প্রধানমন্ত্রীঃ হ্যাঁ, আপনি জানতে চেয়েছেন আমাদের দেশের জনগন সম্পর্কে আমার ধারণা কেমন। এই প্রসংগে আমি বলতে চাই, বাংগালীকে বলা হয় বীরের জাতি। তার স্বাক্ষরও তারা ইতিহাসে রেখে গেছে। যেমন ধরুন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বাংগালী নিজের বুকের তাজা রক্ত ঝড়িয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
আবার ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের পটভূমি লক্ষ্য করলে দেখবেন, বাংগালী জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আপামর জনতা একতা বদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে এই দেশকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করেছিল। আবার তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশের জনগন আবার একত্রিত হয়ে সংগ্রাম করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এই সব দিক বিবেচনায় আমাদের দেশের জনগন আসলেই বীর হিসেবে চিহ্নিত। তবে ইদানীং বেশ কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করছি, এদেশের জনগন বীরের খেতাব হারাতে বসেছে। আপনি হয়তো বলবেন,তা কিভাবে। হ্যাঁ, আমি বুঝিয়ে বলছি। দেশ যখন ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেল,ইন্টারনেট সুবিধা জনগণের হাতে হাতে পৌঁছে গেল, তখন খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, যারা এই দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ অর্থাৎ যুবক যুবতী ভাইবোনেরা ফেসবুক, ইন্সট্রোগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গুলির ভিতর নিজেকে সপে দিল।
দেশের নেতা,সরকারি চাকুরীজীবিরা যখন অর্থনৈতিক অনিয়মের ভিতর ডুবে গেল,দেশে ডিজিটালের বদৌলতে ব্যাংকের টাকা এক নিমিষেই পাচার হয়ে যাচ্ছে,তখন কিন্তু তারা দেশের স্বার্থে এর প্রতিবাদ করার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে। তারা তাদের বীরের খ্যাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তারা দেশের স্বার্থে এর কোন প্রতিবাদও করেনি। তারা নিমগ্ন হয়ে আছে সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে। তাদের প্রতিবাদের ভাষা ফেসবুকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা শুধু গননা করে তার পোস্টে কতটা লাইক,কতটা কমেন্ট পড়েছে। এই হলো তাদের দেশ প্রেম। মনে হচ্ছে তারা সিডাটিভ হয়ে গেছে। ফেসবুকের নেশায় তারা মত্ত। আমি আশাহত হয়েছি,এই
বীরের জাতি কিভাবে ঘুমিয়ে পড়লো। এদের জাগাবে কে? আমি জাগানোর মত কোন প্রতিষেধক খুজে পাচ্ছিনা। একটি উপায় হয়তো আছে, এই সব অলস করে দেয়া সামাজিক মাধ্যম গুলো এই দেশ থেকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়া তাদের এই গভীর নিদ্রা ভাংগানো অসম্ভব। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শংকিত। তারা তাদের নিজের দেশপ্রেম হারিয়ে ফেলছে। সুযোগ নিচ্ছে অসৎ রাজনীতিবিদ, অসৎ সরকারি চাকুরীজীবি, অসৎ আমলাগন। তাদেরকে জাগাতেই হবে যেমনটি ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং আশার আলো দেখিয়েছিলেন জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আশা করি জনগন সম্পর্কে আমার ধারণা কেমন তা বুঝতে পেরেছেন।
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনার কথার ভিতর আপনি ১৯৫২ সাল,১৯৭১ সালের কথা বলেছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার অনেক অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন,কিন্ত ৫২ সালের শহীদদের ব্যাপারে কি কোন পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা আছে কি?
প্রধানমন্ত্রীঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। একথা সঠিক যে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার জন্য মাসিক ভাতা,উৎসব ভাতা, চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের নাতিপুতিদের সরকারি কোঠায় চাকুরী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাষা শহীদদের ব্যাপারে কেন জানি সবাই উদাসীন। যারা ভাষা সৈনিক ছিলেন,ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন,যাদের কারণে আমরা আজও বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি তাদের পরীবারের কোন খোজখবর রাখা হচ্ছেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো করে তাদেরও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা নুতন করে ভাবতে হবে।
২১ শে ফেব্রুয়ারী এলেই কেবল শহীদ মিনারে ফুল দিয়েই সবাই দায়িত্ব শেষ করে। আসলে তাদের পরিবার পরিজন কেমন আছে এই খবর কেউ রাখেনা। শহীদ বেদিতে ফুল দেয়ার পাশাপাশি মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক তাদের জন্য দোয়া খায়ের করার ব্যাবস্থা করা উচিৎ। ফুল দেয়ার চেয়ে দোয়া খায়ের তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য অধিকতর ভাল কাজ হিসেবে গন্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা সরকার অফিস আদালতে বাংলা ভাষা চালুর কথা বললেও কেউ তা ভ্রুক্ষেপ করছেনা। এটা বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং বাড়ানো উচিৎ।
আরও একটি দুঃখজনক কথা যে, আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করলেও সেই দিনটিকে ৯ই ফাল্গুন বলতে লজ্জা পাই। বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়ে দিবসটির নাম কেন ইংরেজি ২১ শে ফেব্রুয়ারী রাখা হলো। এখানে কি ৯ই ফাল্গুন বললে দোষের কিছু হবে? আসলে এটাও গুরুত্ব সহকারে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেষ কথা মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সরকারিভাবে যে সকল সুবিধা দেয়া হয়েছে,ঠিক তেমনি ভাবেই ভাষা শহীদদেরও একই সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যাবস্থা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আমরা খেয়াল করে দেখেছি আপনি সহ আপনার মন্ত্রী, এম পি এবং আমলাগন অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিংগাপুর, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে গমন করেন, তা কেন হবে? তাহলে কি আমরা ভেবে নিব,এদেশে ভাল চিকিৎসা হয় না? আরও শোনা যায়,আপনারা চিকিৎসার অজুহাতে বিভিন্ন গোপন মিটিংয়ের জন্য দেশের বাইরে যান এবং অনেক এম পি মন্ত্রী এই সুযোগে স্যুটকেস ভর্তি টাকা ও মুল্যবান জিনিসপত্র বিদেশে রেখে আসেন,কেননা আপনারা ভি আই পি বিধায় আপনাদের লাগেজ চেক হয় না। সত্যি কি এমনটা হচ্ছে?
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।