শিরোনাম

লৌহজংয়ে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের জানাজা অনুষ্ঠিত

আ স ম আবু তালেব ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি ঃঃঃ জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদেনীমণ্ডলে সর্বস্তরের মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক আতিকউল্লাহ খান মাসুদের দ্বিতীয় জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।
আজ ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই গ্রামের মানুষ রাস্তার পাশে বসে ছিল মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ খানের লাশের অপেক্ষায়। সকাল ১০টায় লাশবাহী গাড়িটি খান সাহেবের বাড়ীর উঠানে পৌঁছুলে গ্রামবাসীসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনুরাগীরা ছুটে আসেন মাসুদ খানকে শেষবারের মতো দেখতে।

মাসুদ খানের চাচাতো ভাই আতিকুর রহমান খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা আমাদের বংশের শেষ তারাটি হারালাম। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী জানান, মাসুদ ভাই আমার চেয়ে ২ বছরের বড়ো ছিলেন। তিনি খুব সাহসী ও দক্ষ ব্যক্তি ছিলেন। সারা দেশের সম্মুখসারির মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। পাশের বাড়ীর রিকশা চালক হালিম মুন্সী জানান, আমার এখন বয়স হয়েছে কাজ করতে পারি না, তবে জোয়ানকালে রিকশা চালাইতাম- মাসুদ সাব গ্রামে আইলে আমার রিকশায় বিভিন্ন জায়গায় যাইত।

বেলা সাড়ে ১০টায় বাড়ির পাশে ১৯২৫ সালে নির্মিত খান বাড়ি মসজিদের মাঠে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সম্পর্কে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার, যুগ্ম সম্পাদক বিএম শোয়েব ও মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল। আতিকউল্লাহ খানের ছোট ছেলে জিশাল আতিকউল্লাহ খান পিতার পক্ষে সবার কাছে ক্ষমা ও দোয়া চান। বড়ো ছেলে দিশান আতিকউল্লাহ খান শুক্রবার বাদ আসর জনকণ্ঠ ভবনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। জানাজা শেষে আতিকউল্লাহ খানের মরদেহে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা ইসলাম, লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন, মেদিনীমণ্ডল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন, টঙ্গীবাড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, লৌহজং প্রেসক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমান ঝিলুসহ জেলার সাংবাদিকবৃন্দ।

এরপর আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মরদেহ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্দেশে লাশবাহী গাড়ি বিদায় নেয়। সেখানে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় জনকণ্ঠ ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেখানে চতুর্থ জানাজা শেষে গ্লোব জনকণ্ঠ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শেষ বিদায় জানান। সবশেষে এদিন বিকেল ৫টায় বনানী কবরস্থানে আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে দাফন করা হয়।

গত ২২ মার্চ সোমবার ভোর ৫টায় পিতা মো. দবির উদ্দিন খানের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনই পুত্র আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আতিকউল্লাহ খান মাসুদের পরিবারে ৫ ভাই ও ৩ বোন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আর দুই ভাই জীবিত রইলেন। মৃত্যুর সময় মাসুদ খান ২ পুত্র ও স্ত্রী রেখে গেছেন। তিনি সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ারভাইস মার্শাল কেএম আমিনুল ইসলামের ভাতিজা ও সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সাংসদ উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খানের (বীরপ্রতীক) ছোট ভাই।

১৯৫১ সালের ২৯ আগষ্ট লৌহজং উপজেলার মেদিনী মন্ডল গ্রামের সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে মাসুদ খান জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি শ্রীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার ছিলেন। যুদ্ধে স্থানীয় গোয়ালীমান্দ্রা খালে মাসুদ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনী বহন করা লঞ্চ ডুবিয়ে অনেক পাকসেনাকে খালের পানিতে পরাস্ত করেন। আতিকউল্লাহর নেতৃত্বেই স্থানীয়রা ‘‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’’ স্লোগানে বিজয় উল্লাস করে।

নিউজটি শেয়ার করুন :