প্রধানমন্ত্রীঃ দেখুন এমন একটি প্রশ্ন করলেন, আমি নিজেই লজ্জায় পরে গেলাম। আসলেই একথা সঠিক যে, একটু জ্বর, ঠান্ঠা লাগলেও আমাদের দেশের এম পি, মন্ত্রী, ভি আই পি,সি আই পি গন চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান। তারা আমাদের দেশের ডাক্তারদের উপর ভরসা করতে পারেন না। তাহলে ভেবে দেখুন দেশের ১৬ কোটি মানুষ কিভাবে ডাক্তারদের উপর ভরসা করে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের কি রোগ সাড়ছে না? তাদের কি রোগ নিরাময় হচ্ছেনা? আসলে এটা মনের ব্যাপার, আমি ভি আই পি, সি আই পি হয়েছি।
বিদেশে চিকিৎসা না করলে আমার মান ইজ্জত থাকে কোথায়? আমাদের দেশেও অনেক ভাল ডাক্তার আছে। তাদেরকে প্র্যাকটিস করার সুযোগ করে দিতে হবে সুনির্দিষ্ট আইন করে। তাদের ভিজিট সরকার কতৃক বেধে দিতে হবে। আর ভি আই পি,সি আই পি,মন্ত্রী, এম পি যারা দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাবে তাদের কাছে উচ্চহারে করারোপ করার ব্যাবস্থা নিতে হবে। বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে আগে এদেশের একটি মেডিকেল টিমের মতামত নেওয়ার ব্যাবস্থা জন্য আইন করতে হবে। সেটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
আমাদের দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর যন্ত্রপাতি ভাল না। যত্রতত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তারা বিদেশ থেকে কম মুল্যে সেকেন্ড হ্যান্ড যন্ত্রপাতি কিনে আনে,ফলে সেসব যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত করতে পারেনা। ফলে চিকিৎসকগন সেই রিপোর্টের উপর চিকিৎসা দিয়ে রোগ সারাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাতে নুতন যন্ত্রপাতির সমন্বয় ঘটে এজন্য আইন কারে সুপারভাইজ করার ব্যাবস্থা করবো।
রিকন্ডিশন্ড, ব্যাবহার করা যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ করতে আইন প্রনয়ণ করবো। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলি তাদের প্রসার ঘটানোর জন্য ডাক্তারদেরকে ৩০%,৪০% হারে কমিশন দিয়ে থাকে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধেও আইন প্রনয়ণ করবো ইনশাআল্লাহ। দেশের রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম পি,ভি আই পি,সি আই পিদের বাধ্যতামূলক ভাবে দেশে চিকিৎসার জন্য আইন করা হবে। এরা যদি দেশে চিকিৎসা নেয় তখন সাধারণ জনগন দেশের চিকিৎসার উপর আস্থা রাখতে পারবে বলে আশা করি।
এখন থেকে বিদেশে গমনের সময় রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এম পি,সি আই পি, ভি আই পিদের বাধ্যতামূলক ভাবে লাগেজ স্ক্যানিং করার আইন করা হবে, এমনকি তাদের সফরসংগী,আত্বীয় স্বজনদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে, যাতে করে বিদেশে অর্থ পাচারের মতো ঘটনা না ঘটে। এই রকম রাস্ট্রীয় সন্মানিত ব্যাক্তিগন সাধারণ জনগনের মত মাত্র ৪০ কেজি মালামাল সংগে রাখতে পারবে। এই আইন করলে আপনার মনে যে সন্ধেহ আছে তা দুর হয়ে যাবে। অযথা বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করাও দরকার।
কথায় কথায় বিদেশ ভ্রমণ দেশের জন্য মংগল নয়। বিদেশের কোন দেশে আমাদের দেশের এইরুপ রাস্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের কোন ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং বাসা বাড়ী কেনার অধিকার থাকবেনা। আমি যদি সত্যই এই সব আইন প্রনয়ণ করে প্রয়োগ করতে পারি দেশের ধনী ব্যাবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, আমলা ও নেতা, নেত্রীদের মাঝে অনেকটা স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে মনে করি। আশা করি আপনি আপনার জবাব পেয়েছেন।
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় দেশের বিভিন্ন দপ্তরে কেনাকাটা ও মেরামত খাতে যে বড় ধরনের অনিয়ম হয় তা রোধ করতে আপনি কি ব্যাবস্থা নিবেন?ইদানীং নেতা নেত্রী ও সরকারি আমলাদের নৈতিক চরিত্র নিয়ে আপত্তিকর কথা উঠছে,আপনি এসব নিয়ে কি ভাবছেন?
প্রধানমন্ত্রীঃ খুব ভাল একটি প্রশ্ন করেছেন। এই সম্পর্কে আমার কিছু নেগেটিভ ধারণা আছে। আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করছি।
পাপিয়া ম্যাডামের মত অনেক দলীয় নেত্রীদের খদ্দের তালিকায় দেখলাম ‘ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাইনা’ টাইপের সব বড় গলার সচিব, এমপি, মহারথীদের নাম। আসলে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই করে সরকারের ভাবমূর্তি জন সমুক্ষে নষ্ট করছে। গোয়েন্দাদের কাছে তাদের নামের তালিকাও প্রকাশ হয়েছে।বিভিন্ন পত্রিকায় ও সোস্যাল মিডিয়াতে তাদের নামও উঠে এসেছে।এরপরেও ওনাদের স্বপদে বহাল রাখা উচিৎ মনে করছিনা।
গোয়েন্দারা উনাদেরকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি !দল ক্ষমতায় আসার পরে হঠাৎ করে অনেক নেতা,নেত্রী রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকাও আমার হাতে এসে পৌছেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন অসৎ এবং বেপরোয়া নেতা,নেত্রীর স্থান আমার দলে হবেনা।
মনে পড়ে ২০০৭ সালের কথা। নিউইয়র্কে নতুন গভর্নর নির্বাচিত হয়েছে। খুব বাঘা লোক। সৎ, করিৎকর্মা তিনি। কাউকে ছাড় দেয়ার পাত্র না। অল্পদিনে সবার মন জয় করে ফেলেছিল।
সেই বেচারা মাত্র এক বছরের মাথায় জেলে চলে গেলো। কেন, শুনবেন ? বিবাহিত এই জনপ্রতিনিধির সাথে একটা দোষ ধরা পড়লো। তিনি প্রায় প্রায় প্রমোদবালা নিয়ে হোটেলে যেতেন। এই খবর জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে বেচারা নিজে থেকে পদত্যাগ করলেন। তারপর বিচারের রায়ে জেলে গিয়েছিল।ব্যাস, তিনি হারিয়ে গেলেন রাজনীতির পাতা থেকে। তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যাকে নিয়ে আমেরিকানরা স্বপ্ন দেখতো – সৎ নির্ভীক এই মানুষ একদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। তার নাম ইলিয়ট স্পিৎজার। বিচার সবার জন্য সমান না হলে মানুষ আস্থা হারাবেই, বক্তৃতায় যে যাই বলুক না কেন।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।