শিরোনাম

জালিমদের নির্বাচিত করাই শত মুসলিম গনহত্যা হচ্ছে

বিষয়: জালিম শাসক নির্বাচিত করাই অবিচার শতাধিক হত্যা গুম খুন গনহত্যার জন্য দায়ী, সে জন্য আমরা দায়ী

লেখক: মাওলানা সাইফুদ্দিন রহমতুল্লাহ
আলোচনা : আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা ও সৎ লোকের নেতৃত্ব না থাকার কারণে শতকরা ৯৫ শতাংশ মুসলমানদের দেশে শত শত খুন গনহত্যা মারামারি চলছে। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী কারণ অসৎ নেতৃত্ব আমরা নির্বাচিত করেছি। যতদিন এ সমাজে আলেম উলামা সৎলোকেরা নেতৃত্ব মেম্বার হতে মন্ত্রী সকল ক্ষেত্রে নির্বাচিত না করবেন ততদিনে ঐ দুর্নিতীবাজ লুটেরা শাসক ও দোসররা ক্ষমতা পেয়ে আপনার ছেলে মারবে, আপনার মেয়ে কে ধর্ষন করবে, আপনার সম্পদ লুন্ঠন করাবে, হামলা মামলা জেল জরিমানা এটা আপনার ভোগ করতে হবে।
ঈমানদারেরা সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধান জাহেলী বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?”[সূরা মায়েদা, ০৫:৫০] আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তাআলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে।”[সূরা নিসা ০৪:৬০]

শানকিতি (রহঃ) বলেন: “আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইনে শাসন করে আল্লাহ তাদের ঈমানের দাবীর প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ তাগুতের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়ার পরেও ঈমানের দাবী- মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এমন মিথ্যা সত্যিই বিস্ময়কর।” সমাপ্ত
আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তার শপথ করে বলছেন: কোন ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলকে ফয়সালাকারী হিসেবে না মানা পর্যন্ত ঈমানদার হবে না। রাসূল যে ফয়সালা দিয়েছেন সেটাই হক্ব; প্রকাশ্যে ও গোপনে সেটাকে মেনে নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।”। [সূরা নিসা, ০৪:৬৫]

আল্লাহ তাআলা বিবদমান বিষয়ে ফয়সালার দায়িত্ব রাসূলের উপর ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য করে দিয়েছেন এবং এটাকে ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের শাসন গ্রহণ করা ঈমানের পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি কল্যাণকর এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।”[সূরা নিসা, ০৪:৫৯]।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: আয়াতে কারিমা “যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ”নির্দেশ করছে যে, যে ব্যক্তি বিবদমান বিষয়ের ফয়সালা কুরআন ও সুন্নাহ হতে গ্রহণ করে না এবং এ দুটির কাছে ফিরে আসে না সে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমানদার নয়।

পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে না তাকে নির্বাচিত করা হারাম। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে এই হারামের প্রতি সন্তুষ্টি ও এই হারাম কাজে সহযোগিতা করা হলো।

কোন মুসলমানকে যদি ভোট দিতে যেতে বাধ্য করা হয় তাহলে সে যেতে পারেন গিয়ে এই প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন অথবা সম্ভব হলে তার ভোট নষ্ট করে দিতে পারেন। যদি এর কোনটাই তার পক্ষে করা সম্ভবপর না হয় এবং এই প্রার্থীর পক্ষে ভোট না দিলে সে নির্যাতিত হওয়ার আশংকা করে তাহলে আমরা আশা করছি এমতাবস্থায় তার কোন গুনাহ হবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত” [সূরা নাহল ১৬:১০৬] এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জবরদস্তির গুনাহ হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৪৫), আলবানী সহীহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন
বিচারব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে। এটা শরী‘আতের নির্দেশ। এই বিধানকে উপেক্ষা করে মানবরচিত আইন প্রতিষ্ঠিত করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত (উছাইমীন, লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ৬/৩৩ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১২১৪৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
اِنِ الۡحُکۡمُ  اِلَّا لِلّٰہِ ؕ اَمَرَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ  وَ لٰکِنَّ  اَکۡثَرَ  النَّاسِ لَا  یَعۡلَمُوۡنَ
‘বিধান দেয়ার অধিকার শুধু আল্লাহ তা‘আলারই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া আর কারোও ইবাদত করবে না। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ সম্পর্কে অবগত নয় (সূরা ইউসুফ: ৪০)। তিনি অন্যত্র বলেন, اَفَحُکۡمَ الۡجَاہِلِیَّۃِ یَبۡغُوۡنَ ؕ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ مِنَ اللّٰہِ حُکۡمًا لِّقَوۡمٍ یُّوۡقِنُوۡنَ ‘তবে কি তারা প্রাগ-ইসলামী বা জাহিলিয়্যাত যুগের বিচার-ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিচারে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৫০)। অন্য আয়াতে বলেন, وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ ‘আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪৪)।
সুতরাং যে সমস্ত শাসক সজ্ঞানে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানকে অপেক্ষা করে নিজের পক্ষ থেকে মনগড়া বিধান তৈরি করে দেশ পরিচালনা করছে, তারা কাফির, তাদের বিপক্ষে জিহাদ করা আবশ্যক (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনি উছাইমীন, ২/১১৮ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৮৪৫৩)।
তবে জিহাদ ফরয হওয়ার জন্য ইসলাম কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। এখানে প্রধান দু’টি শর্ত হল : (১) মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমোদন : আল্লাহর কালিমাহ সুউচ্চ করার জন্য এবং দ্বীনের সাহায্যার্থে জিহাদের অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি মুসলিম শাসকের ইচ্ছাধীন ও গবেষণাধীন। তাঁর আদেশের আনুগত্য করা যরূরী (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৮/৩৯০-৩৯১; আল-মুগনী, ১০/৩৬৮; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮/২২; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১২ পৃ.)। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, ‘ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও তাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা’ নামে (অধ্যায় নং-৫৬, অনুচ্ছেদ নং-১০৯)। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ ‘ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁরই নেতৃত্বে যুদ্ধ করা হয় এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪১)।
(২) পর্যাপ্ত পরিমাণ সামরিক বাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকা: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, শায়খ ইবনু বায ও শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি, সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত করা ব্যতীত জিহাদ করা জায়েয নয়। এতটা শক্তিশালী হতে হবে, যার দ্বারা বাতিল শাসককে পরাস্ত করার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। একাকী কিংবা কিছু লোক মিলে ঝাঁপিয়ে পড়া মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। এভাবে তারা নিজেকে এবং পুরো দেশকে তথা মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। সেই জন্য কোন একজনের নেতৃত্বে সকলের একত্রিত হওয়া অপরিহার্য। মক্কার কাফির ও মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ছাহাবীরা সর্বদা রাসূল (ﷺ)-এর কাছে অনুমতি চেয়েছেন কাফিরদের সহিংস আচরণকে প্রতিরোধ করতে বা তাদের বর্বরতার প্রতিবাদে অস্ত্র তুলে নিতে। কিন্তু কখনোই তিনি অনুমতি দেননি। এক পর্যায়ে দাওয়াত ও তাবলীগের ভিত্তিতে মদীনার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলামী জীবনব্যবস্থা মেনে নেন এবং রাসূল (ﷺ)-কে তাঁদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে গ্রহণ করেন। এভাবে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মুশরিকরা এই নতুন রাষ্ট্রটিকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চেষ্টা করে। তখন রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জিহাদের বিধান প্রদান করা হয় (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৮/৩৯০-৩৯১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে বায, ২৮/২৭০; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮/২২ পৃ.)।

অনুরূপভাবে চুরি বা ব্যভিচারের মত ধ্বংসাত্মক পাপে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামী শরী‘আহ অনুযায়ী মুসলিম শাসকের নির্দেশে হদ্ ক্বায়িম করা বা হত্যা করা অপরিহার্য। কিন্তু ইসলামী শাসকের অনুমতি ব্যতীত কোন পাপের শাস্তি স্বরূপ কাউকে হত্যা করা বা কারোর হাত কাটা নিষিদ্ধ। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি সহ অন্য আলেমগণ বলেন, ‘হদ্ (মৃত্যুদণ্ড, সাজা, শাস্তি) প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টি মুসলিম ইমাম, সুলতান, শাসক অথবা তার স্থলাভিষিক্ত বা প্রতিনিধির উপর নির্ভরশীল। সমাজে নিরাপত্তা ও শান্তির বাতাবরণ অপ্রতিহত রাখার জন্য মুসলিম শাসক ও তাঁর প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য ‘হদ্’ ক্বায়িম করা অনুমোদিত নয়। কোন মুসলিম ব্যক্তি বা সমাজের জন্য হদ্ ক্বায়িম করা জায়েয নয়। কারণ এর ফলে যে, বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ, অস্থিরতা, অরাজকতা, নৈরাজ্য ও অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা সমাজের নেয়  (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২২/৫-১০; কিতাবুল উম্ম, ৬/১৫৪; আল-কাফি ইবনে কুদামাহ, ৩/২৩৪; কুয়েতী ফিকহ বিশ্বকোষ, ৫/২৮০; তাফসীরে কুরতুবী, ২/২৫৬; আল-মুগনী, ৯/৮; মাজমূঊ রাসাইল ইবনে রজব, ২/৬০৮; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৯/৩০৩ পৃ.

নিউজটি শেয়ার করুন :