সেম্পল করার আগে মুল পিলারকে ভেংগে অংশে অংশে বিভক্ত করে নিতে হয়।একটি মুল পিলারের ভিতর ১৬/১৮ টি আধা চক্রাকৃতির মত চাকতি থাকে।দুই তিনটি কাচের শক্ত বোতল থাকে যা সহজে ভংগুর নয়।তবে প্রত্যেকটি অংশে চৌম্বকীয় পাওয়ার থাকে এবং এটা রিয়েল ম্যাগনেটিক পিলার কিনা ও প্রতিটি অংশে ম্যাগনেটিক পাওয়ার আছে কিনা তা যাচাই করতে হয়।ম্যাগনেটিক পাওয়ার যেটার যত বেশি সেটার দাম নাকি ততই বেশি।
সুজন জিজ্ঞাসা করলো,
–তাহলে মুল অংশ থেকে কিভাবে প্রতিটি অংশ সেপারেট করা হয়?
নজরুল উত্তরে জানালেন,
–প্রথমে মুল পিলারটিকে বিশেষ চুন,সুরকী দিয়ে একটি ড্রামের ভিতর ভিজিয়ে রাখতে হয় প্রায় ৭২ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে।এতে করে মুল পিলারের বাহিরের অংশ নরম হয়ে খুলে আসবে।এরপরে সাবধানতার সাথে প্রতিটি অংশের সাথে থাকা নাট বল্টু গুলি বিশেষ রেন্স দিয়ে খুলে খুলে একে অন্যটার কাছ থেকে সেপারেট করে নিতে হয় এবং সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়।একটি অংশ বিক্রি করতে পারলেই জীবনে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না।
যারা বায়ার তারা এর মুল্য বাদেও নাকি বিক্রেতা দলের সদস্যদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও দিয়ে থাকে।
সুজন জিজ্ঞাসা করলো
— কি এমন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় তাকি বলা যাবে?
-জানা গেল,
— বায়ার কোম্পানির পক্ষ থেকে যেসব সুবিধা দিবে তার ভিতর হলো,
১) ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় একটি বাড়ী।
২)একটি অতি মুল্যবান ও আধুনিক গাড়ী।
৩) লাইসেন্স সহ পিস্তল বা রিভলবার।
৪)স্বপরিবারে আমেরিকার নাগরিকত্ব সহ আমেরিকান পাসপোর্ট ও ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা এবং তাকে আমেরিকার সিনেটের সন্মানের সন্মান দেয়া হয়।
৫)দেশ বিদেশের যেকোনো ব্যাংকের একাউন্টে হিউজ পরিমান টাকা ট্রান্সফারের ব্যাবস্থা ওরাই করে দেয়।
আরও অনেক কিছুই আছে যা আর বললো না নজরুল সাহেব।
–আচ্ছা বায়ার সাধারণত কারা হয় এবং এই ম্যাগনেটিক পিলার দিয়ে তারা কি কাজ করে জানতে পারি?
–উত্তরে জানালেন,বায়ার হলো নাসা।নাসার প্রতিনিধিরাই এই সব কিনে থাকে এবং এসব দিয়ে তারা গবেষণা করে।তারা এটার চৌম্বকীয় শক্তির দ্বারা মহাকাশ যানের জ্বালানী শক্তি হিসেবে ব্যাবহার করে।যা অত্যান্ত সাশ্রয়ী হয়ে থাকে তাদের জন্য এবং এটা তারা যুগযুগ ধরে ব্যাবহার করতে পারে।
–আরেকটি বিষয় জানতে চাই নজরুল ভাই,সেটা হলো কটকা প্রাণী যা কিনা গভীর জংগলে পাওয়া যায়।এটা কততে বেচাকেনা হয় সেই সম্পর্কে আপনার আইডিয়া আছে?
–হ্যাঁ, আছে,কটকা প্রাণী বড় এবং ম্যাচুয়ুর হলে এক লক্ষ কোটি টাকা প্রযন্ত দাম হতে পারে।আর ছোট গুলির দাম কম হয়,তবুও হাজার কোটির নিচে নয়।
–কটকা প্রাণী দিয়ে কি কাজ হয় নজরুল ভাই?
–ভাই এটা বড় বড় বিদেশী ঔষধ কোম্পানি গুলি কিনে নেয় এবং এই প্রাণী থেকে সেক্সের ঔষধ তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।আরও একটি মুল্যবান জিনিস ঔষধ কোম্পানি খুজে থাকে সেটা হলো সিলড সাপের বিষ।এই বিষ দিয়েও ঔষধ কোম্পানি গুলো মুল্যবান জীবন রক্ষকারী ঔষধ তৈরি করে বলে জানা যায়।
— আমাদের দেশে কি এই সব কিছুই পাওয়া যায়?
— আমাদের দেশে এই সব কিছুই আছে।তবে এসব ব্যাবসা এবং বেচাকেনা বৈধ না হওয়ায় চোরাকারবারীগন গোপনে গোপনে এসব কেনাবেচা করে। অনেক সময় RAB ও পুলিশের হাতেও এসব মালসহ ধরাও পড়ে।অনেকে এই মালের কথা বলে প্রতারণার জাল বিছিয়ে দেয় এবং প্রতারণা করে মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলে।
— এখন আপনাদের মালের কথা বলেন, আপনাদের লেনদেন কতদুর?
— পিজির ৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিয়েছি।এখন ওরা জানাবে কবে আসবে সেই অপেক্ষায় আছি।এই টেষ্ট নিতে অনেকটা আবহাওয়ার উপরও ডিপেন্ড করতে হয়।
— একটু বুঝিয়ে বলবেন?
— যেমন ধরুন আকাশ মেঘলা থাকলে,বৃষ্টি হলে,বিদ্যুৎ চমকালে টেষ্ট নেয়া যাবে না।কারণ তাতে প্রাণহানী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আবার শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় টেষ্ট নিলে তা ল্যাব পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে।এই মালের নমুনা টেষ্ট নিতে গেলে পরিচ্ছন্ন রৌদ্রজ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।টেষ্ট নেয়ার পর তা তুলা দিয়ে মুড়িয়ে একটি ছোট কাচের বোতলে এয়ার টাইট প্যাক করে নিতে হয়।
এরপরে এটা সিংগাপুরে ল্যাবে পাঠানো হয়।সিংগাপুর থেকে ল্যাব রিপোর্ট ওকে হলে ওরা সারটিফিকেট দেয় এবং সেই সারটিফিকেট দেখে বায়ার বুঝতে পারে মালের রেঞ্জ কতটুকু।যে মালের রেঞ্জ যত বেশি সেই মালের দামও ততবেশি।
— মালের টেষ্ট নেওয়ার জন্য সাধারণত কি উপাদান ব্যাবহার করা হয়ে থাকে?
— এই মালের একমাত্র উত্তম টেষ্ট হলো রাইস টেষ্ট।
— সেটা আবার কেমন?
— রাইস মানে হলো চাউল আমিও জানি আপনিও জানেন।চাউল সেদ্ধ করার আগে শুকনা কাচা চাউল ২২/২৪ টা ধান সহ নিতে হবে।এরপর খোসা ছড়িয়ে নিয়ে ব্রাউন চাউল বের করতে হবে।এই খোসা ছড়ানো ব্রাউন চাউল ম্যাগনেটিক পিলারের ২৪/২৬ ইঞ্চি দুরে রাখতে হবে ব্যাস।কিছুক্ষণ পরে ম্যাগনেটিক পিলার চাউলকে কাছে টেনে নিবে এবং নিজের বডির টাচে নিয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পড়ে চাউলকে অটোমেটিক ছেড়ে দিবে।
চাউলের কালার সোনালী রং ধারণ করবে।টেষ্ট ওকে হয়েছে কিনা তা বুঝতে হলে একটি চাউল হাতে নিয়ে দুই আংগুলের ফাকে রেখে আলতো চাপ দিলেই গুড়া পাওডারে পরিনত হয়ে যাবে।এতেই বুঝা যায় টেষ্ট ওকে,তখন নমুনা সিংগাপুরে পাঠানোর ব্যাবস্থা করতে হয়।
— এ তো দেখছি মজার খেলা এবং রহস্যময়।যা কোনদিন দেখিইনি এবং শুনিও নি।আমাকে দেখাতে হবে।কিন্তু।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।