শিরোনাম

লক্ষ্মীপুরে খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় রসের চাহিদা মেটাতে পারছেননা গাছিরা

 

ওসমান গণি, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ

লক্ষ্মীপুরে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড় উৎপাদন করতে পারছেনা গাছিরা।

শীতের সকালে আবছা আলোয় প্রকৃতি থাকে ভেজা, এক চুমুক খেজুরের রস প্রাণকে করে তাজা। ঋতুবৈচিত্র্যের পালাক্রমে চলছে শীত। নানা রকম খাবার, ফুল-ফল,সবজি ও পিঠা পুলির আমেজ নিয়ে হাজির হয় শীতকাল। শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে অতিপ্রিয় খেজুরের রস।
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেনও খেজুরের রস ছাড়া জমেই না। শীত ও খেজুরের রস যেনও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। রস হচ্ছে খেজুরের গাছ থেকে আহুত মুখোরোচক পানীয় । সকালবেলার ঠান্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেনও অমৃত।

গত কয়েক বছরে এ দেশ থেকে অনেক খেজুরের গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সব অঞ্চলে কম বেশি খেজুর গাছ থাকলেও গাছির অভাবে মিলছে না রসের দেখা।। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল থেকে গাছি আর রস দুটিই বিলুপ্ত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলায় খেজুরের রস ও গুড় খুবই জনপ্রিয়। এই গুড় দিয়ে হরেক রকম পিঠা বানায় গাঁয়ের বঁধুরা। ভাপা, সিদ্ধপুলি, মালপোয়া, লালুয়া, রসের চিতইয়ের মতো বহু রকম পিঠা। আর এই পিঠা বানানো ঘিরে শিশু-বৃদ্ধার বসে থাকার দৃশ্য বাংলার এক পুরোনো সংস্কৃতিরই অংশ।

শীতকাল আসলেই খেজুরের রস নিয়ে রয়েছে অনেক রেওয়াজ। নতুন বিবাহিত মেয়ের স্বামীর বাড়িতে খেজুরের রস ও মোয়া মুড়ি পাঠানোর নিয়মনীতি রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।
পিঠাপুলি ও রসের শিন্নি খুবই জনপ্রিয় লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে।

কিন্তু দিনদিন বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ। চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড় উৎপাদন করতে পারছেনা গাছিরা।

কথা হলো ১৬ বছর যাবত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা একজন অভিজ্ঞ গাছি আব্দুল মতিনের সাথে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চরমন্ডল গ্রামের আব্দুল মতিন জানান, তিনি এবছর মাত্র ত্রিশটা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। গতবছরও যার সংখ্যা ছিলো দ্বিগুণ।

তিনি আরও জানান , চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের রস দিতে না পারলে অনেকের সাথে মনোমালিন্য হয়।

গত ৫ বছর আগেও ৩০০-৪০০ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন চরমন্ডল গ্রামের অভিজ্ঞ এই গাছি।

এভাবে গাছের সংখ্যা কমতে থাকলে খুব বেশি সময় লাগবেনা গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ বিলুপ্ত হতে।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারাতে ১৬ লিটারের প্রতিটিন রস কিনতে হয় ৮০০ টাকা করে।এত বেশি মূল্যে রস কিনে খাওয়া অনেক সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়না। তাই পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের সহযোগিতার মাধ্যমে সচেতনতা ও নতুনভাবে খেজুরগাছ রোপণ কর্মসূচি হাতে নিলে হয়তোবা খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করেন স্থানীয় এই বাসিন্দা।

নিউজটি শেয়ার করুন :