(প্রথমে জামায়াতের ইতিহাস-৭৯/৮০বছর’র কার্যকলাপ সম্বন্ধে জানতে হবে) ভিতরে যা আছে- [বাংলাদেশে জামায়াত (১৯৭৯-২০১৩)-প্রথম-নিবন্ধন বাতিল ১৯৭১ সাল-দ্বিতীয়-নিবন্ধন বাতিল ২০১৩ সাল-১৯৭১ সালে জামায়াতের কর্মকান্ড]
[দ্বিতীয় পর্ব:]
বাংলাদেশে জামায়াত (১৯৭৯-২০১৩): অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত আমীর ছিলেন, আব্বাস আলী খান। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করেন।
প্রথম-নিবন্ধন বাতিল ১৯৭১ সাল:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতুন সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের ১৫-ই আগস্টের পর ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামীক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান।
দ্বিতীয়-নিবন্ধন বাতিল ২০১৩ সাল:
২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত দলটির নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ বহাল আছে। তারা বিএনপি’র শরিক দল হিসেবে মাঠে কিছু কিছু কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে অনেক নবীনরা চাচ্ছে যে জামায়াত নামে কোনও সংগঠনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে নতুন নামে দল গঠন করা হবে। কিন্তু প্রবীণরা নতুন নামে দল গঠন করতে রাজি নয়। দীর্ঘদিন বিষয়টি দলের মধ্যে থাকলেও সম্প্রতি দলীয় নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তাদের নেতৃত্বে গতবছরের করোনাকালে ২ মে ২০২০ সালে (এবিপার্টি)- তথা “আমার বাংলাদেশ পার্টির” অগ্রযাত্রা শুরু হয় একাত্তরের রক্তাক্ত গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ ধারণ করে। তাদের রাজনীতির ভিত্তি হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মূলনীতি: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। দলটি করোনাকালীন কিছু সেবামূলক কাজও করেন। দলের মহাসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু জামায়াত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন জামায়াতকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
১৯৭১ সালে জামায়াতের কর্মকান্ড:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করেন। তারাই পথ দেখিয়ে পাকিস্তান বাহিনীকে গ্রামের অভ্যন্তরে নিয়ে যেত। তারা সুনির্দিষ্ট করে বলে দিত কোথায় কোথায় আগুন দিতে হবে।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব- মুহূর্তে তারা ঢাকা শহরে বাসা থেকে তুলে নিয়ে বহু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিলো। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে। এসব অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মীকে মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, তৎকালীন আমির মাও. মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। অধ্যক্ষ গোলাম আজম কারাগারেই ইন্তেকাল করেছেন।
চলবে…..
লেখক, কলামিস্ট, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সম্পাদক: দৈনিক ওলামা কন্ঠ, চেয়ারম্যান: শাপলা টেলিভিশন।