শিরোনাম

[৩] জামায়াতের মিশন সফল: সরকার-হেফাজতকে মুখোমুখী, চরমোনাইকে বিতর্কের পায়তারা: কে. এম. নূহু হোসাইন

ভিতরে যা আছে-(জামায়াত প্রসঙ্গে আলেমদের মতবিরোধ-জামায়াতকে কারা কারা সমর্থন করে না)

[তৃতীয় পর্ব:]
জামায়াত প্রসঙ্গে আলেমদের মতবিরোধ:
জামায়াত দলটি প্রতিষ্ঠাতা থেকে দেশের ওলামায়ে কেরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ইসলামিক দল ও জনসাধারণের কাছে বিতর্কিত একটি দল হিসেবে বিবেচিত। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলেমদের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের নেতারা বিতর্কিত। তাদের দলীয় সংগঠনের নামের ভুল। রাসূলের সুন্নাহ বাদ দিয়ে, নেতা-কর্মীরা অইসলামিক কালচার গ্রহণে সদা ব্যস্ত। নেতাদের ভুল সংশোধনের সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে ভুল শোধরানোর জন্য এগিয়ে আসেননি। চরমোনাইয়ের পীর ফজলুল করীম (রহ.) তাদের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জও দিয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চ্যালেঞ্জ গ্রাহন না করে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা সেই চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দিয়েছেন।

জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আ’লা মওদুদীর আক্বিদাগত ভুল সংশোধনের জন্য আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরীসহ দেশের অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বহু বই লেখেছিলেন। তাদের ভুল বা আকিদাগত সমস্যা পরিত্যাগ না করে দীর্ঘদিন দম্ভের সাথে তাদের সংগঠন পরিচালনা করে আসছিলেন। এমনকি তাদের সাথে আত্মীয়তা করা ও তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরুহ তাহারিমা গুনাহ বলে ওলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছেন তৎকালীন সময়। [কারণ তারা সাহাবায়ে আজমাঈন ও নবী-রাসূলদের বিভিন্ন সময় ভুল ধরতেন, যেটা মওদুদীর লিখিত বই দ্বারা প্রমাণিত]। পঞ্চম পর্বে বিস্তারিত রেফারেন্স সহ দেওয়া আছে।

তাদের উক্তি ছিল আমাদের বড় দল, বড় সংগঠন আমরা ছোট সংগঠনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি না, আমরা সঠিক পথে আছি। কোন এক সময়ে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী গর্ব ও অহংকার করে বলেছিলেন আমরা সূর্যের আলো। আর চরমোনাই কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, তারা মোমের আলো। কোনদিন সূর্যের আলো মোমের আলোর সাথে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে না। কালের পরিবর্তনে দেখা গেল সূর্যের আলো নিভে গিয়ে মোমের আলো প্রজ্বলিত হয়েছে।

তাদের দল ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক পরিচালনা করলেও দলের নেতাকর্মী ও শিবিরের ছেলেদের সারে তিনহাত বোর্ডির ভিতরে ইসলাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দাড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী তাদের লাগেনা। সংগঠনের মধ্যে ডক্টর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, মাস্টার, অধ্যাপক, ব্যারিস্টার, আর্মি পার্সন, সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন পেশার দায়িত্বশীল ও কর্মীরা আছেন। আলিয়ার আলেম দুই-একজন খুঁজে পাওয়া গেলেও তারা আমলহীন আলেম বেশিরভাগই। কওমী আলেম তাদের ভিতরে নেই! একটা ইসলামীক সংগঠন দাবী করে অথচ তাদের নেতাকর্মী ও শিবিরের ছেলেদের যদি দাড়ি, টুপি, জুব্বা, বাহ্যিক আমল যদি না থাকে-তাহলে আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্রদল-ছাত্রলীগের ছেলেরা কি অন্যায় করেছে? তাদের কাছে প্রশ্ন রেখে দিলাম, সৎ সাহস থাকলে আনসার দেওয়ার জন্য বলা হল।

সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ) জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে মন্তব্য করে বলেছিলেন, জামায়াতের তিনটি গুণ: (এক) বেয়াদব (দুই) বে-আমল, (তিন) ঊশৃংখল। যা পরবর্তীকালে তাদের আচার-ব্যবহারে হুবহু প্রমাণিত হয়েছে একাধিক বার।

আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী কোন এক বক্তৃতায় বলেছেন, কোন ক্বওমীর আলেম যদি জামায়াতের সংগঠন করে, তাহলে বুঝতে হবে ঐ আলেমের প্রতি কোনো না কোনো ওস্তাদের বদদোয়া বা অভিশাপ আছে। এক লক্ষ হাদিসের হাফেজ আল্লামা দরখাস্তী (রহ) বলেছেন, যদি কোন দেশকে কমিউনিস্টরা দখল করে নেয়, তাহলে ইসলাম আসতে পারে। পক্ষান্তরে কোন দেশ যদি জামায়াত দখল করে নেয়, তাহলে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত কোনদিন ইসলাম আসবেনা। কারণ কমিউনিস্টরা ইসলাম মনে করে ইসলাম ধ্বংস করে না, বরং তারা ইসলামের বিরুদ্ধ হিসেবে ধ্বংস করে। যখন ইসলাম বুঝবে তখন ইসলামের ছায়াতলে চলে আসবে। আর জামায়াত গায়েরে ইসলামকে ইসলাম মনে করে…। আরো বহু বড় বড় আলেমদের যুগোপযোগী মন্তব্য তুলে দাঁড় করাতে পারলাম না, লেখার পরিসর বড় হবে বিদায়।

মুফতি ফয়জুল করীম এক মাহফিলে বলেছেন, জামায়াত যেখানে যেখানে লাগবে সেখানে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। জামায়াত লাগছে আলিয়া মাদ্রাসার মধ্যে, আলিয়া মাদ্রাসা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। জামায়াত লাগছে ইত্তেহাদুল উম্মার মধ্যে, ইত্তেহাদুল উম্মাহ শেষ। জামায়াত লাগছে বিএনপির মধ্যে, বিএনপি শেষ। জামায়াতের পয়জন যেখানে লাগবে, সেখানে শেষ। মুফতি ফয়জুল করীমের বক্তব্য হেফাজতের সংকট বিশ্লেষণ করলে ১০০% রাইট বলে বিবেচিত হয়। কারণ জামায়াত হেফাজতের মধ্যে লাগছে, হেফাজতে ইসলাম শেষ।

জামায়াতকে কারা কারা সমর্থন করে না:
যেমন: কওমী গরনার আলেম সমাজ, আলিয়ার ৯৯% আলেম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও তাদের অনুসারীরা, চরমোনাই পীর সাহেব ও তাদের অনুসারীরা, ছারছীনার পীর ও তাদের অনুসারীরা, তাবলীগ জামায়াত ও তাদের অনুসারীরা, ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ও তাদের অনুসারীরা, সুন্নিয়া দরবারের আলেম ও তাদের অনুসারীরা, আটরশি ও তাদের অনুসারীরা, বাতিল-পীরগণ, আওয়ামী লীগ সরকার ও জামায়াতের শরিক ভাই বিএনপি, সর্বোপরি হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামগণ ও সর্বস্তরের জনসাধারণ। তাহলে এখন বুঝতে পারেন যে, জামাতকে কারা কারা সমর্থন করেন।

দেশের উল্লেখ যোগ্য ওলামায়ে কেরামগণ, ইসলামিক সংগঠন, হেফাজত, চরমোনাই, তাবলীগ জামাত, ছারছীনা ও কওমী আলেমরা যদি জামাত কে সমর্থন না করে- তাহলে জামায়াতকে সমর্থন কারা করে। কেহই তাদেরকে সমর্থন করে না, শুধু তাদের দলীয় লোক ছাড়া। এ অবস্থায় তারা কিসের উপর ভিত্তি করে বাহাদুরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার আশা করে? সেটা আমার বোধগম্য। কিয়ামত কায়েম হবে, বাট জামায়াতের মাধ্যমে কোনদিন দেশে ইসলাম কায়েম হবে না। কারণ মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদা ও জামাতের ভুল সংশোধন করতে পারবেও না আর উল্লিখিত ওলামায়ে কেরামগণ, ইসলামিক দলের সাথে জোটবদ্ধও হতে পারবে না। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করে তাদের জীবন শেষ করতে হবে। হয় খালেদা না হয় হাসিনা এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ তাদের রাজনীতি। তাদের এককভাবে রাজনৈতিক করার স্বপ্ন পূর্বে হারিয়েছে।

চলবে…..

লেখক, কলামিস্ট, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সম্পাদক: দৈনিক ওলামা কন্ঠ, চেয়ারম্যান: শাপলা টেলিভিশন।

নিউজটি শেয়ার করুন :