শিরোনাম

(২য় খন্ড অনুগল্প) একজন রিক্সাচালকের দুঃস্বপ্ন- চতুর্থ অংশ: মোস্তফা হারুন, সহ. পুলিশ সুপার

 

গফুরের স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে বস্তিতে ফিরে আসে। সকাল সকাল স্কুল আছে, তাই রাশেদকে তার মা গরুর মাংস দিয়ে খেতে দেয়। রাশেদ মাকে বলে,
— মা আমি এমনই ভাত খামু। বাপে অসুস্থ আর আমি মাংস দিইয়া ভাত খামু? মাংস তুইলা রাখো। বাপজান আইলে একসাথে খামু।

ছেলের কথা শুনে গফুরের স্ত্রী রহিমার দুচোখ ছাপানো জল চলে আসে। শাড়ির আচলে গোপনে চোখ মুছে,ছেলেকে আলু ভরতা দিইয়া ভাত খাইতে দেয়।
পরেরদিন সবুর গফুরকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে আসে। ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখে দিয়েছে এবং আগামী সাত দিন পর হাসপাতালে গিয়ে ড্রেসিং করে আনতে বলেছে। ক্ষতস্থান না শুকানো প্রযন্ত বাইরে খোলা পরিবেশ গফুরের কাজ করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ডাক্তার।

রাতের বেলায় গরুর মাংস দিয়ে সবাই মিলে পরিতৃপ্তির সাথে ভাত খায়। গফুর এখন রেষ্টে আছে। রহিমা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রহিমা যে বাড়ীতে কাজ করে সেই বাড়ীর খালাম্মার কাছে রহিমা আব্দার করে।
— খালাম্মা, আপনাগো যখন বাজার থাইকা মুরগী কিনা আনবো,খালুরে কইয়েন যেন মুরগির পা ফালাইয়া দিয়া না আসে। আমাগো রাশেদের বাপে অসুস্থ। পা গুলান পাইলে রাশেদের বাপেরে স্যুপ বানাইয়া দিমু। শরীরে শক্তি পাইবো। রহিমার কাছ থেকে সব ঘটনা শুনার পর খালাম্মা বলেন

— দেখো রহিমা,তুমি এইভাবে বলছো কেন। পা দিয়া স্যুপ বানাইয়া খাওয়ার চেয়ে মুরগী দিয়া স্যুপ বানাইয়া দিও।
— খালাম্মা মুরগী কিননের পয়সা পামু কই। আপনি মুরগির পায়ের ব্যাবস্থাই কইরা দিয়েন খালাম্মা।
— বুঝেছি,তুমি এক কাজ করো রহিমা। আমাদের ডিপ ফ্রিজ খুলে একটা মুরগী বের করে নিয়ে যাও। ওটা দিয়ে স্যুপ বানাইয়া দিও। আবার যেদিন স্যুপ খাওয়ানোর ইচ্ছা জাগবে তখন আমাকে বলে আবার আস্তা মুরগী নিয়ে যেও।
— এইডা কি বলেন খালাম্মা। আপনার ক্ষতি হইয়া যাইবো না? খালু শুনলে আমারে খেদাইয়া দিব। তখন কি হইবো?
— তোমার খালু ওতো খারাপ মানুষ নয়।

উনি মানুষের বিপদের কথা শুনলে সাধ্যমতো সাহায্য করে থাকে। ঔষধপত্র লাগলে তাও বলে দিও। তোমার খালু আনাইয়া দিব কেমন! এসব নিয়ে চিন্তা করবা না। তুমি নিঃশ্চিন্তে কাজ করে যাও। মানুষ মানুষের বিপদে পাশে থাকবে এটাই তো মানবতা। এবার রহিমা নিঃশ্চিন্তে মনে কাজ করতে থাকে। যাওয়ার সময় খালাম্মার দেয়া মুরগী সাথে নিয়া যায়। বাসায় গিয়ে রহিমা স্বামীর জন্য স্যুপ বানাইয়া দেয় এবং স্বামীকে খেতে দেয়। গফুর রহিমাকে জিজ্ঞাসা করে,

— ও রহিমা,তুমি মুরগী পাইলা কই?
— খালাম্মা দিছে। তোমার অসুস্থতার কথা শুইনা খালাম্মাই এই মুরগী দিছে। আরও দিবো কইছে। ঔষধ লাগলে তাও জানাইতে কইছে। কিইনা দিবো।
— দেখ রহিমা, দুনিয়াতে এখনো ভাল মানুষ আছে। যাগো প্রান গরীবের জন্যে কান্দে। ভাল হইয়া গেলে আমারে খালাম্মার কাছে নিইয়া যাবি। আমি ঐ ফেরেস্তার নাহান মানুষরে এক নজর দেখুম।

— খালু কি করেরে?
— সৎ পুলিশ অফিসার। ঘুস খায়না। ওরাও কষ্ট কইরা বেতনের ট্যাহার মধ্যেই চলে। এর মধ্যেই আবার মানুষরে সাহায্য সহযোগিতাও করে। খালু বড্ড নামাযী মানুষ। দাড়ি আছে,কোরান পড়ে। খালাম্মাও তাই। খালাম্মা তো আরও ভাল মানুষ। এলাকার কোন মহিলা মইরা গেলে খালাম্মা মরার লাশ ধুইয়া,কাফন পড়াইয়া দেয়। বিনা পয়সায় এলাকার গরীব মাইয়াদের কোরান পড়ায়।

— আহা,তুই এতো ভালো লোকের বাড়ীত কাজ করিস, তা আমি জানতামই না। আল্লাহ ওগো ভাল করুক।আমি ভাল হইলে আমারে নিইয়া যাইবি সাহেবগো বাসায়। আমি ওগো এক নজর দেখুম। দে খাবার দে, ঘুম ধরছে। রহিমা স্বামী, পুত্রের জন্য খাবার রেডি করে দিলে অনেক দিন পর গফুর পরিবার নিয়ে গরুর মাংসের ঝোল দিয়ে পরিতৃপ্তির সাথে খেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে গফুর ঘুমাতে যায়। গফুর এখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন। আবার সেই স্বপ্ন এসে গফুরের উপর ভর করেছে।

গফুর প্রধানমন্ত্রী এবং তার সাক্ষাৎকার চলছে এবার গনভবনে। গফুর স্যুট প্যান্ট পরে সাহেব সেজেছে। চারিদিকে দলীয় চামচাদের ভীড়। ডিজিএফআইয়ের সদস্য,পি জি আর এর সদস্য, পুলিশ গফুরকে প্রোটেকশন দিয়ে আগলে রেখেছে। হাজার হলেও সে এখন প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার প্রধান। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একজন ভি ভি আই পি পারসোন। দেশের একমাত্র একছত্র ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। সাক্ষাৎকার শুরু হচ্ছে। গফুর ক্যামেরার সামনে নিজেকে স্মার্টলি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এবার উপস্থাপক প্রথম প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের দিকে ছুড়ে দিলো।

উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনি এই দেশের জনগনকে কেমনভাবে দেখতে চান, আপনার মুল্যবান অভিমত জনগন শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে,কিছু বলুন প্লিজ?
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :