শিরোনাম

অস্তিত্ব সংকটে ‘গহিনখালীর’ খাল

 

এম এ ইউসুফ আলী, পটুয়াখালী: একসময়ে প্রবল খরস্রোত ছিল। প্রসস্থ আর গভীরতায় ছিল পরিপূর্ণ। তখন এ খালের মধ্যে দিয়ে নির্বিগ্নে যাতায়াত করত যাত্রীবাহী বড় লঞ্চ। আজকাল বড় লঞ্চতো দূরের কথা ছোট ট্রলারই যেতে পারে না। ভাটা সময় জেগে ওঠে খালের তলদেশ। পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায় এপার-ওপার। দিনদিন পলি মাটি জমে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খালটি তার নিজস্ব রূপরেখা হারাতে বসেছে। তাই অচিরেই যেন খালটি খনন করা হয়- এমন দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ও রাঙ্গাবালী ইউনিয়ননের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ গহীনখালী খালটি নৌ-যোগাযোগের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে নবগঠিত এ উপজেলার নানামুখী উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বাজার ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যতা সংকটের ফলে ব্যহত হচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলও। অন্যদিকে রাঙ্গাবালী খাদ্যগুদামের খাদ্য-শষ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পশ্চিমে দারছিড়া নদী আর পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে খালটি। দেড়যুগ আগেও ঢাকা-রাঙ্গাবালী নৌ-রুটে এমভি সালাউদ্দিন, এমভি বেলায়েত ও গ্লোরী অব শ্রীনগর নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করত। খালের দুপাশে ম্যানগ্রোভ বনায়নের সৃষ্টি হয়ে খালের প্রস্থ কমে যায় ফলে পলি জমে খালের নাব্যতা সৃষ্টি হয়।

এরপরে কয়েক বছর ছোট লঞ্চ চলাচল করলেও সেগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। আরো জানা গেছে, এখানকার ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ার পাশাপাশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালামাল পরিবহনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভরা জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয় বড় নদীতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বাহেরচর অংশের বেশির ভাগ জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। ফলে দখলদারিত্বে কারণে খালটির দুপাশ সংকীর্ণ হয়ে গেছ। এ ছাড়া খালটির পশ্চিমাংশে কিছুটা নৌযান চলাচলের উপযোগী থাকলেও পূর্বাংশে একেবারেই অনুপযোগী হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বাহেরচর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “খাল খনন করার উদ্যোগ নেই। বরং এখানকার প্রভাবশালী অসাধুশ্রেণির বালু ব্যবসায়ীরা অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করায় খালের কয়েক স্থান থেকে দুপাড় ভেঙে যাচ্ছে।”

রাঙ্গাবালী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, “প্রতি অর্থবছরে রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মেট্রিকট্রন খাদ্যশষ্য এখান থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। খালটির নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় শুকনো মৌসুমে পণ্যবাহী জাহাজ আসা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত খালটি পুনর্খনন করা প্রয়োজন।”

বাহেরচর বাজার ব্যবসায়ী ও রংধনু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান মল্লিক বলেন, “নদী আর সাগরবেষ্টিত এ উপজেলাটি সারা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন। এখানকার লোকজন একমাত্র নৌপথ নির্ভরশীল। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাহেরচর বাজার। গহীনখালী খালটিতে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে নানামুখী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি এখানে সরকারি কোনো চিকিৎসা হাসপাতাল না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীদের এলাকার বাইরে নেওয়াও অসাধ্য হয়ে পড়ে।”

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির আহম্মেদ বলেন, “উপজেলা নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজের স্বার্থে খালটি খনন করা দরকার। তা ছাড়া বাহেরচর বন্দর ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনের দুর্ভোগ কমাতে খালটি খনন করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।”

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, “খালটি যদি জনগুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে অবশ্যই খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে খালটি খনন করার জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ করব।”

নিউজটি শেয়ার করুন :