজীবিদের চেয়ে গরীব শ্রমজীবী মানুষ, বেসরকারি চাকুরীজীবি অনেক অনেক গুন বেশি আছে।

সবুর- এর মধ্যে কয়েকদফা গ্যাসের দাম, বিদ্যুৎ এর দাম, জ্বালানির দাম বাইড়া গেছে। এতে বাজারের দ্রব্যপণ্যের উপর প্রভাব পড়ছে অনেক অনেক বেশি। ব্যাবসায়ীরা কয় জ্বালানীর দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বাইড়া যাওয়ায় তারা পণ্যের দাম বাড়াইতে বাধ্য হইছে। কারে দোষ দিবি, একেকজনের কাছে যুক্তি একেক রকম।

গফুর- পত্রিকায় দেখলাম এক মন্ত্রী কইছে যে, বিদ্যুৎ এর দাম বাড়াতে জনগণের সুবিধা হইছে। কিসের সুবিধা হইছে বুঝতেই পারছিনা।

সবুর- মন্ত্রী হুদাই একটা কথা কইয়া পরস্থিতি সামাল দিল আর কি। ওরা যেইডাই কয়, সেইডাই বিশ্বাস করতে হইবো। ওরা তো জনগনের সাথে কথা বইলা দাম বাড়ায় না। যখন মনে খুশি হইলো দাম বাড়াইয়া দিল, কার সুবিধা হইবো ওরা ভাল কইরাই জানে। আর তা চাইলায়া দেয় আমগো উপরে। হুদায় কয় গণশুনানির পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হইছে। গণশুনানিতে জনগন থাকে নাকি ওরাই থাকে?

গফুর- এই আলাপ বাদ দে,যে লংকায় যায় সেই রাবন হইয়া যায়। চল যাই আর কিছু ট্রিপ মারা যায় কিনা। নইলে পোশাইবো না।

সবুর – চল যাইগা।
গফুর চিতই পিঠার দাম দিতে দিতে কয়,রাত ১০ টা প্রযন্ত অন্তত প্যাটের জ্বালা বন্ধ করা হইলো। একেবারে রাইতে বাজার কইরা ঘড়ে ফিরমু। এরপর রান্নাবান্না হইবো, বউ বাচ্চা খাইবো। বউ তো আমার বাজারের অপেক্ষায় বইসা আছে। এরপর আবার দুই জন রিক্সা নিয়ে বাহির হয়ে পড়লো।
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :