বাস্তবতা ফেস করতে মনের জোড় ও ইচ্ছা শক্তি প্রয়োজন হয়।পরকাল ফেস করতে
দুনিয়াবি কামনা,বাসনা,প্রাচুর্য ত্যাগ করে পরম করুনাময়ের আনুগত্য করার প্রয়োজন আছে। দুনিয়াদারি ও পরকালের চাওয়া কখনও এক হতে পারেনা। বাস্তবতায় ধন সম্পদ বাড়ী গাড়ীর প্রয়োজন বেশি, কিন্তু পরকালে এসবের কোন মুল্যই নাই। লৌকিক জীবন একটা সময় পর্যন্ত বিদ্যমান, কিন্তু পরলৌকিক জীবন অসীম,যার কোন শেষ নাই। অধিকাংশ মানুসই এটা কিন্তু বুঝে ও উপলব্ধিও করে, তবুও লৌকিক জীবনকে মহব্বত করে বেশি।
এই জন্যই তারা অর্থ সম্পদ অর্জনের নিমিত্তে অসৎ পথ অবলম্বন করতে দ্বিধা বোধ করে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়,দুনিয়াদারিতে যারা বিফল তাদেরকে মানুস মুল্যায়ন করেনা,তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাবে দেখে। আর যারা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে তারাই সমাজে সন্মানিত ও পুজনীয় ব্যাক্তিত্ব। তাই আমাদের সমাজে প্রকৃত ভাল মানুসের কোন মুল্য নেই,কদর নেই। সবার বিবেক এখন দিশেহারা। জানেন তো লোভের কারণে পুরুষ হারায় তার ব্যাক্তিত্ব,নারী হারায় তার সতীত্ব এবং নেতা হারায় তার নেতৃত্ব।
শিক্ষনীয় যে, কখনোই চারটি বিষয়ে লজ্জা পাবেন না, ১) পুরাতন কাপড় পরিধান করতে ২) বয়স্ক পিতামাতাকে সেবা করতে ৩) দরিদ্র বন্ধুকে সেবা করতে,সাহায্য করতে এবং ৪) সাধারণ মানুষের মত করে জীবনযাপন করতে। এসব যদি করতে পারেন তাহলে আপনার মনে অহংকার জন্মাবেন না। অবৈধ অর্থ সম্পদ উপার্জনের লিপ্সা মনে জাগবেনা। তাই সফল রাস্ট্র পরিচালনায় আগে নিজেকেই সংশোধন করা জরুরী। নেতা যদি তার দলের কাছে, নেতাকর্মীদের কাছে, সাধারণ জনগনের কাছে অসৎ প্রতীয়মান হয় তাহলে কেমন করে তারা আপনাকে আমাকে মেনে নিবে? তারা কি আপনাকে আমাকে অনুসরণ করে বড় লুটেরা হয়ে যাবে নাকি?
শুধু প্রকাশ্যে আমি পাচ ওয়াক্ত নামায পড়লাম,তসবিহ গুনলাম,হজ্ব করলাম, মুখে মানুষকে সৎ উপদেশ দিলাম, ভাল কাজ করার আদেশ দিলাম, মন্দ থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিলাম কিন্তু গোপনে আমি সকল অপকর্মের সাথে জড়িয়ে আখের গুছিয়ে নিলাম তাহলে কেমন করে রাস্ট্র পরিচালনা করবো। মনে করছেন আমার অপকর্ম কি আপামর জনগন, নেতাকর্মীদের কাছে চিরকাল গোপন থাকবে? কখনোই থাকবেনা, একদিন না একদিন পাপ কাজের প্রকাশ ঘটবেই, তখন সবাই ক্ষমতার ভয়ে আমাকে আপনাকে শ্রদ্ধা করলেও অন্তর থেকে তারা আমাদেরকে ঘৃনা করতে শিখবে।
আমার জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা একদিন হারিয়ে যাবে তাদের কাছে।
এমন সময় আসবে যে, যেসব জনতা ভালবেসে বিশ্বাস করে আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে, ঠিক সেই জনতাই আমাকে টেনে হিচড়ে গদি থেকে নামিয়ে দিবেই এটাই অমোঘ সত্য কথা। তাই সবার আগে আমাকে অর্থাৎ সরকার প্রধানকে সততার প্রমান দিতে হবে। তাহলেই না কেবল জনতার কাছে আমার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। এই কথাগুলো কি কখনোই কনো দেশের রাস্ট্রপ্রধানেরা ভাবে?
উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আপনার মুখে এমন সুন্দর কথাগুলো আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছে, আপনি দেশ ও জগনকে নিয়ে এতো কিছু ভাবেন তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবন দান করুক এবং আমাদের দেশের নেতৃত্ব আপনার হাতে সুরক্ষিত হউক এই কামনাই করছি। এখন আমি জানতে চাইবো দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য আপনি কি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন?
প্রধানমন্ত্রীঃ দেখুন বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কিন্তু নেহায়েত কম নয়। এরা শিক্ষাদীক্ষায়, চিকিৎসা ব্যাবস্থায়, আবাসন ব্যাবস্থায়, আচার আচরণে সবদিক থেকেই পিছনে পড়ে আছে। এদের উন্নয়নে যথার্থ ব্যাবস্থা গ্রহণ করে তাদেরকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে যা করার তাই করবো। তাদেরকে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা দিয়ে দেশ গড়ায় তাদের অংশীদারিত্ব অতি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে ব্যাবহার করবো ইনশাআল্লাহ। তাদেরকে বাদ দিয়ে এই দেশ নয়। তাদেরকে নিয়েই আমাদের নুতন ভাবে এগিয়ে যেতে নুতন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের পথে।
উপস্থাপকঃ বিশ্বে মুসলিম নিধন সম্পর্কে আপনার আভিমত কি জানতে চাই?
প্রধানমন্ত্রীঃ বিশ্বময়_মুসলিম_নিধন সম্পর্কে বলতে গেলে আমি একটি হাদিস থেকে প্রথমে তুলে ধরবো, মুসলিম নিধন সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) কি ভবিষ্যৎ বাণী করে গিয়েছিলেন!
হাদীসের আলোকে এর কারণ ও প্রতিকার সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন,
এমন এক সময় আসবে, যখন তোমাদের নিধনের জন্য বিভিন্ন (কাফের) গোষ্ঠি একে অপরকে আহবান করবে। ঠিক যেমন অভুক্ত খাদকদের আহবান করা হয়, (মুখরোচক খাবারের) পাত্রের প্রতি।
তখন একজন বলে উঠলেন, আমাদের সংখ্যাসল্পতার কারণে কি সেদিন এমন দুরাবস্থা হবে? ইরশাদ হলো-বরং সেদিন সংখ্যায় তোমরা অনেক বেশি, অনেকটা প্রবাহমান পানির ফেনার মতো (পরিমাণে অধিক অথচ অন্ত:সারশূন্য) থাকবে। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভয়-ভীতি তুলে দিবেন (তারা তোমাদের খুবই নগণ্য ভাববে)। আর তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান-বা দুর্বলতা’ সৃষ্টি করে দিবেন। জনৈক প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন-‘ওয়াহান’ কি? ইরশাদ হলো-দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুভীতি।
(অর্থাৎ সেদিন তোমরা দুনিয়ার জন্য পাগলপরা হয়ে থাকবে এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ পরিত্যাগ করবে। সে কারণেই তোমরা পৃথিবীতে খড়কুটায় পরিণত হবে)।
(আবু দাঊদঃ ৪২৯৭) উম্মুল মু’মিনীন যায়নাব বিনতে জাহশ রা: নবীজিকে প্রশ্ন করেছিলেন-‘আমাদের মাঝে অনেক নেককার-ইবাদতগুযার লোক থাকা সত্বেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? উত্তরে তিনি বলেন-হ্যাঁ, যখন তোমাদের মাঝে অন্যায়-অনাচার ব্যপক হারে বেড়ে যাবে।(বুখারী, মুসলিম)। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ক্লিয়ার বলা হয়েছে মুসলিম নিধনের মুল কারন কি হবে।
আসলেই এখনকার যুগে মুসলিমগন আরেক মুসলিমের প্রতি অন্যায় অবিচার করছেনা?তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষতি করছেনা? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মুসলিম ঐক্য না থাকার কারনে কেন অমুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি ঘটবেনা,কেন অমুসলমানগন মুসলমানদের উপর কতৃত্ব করবেনা? অমুসলিমগন চায় না মুসলিম শক্তি এক হউক। মুসলিম শক্তি এক হলে দুনিয়ায় মুসলমানদের আধিপত্য বিস্তার ঘটবেই। তাই মুসলমানদের অনৈক্যের কারণে তারা আজ বিশ্বময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলিম দাংগা নিয়ে একটি কাল্পনিক গল্প আছে। গল্পটি না বললেই নয়।
এক শকুনের বাচ্চা তার বাপের কাছে বায়না ধরলো, — “বাবা, আমি মানুষের মাংস খাব, এনে দাও না প্লিজ!!!”
শকুন বলল–“ঠিক আছে বেটা, সন্ধ্যার সময় এনে দেব। শকুন উড়ে গেল আর আসার সময় ছেলের জন্য শুকুরের মাংস নিয়ে এলো। বাচ্চা বলল–“বাবা, এটা তো শুকুরের মাংস, আমি মানুষের মাংস খেতে চাই।”
বাপ বলল –“ঠিক আছে বেটা, এনে দেব।”
শকুনটা উড়ে গেল আর আসার সময় এক মরা গরুর মাংস নিয়ে এলো।
বাচ্চা বলল –“আরে এটা তো গরুর মাংস নিয়ে এসেছ, মানুষের মাংস কোথায়? তখন শকুনটা উড়ে গিয়ে, শুকরের মাংস একটা মসজিদের পাশে রেখে এলো এবং একটা মন্দিরের পাশে গরুর মাংস ফেলে দিয়ে চলে এলো!!! কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েকশ মানুষের লাশ পড়ে গেল, আর বাপ-বেটায় মিলে খুব তৃপ্তিতে মানুষের মাংস খেল।
বাচ্চাটা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করছে– “বাবা, এত মানুষের মাংস এখানে কি করে এলো??”
শকুন বললো — “এই মানুষ জাতটাই এরকম। সৃষ্টিকর্তা এদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ বানিয়ে জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু ধর্মের নামে এদেরকে জানোয়ার থেকেও হিংস্র বানানো যেতে পারে!!! ”
বাচ্চা বললো- “তোমার অনেক বুদ্ধি, বাবা..”শকুন — “আরেহ, ধুর!!! এটা তো আমি মানুষের কাছ থেকেই শিখছি, এদের একটা অংশ যখনই কোন অনিষ্ঠ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় তখনই সহজ রাস্তা হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করে…”
বুদ্ধি আসলে জমানোর জিনিষ না, বুদ্ধি খরচ করার জিনিষ। মজার ব্যাপার হলো,আপনি যত বেশী বুদ্ধিখরচ করবেন আপনার ততবেশী বুদ্ধি বাড়বে কোন ভাবেই বুদ্ধি কমবে না। তাই একটু ভাবুন বুদ্ধি খাটান, কেন এই সব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের হাতের পুতুল হয়ে আমরা অন্যের অনিষ্ঠের চিন্তা করছি? আর নিজের জন্য বস্তায় বস্তায় পাপ কামাচ্ছি??
মাদার তেরেসা বলেছিলেন, তুমি দৃশ্যমান মানুষকে ভালোবাসতে না পারলে,অদৃশ্য স্রষ্টাকে কিভাবে ভালোবাসবে..! আসুন আমরা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষ সকল মানুষকে ভালোবাসি। মানুষ হিসেবে মুসলিম, অমুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ,জৈন সকলকেই একত্র থাকা উচিৎ। পৃথিবীকে শান্তিদায়ক করা একা মুসলমানদের দায়িত্ব নয় সবারই দায়িত্ব। কেন মানুষের ভিতর বিভেদ থাকবে।
যে যার মতো করে নিজ নিজ ধরমীয় উৎসব পালন করবে,নিজ নিজ মতো করে রীতিনীতি পালন করবে। কোন ধরমেই তো হিংসা,বিদ্বেষ, হানাহানি, কাটাকাটি, মানুষ হত্যা, ব্যাভিচার, অবৈধ অর্থ উপার্জনের কথা ইত্যাদি অনৈতিক বিষয় সাপোর্ট করে না। তাহলে বিশ্বময় কেন অশান্তি থাকবে?প্লিজ, আমার কথাটি ভুলভাবে আবার ব্যাখ্যা করবেন না।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।