শিরোনাম

ফাতিমা (রাঃ)’র ইন্তেকাল: মোস্তফা হারুন, সহকারী পুলিশ সুপার

 

হযরত আলী (রা:) ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গেলেন। এদিকে হযরত ফাতিমা (রা:) গায়ে অত্যান্ত জ্বর অবস্থায়৷ ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করেছেন ৷ আলী (রাঃ) মসজীদ থেকে এসে দেখে ফাতিমা কাঁদতেছেন। আলী (রাঃ) প্রশ্ন করলেন ও ফাতিমা তুমি কাঁদ কেন? ফাতিমা কোন উত্তর দিলেন না৷

ফাতিমা আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। আলী (রা:) কয়েকবার প্রশ্ন করার পরে ফাতিমা (রা:) কাঁদতে কাঁদতে বলেন ও আলী আমি স্বপ্নের মধ্যে দেখতেছি আমার আব্বাজান মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে
কি যেন তালাশ করতেছেন। ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় আমি পিছন দিক থেকে আমার আব্বাজান কে ডাক দিলাম৷

ও আব্বাজান আপনি কি তালাশ করতেছেন? আব্বাজান মুহাম্মাদুর (সঃ) বলতেছেন ও আমার ফাতিমা আমিতো তোমাকে তালাশ করতেছি, তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ আরো বললেন আমার ফাতিমা আজকে তো তুমি রোজা রাখবা। সাহরী করবা আলীর দস্তরখানায়, আর ইফতার করবা আমি আব্বাজানের দস্তরখানায়।

আলী (রাঃ) এই স্বপ্ন শোনার পর দু’জনের বুঝতে বাকী থাকলোনা, যে ফাতিমা আজকেই ইন্তেকাল করবেন৷ দু’জন আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন৷ এই সময়ের মধ্যে হযরত হাসান হুসাইন (রাঃ) এসে জিজ্ঞাসা করতেছেন, ও আব্বাজান ও আম্মাজান আপনারা দু’জন কাঁদেন কেন? ফাতিমার (রা:) এর একটা অভ্যাস ছিল, যখন হাসান হুসাইন (রা:) কোন কাজে
বিরক্ত করতেন তখন দু’জনকে নানাজান এর কবরের কাছে যেতে বলতেন।

আজকেও ফাতিমা বলেন তোমরা দুইভাই এখন নানার কবরে চলে যাও। কবরের নিকট যাওয়ার সাথে সাথে কবর থেকে আওয়াজ আসলো ও আমার আদরের নাতীরা এই মূহুর্তে তোমরা আমার কাছে কেন আসছো। আমার কাছে তো সব সময় আসতে পারবা। এখন যাও যেয়ে মায়ের চেহারার দিকে তাকায়ে থাক। আজকের পরে তোমাদের মাকে আর পাবেনা৷ এই কথা শোনার পরে দুইভাই কাঁদতেছে আর দৌড়াতে দৌড়াতে আম্মার নিকট চলে গেলেন।

যেয়ে আম্মাকে বললেন যে, তোমরা দুইজন কেন কাঁদতেছো বুঝেছি। নানাজান আমাদেরকে বলে দিয়েছেন আজকের দিনটা তোমার জন্য শেষ দিন। নানাজান তোমার চেহারার দিকে তাঁকায়ে থাকার জন্য আমাদের কে বলেছেন৷ বিকেলের দিকে হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর শরীর বেশি খারাপ হলো। তাকে বিছানাতে শোয়ানো হলো। ফাতিমা (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বক্ষনে আলী (রাঃ) কে তিনটি কথা বলেন ৷

(০১) ও আলী যেদিন থেকে আমি আপনার ঘরে এসেছি, ঐ দিন থেকে আজ পর্যন্ত আপনাকে আমি অনেক কষ্টট দিয়েছি। আলী আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আমি সন্তানের কারনে (আমি মেয়ের কারনে) আমার আব্বাজান অনেক লজ্জীত হবেন৷ বলেন আপনি আমাকে ক্ষমা করলেন কি না আলী (রা:) বলেন ও ফাতিমা তুমি এসব কি বলতেছো।

আমি আলী তো তোমার যোগ্য ছিলাম না তোমার আব্বাজান দয়া করে মেহেরবানী করে তোমাকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আমি আলী তোমাকে কোনদিন ঠিকমত দুইবেলা খানা খাওয়াতে পারিনাই। ও ফাতিমা তুমি বল আমাকে ক্ষমা করছো কি না। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর, তাহলে আমাকে ও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷

(০২) ও আলী আপনার সাথে আমার দ্বিতীয় কথা হল আমি মারা যাওয়ার পরে, আপনি বিয়েকরে নিবেন। দুনিয়ার যে কোন মহিলাকে আপনার পছন্দমত৷ আপনাকে আমি অনুমতি দিলাম৷ আর আমার বাচ্চা দুইটাকে সপ্তাহে একটা দিন আপনার কোলের মধ্যে করে নিয়ে ঘুমাবেন৷

(০৩) ও আলী আপনার সাথে আমার তৃতীয় কথা হল হাসান হুসাইন যখন বালেগ হবে, তখন দু’নো ভাইকে আল্লাহর রাস্তায় সোপর্দ করে দিবেন৷ এবং আমাকে রাতের বেলায় দাফন করবেন। হজরত আলী (রাঃ) বললেনঃ “তুমি নবীর মেয়ে। আমি সবখানে খবর দিয়ে তোমায় দাফন করবো। এতে সমস্যা কি? হজরত ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ “আামার কাফনের কাপড়ের ওপর দিয়ে সবাই অণুমান করবে যে, নবীর মেয়ে কতটুকু লম্বা ছিলো, কতটুকু সাস্থ ছিলো।

এতে আমার পর্দা ভঙ্গ হবে।”হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর লাশের খাটিয়া বহন করার মানুষ মাত্র তিনজন। হজরত আলী (রাঃ) এবং শিশু হাসান ও হোসাইন (রাঃ) আনহুমা ৷ হজরত আলী ভাবছিলেন যে, খাটিয়া বহন করার জন্য মানুষ আরও একজন প্রয়োজন তবেই চার কোনায় চার জন কাঁধে নিতে পারবেন। এমন সময় হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) এলেন ও খাটিয়ার এক কোনা বহন করলেন।

হজরত আলী প্রশ্ন করলেন, ও আবুজর আমি তো কাউকে বলিনাই, আপনি জানলেন কিভাবে? হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) বলেন আমি আল্লাহর রসুল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বললেন হে আবু জর! আমার ফাতিমার লাশ বহন করার জন্য লোকের অভাব তুমি তাড়া তাড়ি চলে যাও। ও আলী আমাকে তো হুজুরে আকরাম (সঃ) আসতে বলছেন।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) আনহা কে যখন কবরে নামাচ্ছেন, তখন হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) কবরের কাছে গিয়ে কবরকে উদ্দেশ্য করে বললেন। আতাদরী মানিল্লাতী জি’না বিহা ইলায়কা- হে কবর তুই কি জানিস আজ তোর মধ্যে কাকে রাখছি?

০১ হা-যিহী সায়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাতী ফা-তিমাতা (রাঃ) আনহা- এটা জান্নাতের সকল মহিলাদের সর্দার ফাতিমা (রাঃ) আনহা৷

কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

০২ হা-যিহী উম্মূল হাসনাইন (রাঃ) আনহুমা- এটা হযরত হাসান হুসাইন এর আম্মা। এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই।

০৩ হা-যিহী ঝাউযাতু আলিয়্যিন কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্- এটা হযরত আলী (রাঃ) এর স্ত্রী! এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

০৪ হা-যিহী বিনতু রসুলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এটা দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে।

খবরদার কবর বেয়াদবী করবি না
আল্লাহ্ তায়ালা কবরের জবান খুলে দিলেন। কবর বললো।

০১ আনা বায়তুয-যুলমাতি আমি অন্ধকার ঘর৷ ০২ আনা বায়তুদ-দূদাতী আমি সাপ বিচ্ছ্যুর ঘর৷ ০৩ আনা বায়তুন-নফরাতী আমি এমন একটি ঘর যার মধ্যে কোন বংশ পরিচয় কাজ হয়না। আমি দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে ফাতিমা কে চিনিনা।

১) হজরত আলীর স্ত্রীকে চিনিনা।
২) হাসান হোসাইনের আম্মাকে চিনিনা। ৪) জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনীকে চিনিনা। ৫) আমি শুধু চিনি- ঈমান আর আমল।

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সকল মোহ থেকে মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। এবং মৃত্যু পরবর্তি কবরের ভয়ানক অবস্থা স্বরণ করে দুনিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।{{{আমিন}}}

নিউজটি শেয়ার করুন :