সুজন বন্ধুর অনুরোধে তার থানা এলাকাধীন ফুলবাড়ী গেইট এলাকায় নান্নু নামের একজনকে খুজে পায়।সুজন লোকটিকে ফুলবাড়ী গেইট পুলিশ বক্সে ডেকে পাঠায়। লোকটি এলে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করে সুজন নিশ্চিত হয় যে,এই ব্যাক্তিই নান্নু।লোকটিকে আরও জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হয় যে,এই লোকটির সাথেই আরমানের কথা হয়েছে মোবাইলে। লোকটিকে আরমানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে,আরমান ভাইয়ের খুলনায় আসার কথা আছে এবং তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে। কি সেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তা জানার চেষ্টা করে সুজন।
লোকটি সুজনকে জানায় বিষয়টি এখন বলা যাবে না।আরমান ভাই আসলে তখনই জানা যাবে।সুজন আর নিজে থেকে জানার চেষ্টা করেনি। পরে সুজন আরও খোজ নিয়ে জানতে পারে নান্নু এলাকার আওয়ামী লীগ এর একজন নেতা ও ভদ্রলোক টাইপের লোক।ছোটখাটো সংসার।শান্তিপ্রিয় মানুষ।সুজন নান্নু সম্পর্কে নেগেটিভ কোন কিছু পায়নি।
সুজন আরমান ভাইকে জানিয়ে দেয় নান্নু ভাল স্বভাবের লোক।তার সম্পর্কে তেমন কোন নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। আরমান ভাই জানালো, আমি দুই এক দিনের ভিতর খুলনাতে আসছি।আপনার ওখানে উঠবো। সুজন একাকি সরকারি কোয়ার্টারে থাকতো। ফ্যামিলি থাকতো ঢাকায়।তাই থাকার কোন অসুবিধা ছিল না।
যথারীতি আরমান ভাই তার এক বন্ধু বিল্লুকে সাথে নিয়ে চলে আসলো খুলনায় সুজনের বাসায়। সুজন নিজে থেকে আরমান ভাইকে কোন কিছুই জিজ্ঞাসা করে নাই তাদের আসার হেতু সম্পর্কে।
রাতের দিকে সুজন আরমান ভাই ও বিল্লুকে নান্নুর সাথে যোগাযোগ করে দেয়। তারা গোপনে কি আলাপ আলোচনা করলো তা সুজন জানেনা।
একদিন নিজে থেকেই আরমান ভাই সুজনকে জানালো তার কাছে একটি ইউরনিয়ামের সিল্ড প্যাকেট আছে। তিনি এটা বিক্রি করতে চান। নান্নুর কাছে একজন বায়ার আছে সেই বায়ার নাকি তা কিনতে চেয়েছে। দামদর চলছে। সুজনকে আরমান ভাই বললো,তিনি এটা ৪০০ শত কোটি টাকা হলে ছেড়ে দিবেন এবং সুজনকেও একটি লভ্যাংশ দেয়ার আস্বাস দেন।
এভাবেই দিন গড়িয়ে সপ্তাহ চলে যায়,সপ্তাহ গড়িয়ে মাস চলে যায়, মাস গড়িয়ে বছর পেরিয়ে যায়। বেচাকেনায় জটিলতা দেখা দেয়। একসময় বিক্রির সব কিছুই ঠিক হয়ে যায়। নান্নু বায়ারের কাছে ১০০০ কোটি টাকায় বিক্রির দফারফা করে ফেলে। নান্নু আরমানের কাছে প্রকৃত বিক্রি দাম গোপন করে এবং জানায় ৫০০ কোটিতে বিক্রি হবে। তার ভিতর ২০০ কোটি টাকা নান্নুকে দিতে হবে। আরমান ভাই পাবে ৩০০ কোটি টাকা।
আরমান ভাই একটু চালাক প্রকৃতির লোক ছিলেন, তিনি গোপনে বিক্রি কোথায় হবে কত টাকায় হবে এসব খোজ নিয়ে আসল তথ্য জানতে পারেন। নান্নু সত্য গোপন করে একাই ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টা আরমান ভাইয়ের ভাল লাগেনি। এই নিয়ে নান্নুর সাথে সাময়িক দন্দ্ব দেখা দেয়। পরে বিষয়টি দফারফা হয়ে যায় দুজনার ভিতর। এদিকে নান্নু স্বপ্ন দেখতে থাকে শিরোমণিতে এজাক্স জুট মিল কিনে নেয়ার। পরবর্তীতে সেই প্যাকেট আর বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কারণ এখন সন্দেহ জেগেছে প্যাকেটে ইউরেনিয়াম না অন্য কিছু আছে আগে সেটা নিশ্চিত হতে হবে।প্যাকেটের গায়ে ইউরেনিয়াম লিখা থাকলেও তা নিশ্চিত হতে চায়। এছাড়াও এটা প্রমান করার জন্য মুল প্যাকেটের সাথে ৫ টি ছোট ছোট শিশিতে সিলড নমুনা থাকে এবং মুল প্যাকেট খোলার জন্য একটি কোড ও গাইড বুক থাকে। এসব আবার আরমান ভাইয়ের কাছে নেই। এখন আগে এসব ম্যানেজ করতে হবে তারপর বায়ার কিনবে।
বেচাকেনায় ভাটা পড়লো। আরমান ভাই একজন ভাল আধ্যাত্মিক ব্যাক্তির কাছে গিয়ে জানতে চায় আসলে প্যাকেটের ভিতর কি আছে। আধ্যাত্মিক ব্যাক্তি অনেক কায়দা কানুন মেনে সাধন করে জানতে পারে প্যাকেটের ভিতর ইউরেনিয়ামই আছে তা নিশ্চিত এবং তিনি বলে দেন এটা ভাল দামে বিক্রি হবে। আরমান ভাই তো মহাখুশি। যাহোক, যে করেই হোন নমুনা শিশি ও কোড এবং ক্যাটালগ কালেকশন করতে হবে। দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পরেও আরমান ভাই এসব কালেকশন করতে ব্যর্থ হন। মালের জায়গায় মাল পড়ে থাকে বিক্রি আর হয়না।
অবশেষে অনেক পরে,আরমান ভাই নিজের গ্রামের বাড়ীতে ফিরে গিয়ে অধৈর্য হয়ে মালের প্যাকেট খুলে দেখে তাতে ইউরেনিয়াম নেই,তদস্থলে মিহি বালি দিয়ে ভরানো আছে। এটাও প্রতারক চক্রের একটি কায়দা কানুন। হয়তো আরমান ভাইয়ের ছোট ভাই লোভের বশবর্তী হয়ে এটা কোন প্রতারকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। মাঝখানে প্রতারকেরই লাভ হলো এবং লোভের পরাজয় ঘটলো। আশা ভেংগে আশাহত হলো আরমান ভাই।
আরমান ভাই আবার ম্যাগনেটিক পিলারের দিকে ঝুকে পড়লো। সুজন কিছুতেই এর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস না করলে।আরমান ভাই বললেন,তার ছোট ভাই একটি ব্রিটিশ বটগাছ প্রতীকের এবং রাণীর প্রতীকের একটি কয়েন পেয়েছিল যার ভিতর চৌম্বকীয় পাওয়ার ছিল। তার ছোট ভাই বামপন্থী এক শীর্ষ নেতার কাছে মাত্র ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল এবং এরপরে ছোট ভাই পোস্টাল বিভাগের সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যাবস্যা বানিজ্য করতে শুরু করেছে। আরমান ভাইয়ের বক্তব্য যে,তার ছোট ভাই মালের প্রকৃত দাম জানতো না,তাই বামপন্থী শীর্ষ নেতার প্রস্তাবে মাত্র ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। আসলে ওটার প্রকৃত মুল্য ছিল প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা।
সেই বামপন্থী শীর্ষ নেতার সাথে আরমান ভাইয়ের ছোট ভাই একসাথে রাজনীতি করতো,তাই নেতাকে বিশ্বাস করে নেতার দেয়া টাকাতেই ছোট ভাই সন্তষ্ট ছিল। আসলেই এজগতে এসবের অস্তিত্ব আছে কিনা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। তবে অনেককেই স্বপ্ন দেখতে দেখেছে সুজন,স্বপ্ন ভেংগে যেতেও দেখেছে সুজন।অনেককেই ভিটামাটি বিক্রি করে আলেয়ার পিছনে দৌড়াতে গিয়ে হচৎ খেতেও দেখেছে সুজন,দেখেছে পথের ভিখারি হতে তবুও কেউ আলেয়ার আলোর দেখা পায়নি।
এসব ঘটনায় পুলিশও পিছিয়ে নেই। তারাও ফাদ পেতে জাল পেতে প্রতারিত ব্যাক্তিকে সামারী করে টাকা রোজগারও করতে দেখেছে সুজন। একবার সুজনের এক ঘনিষ্ঠ পরিচিত জন খাগড়াছড়িতে গেছে একই উদ্দেশ্যে, কিন্তু সুজনকে তা জানাই নি।কারন সুজন তাকে বাধা দিবে এসব কাজে যেতে।কিন্তু জীবন তাও গেল খাগড়াছড়িতে গিয়ে পড়লো এক বিপদে।
(চলবে)
লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।