এবার আমি সরকারি দপ্তরের কেনাকাটার প্রসংগে বলছি। আমার কাছে রিপোর্ট আছে সরকারি প্রতিটি দপ্তরে কেনাকাটায় অনিয়ম আছে। এই ক্ষেত্রে অফিস প্রধানের অর্থনৈতিক লোভের কারণে যোগসাজশ করে কোটেশন ও ভাউচার বিল করে থাকে। একটি পণ্যের দাম যদি ১০০০/- টাকা হয় ভাউচারে তা দেখানো হয় ৪০০০/- টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। এইভাবে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট করছে। অডিটরেরা অডিট আপত্তি দিলে তাদেরকেও উৎকোচ দিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়। কোটেশনে ভুয়া প্যাড ব্যাবহার করে একটি প্রতিষ্ঠানের কোটেশন সাবমিট করেও অর্থ লোপাট করছে।
দেশের টাকা যথার্থ ভাবে ব্যাবহার হচ্ছেনা। কেন জানি সবাই অসৎ হওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যাস্ত। একা প্রধানমন্ত্রী সৎ হয়ে সবদিকে কিভাবে সামলানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর হ্যান্ডস যারা তারাই যদি সরকার প্রধানের কাছে মিথ্যা তথ্য দেয় তাহলে একার পক্ষে কি সব দিকে সামলানো সম্ভব? কখনোই নয়,এইসব থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে সবার মাঝে দেশপ্রেম থাকতে হবে। আজ এই দেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের বড়ই অভাব। আফসোস আমারা কি এই অবস্থা দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? অফিস প্রধানের ভয়ে,এসিয়ারের ভয়ে মিডিল লেবেলের অফিসার অনৈতিক ফাইলে মুখ বন্ধ করে স্বাক্ষর দিয়ে যাচ্ছে।
মিডিল লেবেলের অফিসারদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা হয়রানির হাত থেকে বাচার জন্য, নিজের চাকুরী রক্ষার জন্য মুখ বুজে সবকিছুই সহ্য করে যাচ্ছে। তারা ভয়ে থাকে এসব অনিয়ম ধরা হলে তাদেরও চাকুরীর ক্ষতি হবে। তবু্ও তারা মুখবুজে অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছে,অন্যায় দেখে যাচ্ছে,অন্যায় কাজে সাহায্য করতে বাধ্য হচ্ছে। এমন একটি দেশের স্বপ্ন তো বংগবন্ধু দেখতে চাননি এবং তিনি বেচে থাকলে এই সব অসৎ অফিসারদের নিঃসন্দেহে কচুকাটা করতেন।এসব থেকে উত্তরনের জন্য বিকল্প কোন কিছু করা যায় কিনা ভাবছি। আশা করি আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি।
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনি যথার্থই অনুধাবন করেছেন। কিন্তু দেশের স্বার্থে এই সব রোধ করা একান্তই জরুরী। আপনি কি ভাবছেন, কিভাবে এগুবেন?
প্রধানমন্ত্রীঃ হ্যাঁ, আমি এসব নিয়ে ভাবছিনা তা নয়। আমি ভেবেছি এবং একটি সিদ্ধান্তেও পৌছেছি। তা খোলাখুলি বলেই ফেলি,এতেও যদি কেউ আগে থেকে ভাল হয়ে যায়, তাহলে ভাল কথা, নাহলে করার কিছুই নেই ওদের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। যেমন ধরুন,আমি দুদক ও শুল্ক গোয়েন্দাদের ডেকে একটি আদেশ দিয়েছি,সেটা হলো তারা প্রতিটি সরকারি চাকুরীজীবিদের, শুল্ক ফাকি দেওয়া ব্যাবসায়ীদের, অডিটরদের ও যাদেরকে সন্দেহ হবে তাদেরকেই নিয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করবে। এর ভিতর আমার এম পি, মন্ত্রীদের নামের তালিকাও থাকতে পারে। এই তালিকা ধরে অতি গোপনীয়তার সাথে তাদের সম্পদের উৎস, তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স, আয়ের উৎস, তাদের বাড়ী, গাড়ী, বিদেশে তাদের কোন ব্যাংকে একাউন্ট আছে কিনা, বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কালেকশন করবে।
এরপরে অসংগতি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করার পরিকল্পনা করেছি এবং তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সমুদয় সম্পদ রাস্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। দেখি তাদের হাত কতটা লম্বা। আমি অসৎ ব্যাক্তিদের এই সমাজে রাখতে চাইনা। তাদের স্থান হবে জেলখানায়।
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনার এই কঠিন পদক্ষেপের জন্য আপনার জীবনের উপর ঝুকি আসতে পারে এবং আপনাকে গোপনে ক্যু করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না? এটা নিয়ে কি ভাবছেন?
প্রধানমন্ত্রীঃ দেখুন আমি এই সব মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করেছি। কাউকে না কাউকে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধতেই হবে। আমিই না হয় সেই ঘন্টাটা বাধি। সাধারণ জনগনের আস্থা ও সমর্থন যদি থাকে কেউ কিছুই করতে পারবেনা। আগে আমাকে জনমত তৈরি করতে হবে, জনগণকে সাথে নিয়েই এই বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে হবে। জনমত আমার বিপক্ষে থাকলে আমি সফল হতে পারবোনা। জনতাই সকল ক্ষমতার উৎস। একবার যদি জনতাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা যায় এবং একটি বারের জন্য যদি তাদেরকে প্রতিবাদ মুখর করে গড়ে তোলা যায়।
তাহলে অসৎদের বিচারের মুখোমুখি করা কোন কঠিন কাজই নয়। আর এইসব কাজে আমার সাথে থাকতে হবে সৎ ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মীদের। যারা প্রতিনিয়ত দেশের অনিয়ম জনসমুক্ষে তুলে ধরতে সাহসী পদক্ষেপ নিবে। স্রোতস্বিনী নদীকে বাধ দিয়ে আটকালে কি হয় জানেন? নদী বাধ ভেংগে দুই পাড় ভাসিয়ে নিয়ে ধংসলীলা চালায়। জনগনও ঠিক তাই, তাদেরকে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে বাধা দিলে একদিন নদীর মতো বাধ ভেংগে সরকারকেও ভাসিয়ে ধূলিসাৎ করে দিবে।
তাই জনগণের মতামতকে উপলব্ধি করতে হবে, সেই অনুযায়ী জনগণের কল্যাণে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তখন সেই জনগনই সরকার রক্ষার রক্ষাকবচের মত করে কাজ করবে। কোন অপশক্তিই সরকারকে কঠিন পদক্ষেপকে রোধ করতে সক্ষম হবেনা এবং কোন অপশক্তি সরকারের ক্ষতিও করতে পারবেনা। উন্নত রাস্ট্রগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবেন সেই সকল দেশের সরকার জনগনের স্বার্থকে আগে মুল্যায়ন করে বেশি।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।