শিরোনাম

অনুপ্রবন্ধ-৪ সীমানা পিলার: মোস্তফা হারুন (সহ. পুলিশ সুপার)

 

ঢাকা থেকে নজরুল ভাই আমার সাথে মোবাইলে কথা বলে অংশীদারদের ও বায়ারদের নিয়ে অনেক কথাই মোবাইলে শেয়ার করলেন।বললেন এক ঝামেলার কারনে বায়ারেরা বিলম্ব করছে তবে কাজ হবে এটা নিশ্চিত।কিন্তু বন্ধুদের অত্যাচারে এবং হুমকিতে ঢাকায় পালিয়ে থাকতে তিনি বাধ্য হয়েছেন।তিনি কাজ উঠানোর জন্য অব্যাহত চেষ্টা করছেন।ইতিমধ্যে তিনি বায়ারদের সাথে সিংগাপুরেও গিয়েছিলেন। বউ বাচ্চাদের দেখতে পাবনাতেও যেতে পারছেন না।

গেলে বন্ধুরা উনাকে মেরেই ফেলবে বলে জানিয়েছে,তাই মোবাইল নাম্বারটিও বদলে ফেলেছিলেন নজরুল ভাই। নজরুল ভাইয়ের ভাষ্যমতে উনার কাজটা বাংলাদেশ ব্যাংকের এন ও সির জন্য আটকে আছে এই ধাপ পেরুলেই আর কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তার সংগীরা তা কেউ বিশ্বাস করছেনা।অতিরিক্ত দুই বছর সময় লাগায়।তারা নজরুল ভাইয়ের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল।

সুজনকে তিনি কয়েক দফা অনুরোধ করেছিলেন তাদেরকে বোঝানোর জন্য।সুজন তাদের সাথে কথাও বলেছিলো কিন্তু তাতেও কিছু হয়নি।তারা তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চায়।নজরুল ভাইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চায় না। তারা একাধারে ভাবি ও বাচ্চাকেও অপহরণের হুমকি দেয়।এসব নিয়ে নজরুল ভাই ভিষণ মানসিক চাপে ভুগতে থাকে।নজরুল ভাইয়ের কাছে সুজনের মোবাইল নাম্বার ছিল ও ভাবির মোবাইল নাম্বার ছিল।
একদিন ভাবি সকালে কান্না জড়িত কন্ঠে সুজনকে রিং দিয়ে জানায় যে,নজরুল ভাই Heart Attack করে মারা গেছে।উনার লাশ আনার জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন।ভাবি নজরুল ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য তিনি নজরুল ভাইয়ের বন্ধুদের দেয়া অব্যাহত মানসিক চাপকে দায়ী করেন।

কি আর করার সব পরিকল্পনার এখানেই সমাপ্তি।বায়ারগন একমাত্র নজরুল ভাইকেই চিনতো,তার সাথেই সব কিছুই চুড়ান্ত হয়েছিল।তাই নজরুল ভাই মৃত্যুর সাথে সাথে এই ব্যাবসারও মৃত্যু ঘটে।মৃত্যু কালে নজরুল ভাই,ভাবি ও বাচ্চার জন্য কোন সম্পদ রেখে যেতে পারেননি।তাই ভাবিকে পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে হয়েছিল।
ঠিক এমন আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ্ করছি।অতি লোভ মানুষকে কোথায় নিয়ে দাড় করায় তা উপলব্ধি করার জন্য।

কবির সুজনের স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।একসাথে ইন্টারও করেছে।এরপরে কবিরের লিখাপড়া তেমন এগোইনি।কবিরদের “কবির বিড়ি” নামের একটি বিড়ি ফ্যাক্টরি আছে।New Market এ একটি বড় কাপড়ের দোকান আছে এবং থানার মোড়ে কবির পেপার হাউস নামের কাগজের ডিলারশীপ আছে।পারিবারিক ভাবেই তারা অত্যান্ত ধনী ও ব্যাবসায়ী বুনেদি পরিবার। কবির যখন বিয়ে সাদী করে তখনও সুজন ছাত্র।বিয়ের পর কবির তার ভাগে পায় পৈত্রিক সুত্রে কাগজের ডিলারশীপের দোকান।প্রায় দেড় দুই কোটি টাকার সম্পদ।একটি বাড়ী পায়।

বউ এবং বাবার দেয়া সম্পদ নিয়ে তার ভালই দিন কাটছিল। হঠাৎ করে সে এই ম্যাগনেটিক পিলার গ্রুপের সাথে জড়িয়ে পরে।কবিরের সাথে সরাসরি ম্যাগনেটিক পিলারের মালিকের যোগাযোগ না ঘটলেও তার যোগাযোগ ঘটে তৃতীয় পক্ষের সাথে।
এরপরে টাকা লগ্নির পালা একের পর এক চাহিদা মিটাতে থাকে তৃতীয় পক্ষের দাবীর স্বপক্ষে।বিনিময়ে সে পাবে এক হাজার কোটি টাকা।
কবির স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে।এই তো কাজ হয়ে গেলেই সে বাংলাদেশের ভিতর অন্যতম একজন ধনী ব্যাক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে।

এই ভাবে সে মাত্র কয়েক বছরে এর পিছনে টাকা লগ্নি করতে গিয়ে বাড়ী,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সব কিছুই বিক্রি করে দেয় এবং একটি ভাড়া করা বাসাতে উঠে। সে তখনও বুঝতে পারেনি যে,সে একটি প্রতারক চক্রের দ্বারা সন্মহিত হয়ে গেছে।একসময় কবির পথের ভিখারির মত জীবনযাপন করতে থাকে।তার এই পরিবর্তন লক্ষনীয়ভাবে বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে। বন্ধুরা এমন দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে মুল কারণ জানতে চাইলে সে ঘটনা খুলে বলে। এতদিনে সেই প্রতারক চক্র গা ঢাকা দিয়েছে,তার কোন হদিস নেই।

সেই থেকে কবির বন্ধুদের দেখলেও লজ্জায় অপমানে অন্য পথ দিয়ে চলে যায়।সে আর কোন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখেনা।সুজন জানেনা তার সেই প্রিয় বন্ধু কবির এখন কোথায় থাকে,কি অবস্থায় আছে।কথায় আছে “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” হয়তো কবিরের জীবনটাও এই প্রবাদ বাক্যের মত প্রতিফলিত হচ্ছে। সুজন যখন খুলনার কোন এক থানার ওসি।তখন সুজন একদিন তার প্রিয় বন্ধু আরমানের মোবাইলে কল পায়।মোবাইলে রিং পেয়ে সুজন মোবাইল ধরে। আরমান চট্রগ্রামে থাকে।কোন কারণে ব্যাংক থেকে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল ব্যাংক।আরমান এখন বেকারের মত জীবনযাপন করছে।তার তিনটা পুত্র সন্তান সহ চট্রগ্রামে শশুড় বাড়ীতেই থাকে।আরমান রিং করে সুজনকে বলে সুজন ভাই,খোজ নিয়ে দেখেন তো আপনার থানা এলাকায় ফুলবাড়ী গেইট এলাকায় নান্নু নামের কোন ব্যাবসায়ী থাকে কিনা?

যদি নান্নু নামের কেউ থাকে তাহলে তার খোজ নিয়ে বিস্তারিত আমাকে জানাবেন।লোক হিসেবে সে কেমন এবং তাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা।
সুজন জানতে চায়,নান্নুর কি প্রয়োজন? জবাবে আরমান জানায়,বিস্তারিত আপনার ওখানে গিয়ে জানাবো।আগে লোকটির খোজ নিন।
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :