শিরোনাম

স্বৈরশাসকদের বড় বৈশিষ্ট্যই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা : হাবিব রুদ্র, নোয়াখালী কলেজ

 

৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা, ৬৬ এর গণআন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন,৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল প্রতিটা আন্দোলন এর মূলভিত্তি। ছাত্রসমাজের তীব্র আন্দোলন এর মুখে শাসকগোষ্ঠী রা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল তখন। ছাত্রদের আন্দোলন সংগ্রাম ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেরণার উৎস।

প্রতিটা স্বৈরশাসক এ জানে, ছাত্র সমাজ কখনো অন্যায় এর নিকট মাথানত করে না।স্বৈরশাসকদের মানবতা বিরোধী সকল কাজের, জনবিরোধী কর্মকান্ডের শুরুতেই বিরোধিতা করে ছাত্রসমাজ। ছাত্রসমাজ এর আন্দোলন এর কারণে স্বৈরশাসক রা দেশবিরোধী কর্মকান্ড করতে বাধার সম্মুখীন হয়। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যায়, কোন রক্তুচক্ষুকে ছাত্রসমাজ ভয় পায়না।
সেজন্য স্বৈরশাসকরা ছাত্রদের এ সমস্ত আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দমিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্র রাজনীতির অজুহাত তোলে।

সম্প্রতি বুয়েটের আবরার হত্যাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে অাওয়াজ তোলা হচ্ছে তার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে স্বৈরশাসকদের বীভৎস রুপ, তারা জানে এ ছাত্র সমাজ কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সহ গনমানুষের সকল দাবি দাওয়ার পক্ষে সর্বদা সোচ্চার ছিল। এরা আগামী দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের জন্য হুমকি হবে। এ ছাত্র সমাজকে এখনি রাজনীতি মুক্তের আওতায় আনা না গেলে দেশবিরুধী যে ষড়যন্ত্র গুলো রয়েছে তাতে সফল হওয়া যাবেনা। ভারতের আগামীদিনের আধিপত্য, সাম্রাজ্যাবাদ কে বৈধতা দিতে হলে ছাত্র সমাজ কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হয় ছাত্র সমাজ দেশবিরুধী ষড়যন্ত্র রুখে দিবে।

অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ফোর্স দূর্বল হবে। যা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যে কোন অন্যায় অবাধে করার সুযোগ করে দেবে। প্রতিবাদ হবে না। সরকার চায় ছাত্ররা- তরুণ- যুবকরা মারামারি – হানাহানি এগুলোকেই রাজনীতি ভাবতে শিখুক, রাজনীতির সাথে অপরাজনীতির পার্থক্য না বুঝুক। এভাবেই এরা অরাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চায়।শাসকশ্রেনী চায়- একটা ‘সাইলেন্ট জেনারেশন’ তৈরি হোক যারা দেশ নিয়ে – মানুষ নিয়ে ভাববে না। কথায় কথায় বলবে ” I hate politics” এরা খেলাধুলা আনন্দ বিনোদন নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে। আর অবাধে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তারা নিজেদের ভোগবাদীতায় পরিণত করবে।ফ্যাসিস্ট সরকার তার ইচ্ছা মাফিক রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনা করবে।

তার স্বৈরশাসন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তাই একটি গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে হত্যা-রাহাজানি সৃষ্টি করে আমার ছাত্র সমাজ ও পরিবারকে ছাত্ররাজনীতির প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি করিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছে।

এটা কোন সমাধান নয়। রাজনীতি আপনার জীবনের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই, আপনি আপনার অধিকার রক্ষার লড়াই ও সংগঠন গড়ে তুলুন। এটাই প্রকৃত রাজনীতি। ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি কারী ছাত্রসংগঠনগুলোকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হোন।সকল মত ও আদর্শের ছাত্র সংগঠন কে রাজনীতি করার সম-সুযোগ দেওয়া হোক।ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও ধর্মবিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করুন। সকল সন্ত্রাসী সংগঠনকে রাজনৈতিক – মতাদর্শগত-সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে পরাস্ত করুন।

আসুন, সন্ত্রাসী- অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্র রাজনীতির আদর্শবাদী ও সংগ্রামী ধারাকে শক্তিশালী করি। মনে রাখবেন স্বৈরাচাররা সবসময়ই ছাত্রসমাজের আন্দোলন কে দমিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো সকল অন্যায়, অবিচার রাহাজানি, ছাত্রসমাজের আন্দোলন দ্বারাই প্রতিহত হয়। তাদের আন্দোলন, সংগ্রাম দ্বারাই সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার পূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন :