শিরোনাম

[৪] জামায়াতের মিশন সফল: সরকার-হেফাজতকে মুখোমুখী, চরমোনাইকে বিতর্কের পায়তারা: কে. এম. নূহু হোসাইন

ভিতরে যা আছে-(জামায়াত কেন বিতর্কিত)

[চতুর্থ পর্ব:]
জামায়াত কেন বিতর্কিত:
জামায়াত (প্রথম) বিতর্কিত হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর আকিদা লালন করে। মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদা ও কিছু লিখিত কিতাব, তাফসিরে তাফহীমুল কুরআন আলেম সমাজের কাছে বিতর্কিত হয়েছে।তাদের সাথে আকিদাগত মতবিরোধ, মতপার্থক্য পূর্বে থেকেই ছিল এখনও আছে। জামায়াতের নেতারা ভ্রান্ত আকিদাসমূহ বিগত দিন থেকে লালন করে আসছেন।

এমনকি ছাত্র শিবিরের ছেলেদের জন্য সিলেবাসভুক্তও করেছেন। যদিও মাও. মতিউর রহমান নিজামী তার লিখিত ইক্বামতে দ্বীন বইটিতে লিখেছেন মওদুদীর ব্যক্তিগত ভুল আকিদা জামায়াত ইসলাম দায়ভার নেবে কেন?। আসলে তারা মুখে ও খাতা-কলমে বললেও ঠিকই মওদুদীর আকিদা লালন করে আসছেন। মওদুদী আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যাপারে যে কুৎসিত মন্তব্য করেছিলেন, সে ব্যাপারে মতিউর রহমান নিজামী একমত ছিলেন না। জামায়াত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত তাদের প্রতিটা কার্যকলাপে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়ে আসছে।

জামায়াত দ্বিতীয় বিতর্কিত নারী নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার কারণ। একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন দাবী করে নারী নেতৃত্বকে জায়েজ মনে করা কতটুকু জঘন্যতম অপরাধ সেটা বলা বাহুল্য। যেখানে কালামুল্লাহ শরীফে বলা হয়েছে- الرجال قوامون على النساء সংক্ষেপে অর্থ হলো, ঘরে বাইরে নেতৃত্ব দেবেন পুরুষ। কোনো মুসলমান কখনো নারীদেরকে মসজিদে ইমামতিতে মনোনীত করেন নি। সবচেয়ে বড় ইমাম হল রাষ্ট্রীয় ইমাম বা আমীর। সেখানে নারীকে ঈমাম মেনে নেওয়া কোন কেয়াসের দলিলে জায়েজ আমার বুঝে আসেনা। তাদের কাছে প্রশ্ন থেকে গেল। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বক্তব্যে বলেছিলেন, নারী নেতৃত্ব হারাম।

আবার তারাই নারী নেতৃত্বে আরাম মনে করে বিএনপির সাথে জোট করেছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা বলেন, রাসুলের ইতিহাস থেকে কিয়াস করে নারী নেতৃত্ব মেনে নিয়েছি। অথচ তৎকালীন সময়ে চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি ধর্মভিত্তিক দল রাজপথে কাজ করছিলেন। তাদের সাথে জোট করে কাজ করতে সমস্যা ছিল কোথায়? বলা যেতে পারে তাদের কিয়াসের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা দখল ও এমপি-মন্ত্রী হওয়া। তা হলে তো চরমোনাই পীর ফজলুল করীম (রহ) এরকম কিয়াস করলে তারাও তো এমপি মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু ইসলামের কি অবস্থা হতো, সেটা কেবল জ্ঞানীরা চিন্তা ভাবনা করলে বুঝতে পারবেন।

মূলত পূর্বে থেকেই জামাতের টার্গেট ছিল কওমী আলেমদের, হেফাজত ও চরমোনাইকে কিভাবে বিতর্কিত করা যায়। তারা সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধের দায় নিয়ে জীবন-যাপন কঠিনভাবে ব্যহত হচ্ছে এবং আগামীর পথও অন্ধকার। অপরদিকে চরমোনাই হেফাজত মাঠে থাকবে এটা কি মেনে নেওয়া যায়! তাদেরকেও সরকার ও জনগণের কাছে বিতর্কিত করতে পারলে মাঠ খালি হবে। আর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া সম্ভব। মাঠও খালি হবে না, গোলও হবে না। গবেষণা দ্বারা বলা যেতে পারে, জামায়াতের মিশন সফল হয়েছে। কারণ সম্প্রীতি সময়ে হেফাজত ইসলাম সরকারের রোষানলে পড়েছে, এটা ছিল জামাতের ষড়যন্ত্র।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ)’র চক্ষু অন্তরালে হেফাজতের কুচক্রী কিছু চামচার সাথে জামাত ইসলামের নেতার সাথে লিয়োজো ছিল। তার প্রথম প্রমাণ হেফাজতের শাপলা চত্বর। সেদিনকার ঘটনায় সরাসরি জামায়াত ও বিএনপির সাথে হেফাজতের কতিপয় চামচার সাথে যোগসংযোগ ছিল। সেটা সরকার ও সরকারের গোয়েন্দাদের গোপন তথ্যে ছিল। হেফাজতের ব্লগার বিরোধী কর্মসূচি সর্বোচ্চ ৪ টা পর্যন্ত চলবে, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

আবার ৬-ই মে, বেগম খালেদা জিয়া সরকার পতনের কর্মসূচি। হেফাজত সকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে। সকাল হলেই জামায়াত-বিএনপি জুব্বা টুপি পরিধান করে হেফাজত সেজে তাণ্ডব চালিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে। বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতীয়মান হয়। বাকিটা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। অর্থাৎ হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় যাবে। এটা ছিল জামায়াত-বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার ফন্ধি। অপরদিকে হেফাজতকে টিস্যু হিসাবে ব্যবহার করবে।

সরকার নিশ্চিত বুঝতে পেরেছিলেন কিছু একটা ঘটবে। সরকারের গদি ঠিক রাখার জন্য যা যা করার দরকার সব প্রস্তুতি নিয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছিলেন। সেদিন রাত্রে কি ঘটেছিল তা সকলেই জানেন। তবে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল। শাপলা চত্বরের শহীদদের রক্তের দায় কারা নিবে- হেফাজতে ইসলামের ক্ষমতালোভী চামচারা নিবে?না খোদ হেফাজত সংগঠন নিবে? না জামায়াত- বিএনপি? নাকি তৎকালীন হাসিনা সরকার?। এ প্রশ্ন পাঠকের কাছে রেখে দিলাম।

মজার কথা হল হেফাজতকে বুদ্ধি দিয়ে মাঠে রেখে সন্ধ্যার আগেই জামায়াত- বিএনপির নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে উধাও। জামায়াত মনে করেছিলেন আপাতত হেফাজত নিঃশেষ হয়ে গেছে। আহমদ শফী ইন্তেকালের পরে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ভেঙ্গে পড়েন। এই সুযোগে হেফাজতের সরলতা কাজে লাগিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা হেফাজতের নতুন কমিটিতে ঢুকে পড়েন। জামায়াত কেন! চরমোনাই ও হেফাজতের মধ্যে নাক গলাতে আসবে? বোঝা গেল তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। স্বার্থ হাসিল করার জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছে। হেফাজতের বিলুপ্ত নতুন কমিটিতে জামায়াতের ৮ জন কেন্দ্রীয় জায়গা দখল করে নেন, বিএনপির ১ জন। এটাই ছিল জামাতের সফলতা অপরদিকে হেফাজতের ব্যর্থতা।

এদিকে হেফাজতকে পক্ষে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে চরমোনাই পীর সাহেবকে নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য, সরকারের দালাল বলে রীতিমতন কটুক্তি করে আসছেন। জামায়াত হেফাজতকে তো সরকারের মুখোমুখি করে দিয়েছেন। জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও জেলে অপরদিকে হেফাজতের নেতাকর্মীরাও। এ সফলতায় একটু হলেও তাদের স্বস্তি লেগেছে। এখন তাদের টার্গেট চরমোনাইকে বিতর্কিত করে জনগণের সামনে অপদস্ত ও অপমানিত করে সরকারের মুখোমুখি করে দিতে পারলেই তাদের অসমাপ্ত টার্গেট সফল হবে। তাহলে তাদের মনে আর কোনো আফসোস থাকবে না।

জামায়াতের নেতাকর্মীরা চরমোনাইর বিরুদ্ধাচরণ করে হেফাজতের পক্ষে বিভিন্ন সময় লেখালেখিও করে যাচ্ছেন। শেষমেস কি হলো! হেফাজত চরমোনাইর মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে দিল। একটি প্রবাদ আছে- “মায়ের চেয়ে যার মায়া বেশি, তাকে বলে মায়া রাক্ষসী।” চরমোনাই-হেফাজতের কর্মীরা কওমী আলেম। হেফাজত-চরমোনাই পূর্বে থেকেই একে অপরকে সাপোর্ট দিয়ে আসছিলেন। এখন হেফাজতের সময় এসেছে দুষ্কৃত-সমালোচিত ও রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নতুন কমিটি গঠন করা সময়ের দাবী।

পরিশেষে জামায়াত ইসলাম যদি তাদের ভুল শুধরে নেয় ও মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদা পরিহার করে এবং খালেদা জিয়ার আচল ছেড়ে তওবা করে আসলে তারা সকলের দ্বীনের ভাই। কওমী আলেম ও চরমোনাই ওয়ালাদের ব্যক্তিগত তাদের বিরুদ্ধে আক্রোশ নেই। তাদের সাথে বিরোধিতা আল্লাহর জন্যই। চরমোনাই পীর সাহেব-হেফাজতে ইসলাম, কওমী আলেম সমাজ ও মুসল্লিগণ, তাদেরকে হাসিমুখে গ্রহণ করে নিবেন।

চলবে…..

লেখক, কলামিস্ট, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সম্পাদক: দৈনিক ওলামা কন্ঠ, চেয়ারম্যান: শাপলা টেলিভিশন।

নিউজটি শেয়ার করুন :